চিকিৎসা শাস্ত্র যুগে যুগে

লেখক: ড. অশোককুমার বাগচী

প্রকাশক: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্যদ

বাংলা ভাষার প্রকাশনার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ বিগত কয়েক বছরে নিজেদের মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র, রামেন্দ্রসুন্দর, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র প্রমুখের সান্তর প্রয়াসে জ্ঞানবিজ্ঞানের নানা গভীর জটিল তত্ত্ব আলোচনার যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্যে বাংলাভাষার উত্তরাধিকার, সাম্প্রতিক সেই ধারাটি ক্ষীয়মাণ। এই সেদিন পর্যন্ত বাংলায় গুরুগম্ভীর বিষয়ের সরস প্রাঞ্জল আলোচনা আমাদের নজর কেড়েছে। সম্প্রতি, কয়েকটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রমের কথা ছেড়ে দিলে, তন্নিষ্ঠ শাস্ত্র আলোচনা বাংলায় দুর্লক্ষ্য। এই পরিবেশে, সরকারি আনুকূল্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্যদ জ্ঞানবিজ্ঞানের বহুধাবিস্তৃত শাখার বই বাংলায় প্রকাশ করার দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রথম দিকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের টেক্সট বই রচনা ও অন্যভাষায় রচিত বিশিষ্ট ও প্রধান কয়েকটি বই-এর ভাষান্তরের বৃত্তেই পর্যদ নিজেদের কর্মসূচিকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম বহির্ভূত পুস্তক প্রকাশনার ক্ষেত্রেও পর্ষদ উদ্যোগী হন। যার ফলে আমরা পরিভাষা সংক্রান্ত বই, নানা অভিধান এবং সাধারণ পাঠকদের জন্য আরও অনেক বই আমাদের মাতৃভাষার নাগালের মধ্যে পেয়ে যাই। আলোচ্য গ্রন্থটি এই কর্মসূচির অন্তর্গত।

সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে রচিত চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাস বিষয়ক বই ‘চিকিৎসা শাস্ত্র যুগে যুগে’ মুখবন্ধে লেখক আমাদের আশ্বস্ত করেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই পুস্তকটির আকার সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, কেননা কৌতূহলী পাঠকবর্গের মনে ভীতি উদ্রেককারী বৃহদাকৃতি পুস্তক প্রণয়নে আমার একান্ত অনীহা। লেখক অশোককুমার বাগচী নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান; এ ছাড়াও দেশীবিদেশী নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মসূত্রে যুক্ত। তাঁর নামের পাশে অসংখ্য ডিগ্রির বহর দেখে আমাদের রোমাঞ্চ হয়, আবার উদ্ধৃত আশ্বাসবাক্যটির প্রশ্রয়ে অনেক প্রাপ্তির আশা নিয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত বইটি পাঠে উদ্যোগী হই।

ভূমিকাতেই আমাদের হোঁচট খেতে হয়। কেননা, লেখক জানান আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগেই নাকি বানররূপী প্রাগৈতিহাসিক মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল। আমরা জানি, বানর-মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম পিথেকানথ্রপুস। সেই কয়েক লক্ষ বছর আগেকার কথা। এ ছাড়াও মনুষ্যেতর প্রাণী হোমিনয়েড থেকে হোমিনিডি গোত্রের মনুষ্য-প্রায় প্রাণীর উদ্ভব, আধুনিক বৈজ্ঞানিক অনুমান অনুযায়ী, হয়েছিল মিয়োসিন যুগের আদিপর্বে, অর্থাৎ আনুমানিক আড়াই কোটি বছর আগে। মুখবন্ধ ভূমিকা, পরিশিষ্ট ও তথ্যের সূত্র ছাড়া বইটির বিষয় পরিচিতিতে সাঁয়ত্রিশটি অন্তর্ভাগ আছে। প্রাচীন ভারতীয়, চৈনিক, শ্যামদেশীয়, মিশরীয়, আরবী, য়ুনানী চিকিৎসাশাস্ত্র থেকে শুরু করে উনিশ শতকের চিকিৎসাশাস্ত্র, মনোবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞানের অবদান, বিশ শতকের চিকিৎসাশাস্ত্র, আধুনিক শল্য চিকিৎসা ইত্যাদি নানা বিষয়ের অবতারণা আছে।

বইটি পাঠান্তে আমাদের মনে এরূপ সন্দেহ জাগে, অসংখ্য ডিগ্রির অলঙ্কারে ভূষিত পণ্ডিত আমাদের মতো সাধারণ মানুষজনের প্রতি নিছক করুণাবশত মাতৃভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস রচনায় ব্রতী হন, অন্যতর কোনো দায়বদ্ধতার তাগিদে নয়। ফলত এই পুস্তক প্রণয়নে চিন্তাসমৃদ্ধ কোনো সামগ্রিক পরিকল্পনার ছাপ নেই। নানা বিষয়ের আলোচনা আছে বিক্ষিপ্তভাবে, কিন্তু কোন চিকিৎসাশাস্ত্রের মূলতত্ত্ব কী, তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কতটুকু সে সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। আমরা ইতস্তত অনেক তথ্যের সাক্ষাৎ পাই, যদিচ, এগুলি বিশ্লেষণের কোনো দায় লেখক নেন নি, এমন অনেক চমকপ্রদ তথ্যের সমাবেশ ঘটেছে, যার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে স্বতই প্রশ্ন ওঠে। কোন চিকিৎসক জাতিস্মর ছিলেন (লেখক জাতিস্মরে বিশ্বাসী?), শৈশবে সমগ্র কোরান আবৃত্তি করতে পারতেন-এ রকমের উক্তি অজস্র। নানা ভাষায় রচিত হরেক বই-এর মূল নাম দেখে লেখকের ভাষাজ্ঞানের বহরে আমরা, চমৎকৃত হলেও, এগুলির অন্যতর তাৎপর্য আমাদের কাছে অব্যাখ্যাত রয়ে যায়। এমন কি বইগুলিতে কোনো নূতন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আছে কিনা সে বিষয়েও লেখক কিছুই লেখেন না।

ইতিহাস নিছক তথ্যের সমাহার নয়ই, বিজ্ঞানের ইতিহাসও নয়। ইতিহাসবোথ তথা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যতিরেকে ভূরি ভূরি তথ্য সংগ্রহের বাতিক, সম্পর্কে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক উক্তিটি আমাদের বিচারে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। বিজ্ঞানের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নীল্ডহ্যাম, গর্ডন চাইল্ড এক ধরনের আদর্শ স্থাপন করেছেন।

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion