সেকালের মেয়েদের অলঙ্কার
সেকালে মেয়েরা বাহুতে যেসব অলঙ্কার পরিধান করিত তাহার পরিচয় সাহিত্যে পাওয়া যায়। বাহুর সকল প্রকার ভূষণকে বলে অঙ্গদ। অঙ্গদ হয় নানাপ্রকার—(১) তাড়, (২) কেয়ুর, (৩) বাজু বা ৰাজুবন্দ, (৪) মাদুলি।
বাহুর উপরিভাগে দুই ইঞ্চি পরিমিত একজোড়া সরল সোনার পাতযুক্ত গহনাকে বলে তাড় বা তাগা। এখন ইহার বদলে অনন্ত, বাঁক প্রভৃতি অন্যবিধ গহনা পরিয়া থাকে। কবি নারায়ণদেব এই গহনাটির খুব ভাল বর্ণনা করিয়াছেন। বেহুলার সাজসজ্জা নামক অংশে দেখি বেহুলা বাহুতে পরিয়াছে—
“সুবর্ণের চাইর-তাড়”
যদি আমরা জনকরাজের অন্তঃপুরে উঁকি মারি তাহা হইলে দেখি আসন্ন বিবাহের আনন্দে উদ্ভাসিত সীতাকে ঘেরিয়া সখীদের বিপুল কলোচ্ছ্বাস, তাহারা সীতাকে সাজাইতে ব্যস্ত—
উপর হস্তেতে দিল তাড়ক ৷
—কৃত্তিবাসী রামায়ণ
উজানী নগরীতে বণিকবধূ রম্ভাবতীর রূপসী কন্যার রূপ আভরণ বিনা ঝলসিয়া উঠিত। অনেক বুঝাইয়া মাতা তাহাকে আভরণ পরাইল—
করে শঙ্খ শোভে তাড়বালা।
—মুকুন্দরাম চণ্ডীমঙ্গল
পুরুষরাও বাহুতে তাড় পরিত।
বিবাহের সময় লখিন্দর হস্তেতে তাড় পরিল : “হস্তেতে বলয়া তাড়, গলে গজমতি হার” (১৭৯ পৃঃ, বিজয়গুপ্ত, মনসামঙ্গল )।
যুদ্ধে যাইবার সময় রাবণভ্রাতা কুম্ভকর্ণের হাতে তোড়-তাড় ঝক্ঝক্ করিতে লাগিল—
কত শত যতনে পরায় তোড় তাড়
—কৃত্তিবাসী রামায়ণ
কেয়ুর—বাহুর উপরিভাগে সুন্দর কারুকার্যখচিত এক প্রকার সোনার পাতযুক্ত গহনাকে বলে কেয়ুর। যখন আর্য্যরা বাংলায় এবং আসামে বসতি স্থাপন করে, তখন এদেশে কেয়ূরের প্রচলন ছিল, অনেক সংস্কৃত লেখার মধ্যে তাহার নির্দেশ পাওয়া যায় ৷
দেবী রুক্মিণীর স্বয়ংবর হইবে, সখীরা তাহাকে নানা অলঙ্কারে সজ্জিত করিয়াছে—
বাজুবন্দ উপরে সাজে বিচিত্র কেয়ুর।
সুললিত বাহ তাহে বচন প্রচুর।
২৭০ পৃঃ, শ্ৰীকৃষ্ণবিজয় — মালাধর বসু
রাম সীতা ও লক্ষ্মণকে লইয়া যখন বনগমন করিতেছিলেন তখন পথে অত্রিমুনির আশ্রমে উপস্থিত হইলেন। অত্রিমুনির স্ত্রী সীতাকে বিশ্রাম করিতে দিবার অবকাশে অলঙ্কার দিয়া সাজাইতে লাগিলেন—
ব্রাহ্মণী সীতার ভালে দিলেন সিন্দুর
কণ্ঠে মণিময় হার বাহুতে কেয়ুর !
১৯৩১ পৃঃ, কৃত্তিবাসী রামায়ণ
খুলনার স্বামী ধনপতি সদাগর বিদেশ হইতে ফিরিয়া আসিলে খুল্লনা স্বামীকে তুষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে সজ্জিত
হইয়াছে—
বাহুযুগে আরোপিল কনক কেয়ুর।
—মুকুন্দরাম চণ্ডীমঙ্গল
পুরুষরাও কেয়ুর পরিত, তাহার অনেক নমুনা পাওয়া যায়।
শার্দ্দুল চররূপে আসিয়া লঙ্কেশ্বর রাবণকে যুদ্ধের সংবাদ দিল যে, একা রাম খর, দুষণ ও ত্রিসিরা রাক্ষসকে বধ করিয়াছে, অতএব রাজা যেন বুঝিয়া কার্য্য করেন। রাবণ অন্তরে ভয় পাইলেও চরকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য বহুমূল্য অলঙ্কার দিলেন—
বিচিত্ৰ নিৰ্ম্মাণ দিল হার ও কেয়ুর!
বাজু বা বাজুবন্দ—বাহুর সহিত একটি দড়ি দিয়া বাঁধা আছে, এমন একপ্রকার কারুকার্যখচিত পুরু সোনার পাতযুক্ত গহনাকে বলে বাজু বা বাজুবন্দ।
শিব শাঁখারীর বেশে ভগবতীকে শাঁখা পরাইতে গেলেন। তখন ভগবতী বিশেষভাবে সজ্জিত হইয়া শাঁখা পরিতে চলিলেন—
নানাছন্দ বাজুবন্দ হেমঝাঁপা ঝুরি।
পরিয়া পাইল শোভা পরম সুন্দরী।
—রামেশ্বরের শিবায়ণ
সুমেরু পর্বতের কন্যা সম্ভবা পাতালে তাহার সখী হেমার সহিত বাস করিত। সীতা অন্বেষণার্থী হনুমান অন্য বানরদের লইয়া তাহার কাছে আসিয়াছিল। তাহারা তাহার রূপ দেখিয়া বিস্মিত হইল—তাহার অঙ্গে রহিয়াছে—
ছড়া ছড়া বাজুবন্দ অঙ্গের উপর।
—কৃত্তিবাসী রামায়ণ
বাজুর ন্যায় একপ্রকার গহনা কিন্তু ইহাতে বাজুর অপেক্ষা বেশী কারুকার্য্য আছে এবং ইহা বাজু অপেক্ষা বেশী পাতলা, ইহাকে তাবিজ বা কবচ বলা হয়। বর্তমানে বনেদী ঘরে বা জমিদারবাটীর গৃহিণীরা তাবিজ ব্যবহার করেন। আর ঠাকুরকে মানত করিয়া ঠাকুরের নির্ম্মাল্য গহনার মধ্য দিয়া কবচরূপে বৰ্ত্তমানে অঙ্গে ধারণ করা হয়। পূর্ব্বে উহা গহনা হিসাবে ব্যবহৃত হইলেও এখন গহনারূপে ব্যবহৃত হয় না। পূৰ্ব্বে মাদুলি বাজুর ন্যায় বাহুর উপরিভাগে গহনারূপে ব্যবহৃত হইত। এখন মাদুলি বলিতে আমরা বুঝি যে ঠাকুরের নিৰ্ম্মাল্য রূপা, তামা বা সোনার মোড়কের মধ্যে পুরিয়া গলায় বা বাহুতে ধারণ করা হয় মনের বা শরীরের শান্তির জন্য সেই মোড়ককে। কখনও কখনও কোন কিছু জিনিষ পাইবার জন্য ( পুত্রলাভ, ধনলাভ
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment