সম্প্রতি সোভিয়েট রাশিয়া ভ্রমণ উপলক্ষে সেখানকার সাহিত্যিকমণ্ডলীর সঙ্গে পরিচয় লাভের সুযোগ পেয়েছিলাম। এর আরেকটি কারণ এই যে, সোভিয়েট রাশিয়ায় আমরা ছিলাম মস্কো লেখক সংঘের অতিথি ৷

মস্কো, লেনিনগ্রাদ, তিব্‌লিসি, তাসখণ্ড সর্বত্র লেখক, কবি, নাট্যকার সংঘ আমাদের অভ্যর্থনা করেছেন। কেবল ভাবের আদানপ্রদান নয়, ভারতের প্রাচীন ও আধুনিক সংস্কৃতির সঙ্গে আদানপ্রদানের জন্যে তাঁদের আগ্রহ দেখেছি। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রেণীসংঘর্ষ বর্জিত যে নুতন সভ্যতা গড়ে উঠছে, এই সমস্ত লেখক তাকে লালন করবার ভার নিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে আলাপ করে এদের মনের প্রসারতা দেখে মুগ্ধ হলাম। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এঁরা দেশবিদেশের গণ্ডি অতিক্রম করে সর্বমানবের কল্পনার কুহকমুক্ত জ্ঞানের সাধনাকে গ্রহণ করেছেন। এঁরা অনেকেই জানেন যে, ভারতের প্রাচীন সংস্কৃত ভাষার আবরণে অতীতের মহার্ঘ চিত্তাসম্পদ রয়েছে—মহাভারত, রামায়ণ, কালিদাস এঁরা অনুবাদ করেছেন ও করছেন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের চল্‌তি ভাষা, আধুনিক সাহিত্য সম্পর্কে এঁদের আগ্রহ ও ঔৎসুক্য খুব বেশি। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, প্রেমচন্দ, কিষাণ চন্দর প্রভৃতির রচনা রুশ ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ভবানী ভট্টাচার্যের ইংরেজি ভাষায় লেখা বই ‘সো মেনি হাঙ্গারস্’ রুশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং প্রায় লক্ষাধিক সংখ্যায় বিক্রিত হয়েছে। বড় বড় লাইব্রেরিতে, এমন কি শ্রমিকদের সংস্কৃতিভবনের পাঠাগারে ভবানীবাবুর বই দেখেছি। মুল্‌ক্‌রাজ আনন্দের 'কুলি' উপন্যাসখানির অনুবাদও দেখেছি। ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি সোভিয়েট জনগণের অনুরাগ ও আগ্রহের বহু পরিচয় পেয়েছি এবং সোভিযেটের সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক অগ্রগতি দেখে আনন্দিত হয়েছি ৷

সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাবের আদানপ্রদানের এই আগ্রহ সম্পর্কে আমাদের ভারতীয় দূতাবাস একেবারেই উদাসীন। অবশ্য ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রদূত ডাঃ রাধাকৃষ্ণণ মস্কোর বিদ্বজ্জনমণ্ডলীর নিকট সমাদৃত। তিন সোভিয়েট মন্ত্রিমণ্ডলী ও পণ্ডিতগণের সঙ্গে মেলামেশা করেন কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতীয় দুতাবাসের অন্যান্য কর্মচারীরা ভারতের জাতীয় সাহিত্য সম্পর্কে গভীরভাবেই অজ্ঞ এবং স্থানীয় লেখকেরা সেই কারণেই বোধ হয় এঁদের কাছে বিশেষ কোন সাহায্য পান না। পক্ষান্তরে আমেরিকা ও বৃটেনের দূতাবাসে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়। মস্কো লেখক সংঘের প্রতিনিধিরা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খুবই শ্রদ্ধাশীল এবং বললেন, যদি তোমাদের প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ কিংবা অন্যান্য বেসরকারী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আধুনিক বাংলা রচনা ইংরেজি অনুবাদসহ আমাদের কাছে পাঠান, তাহলে এখানে প্রকাশের ব্যবস্থা আমরা নিশ্চয়ই করব।

এইবার সাহিত্যিক ও কবিদের সংঘের কথা বলি। এখানে সংঘে স্থান পেতে হলে তার পূর্বে একটা প্রস্তুতি আবশ্যক। তরুণ-তরুণীদের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক রূপে তৈরি করে তুলবার জন্য এঁরা ‘গর্কি লিটারারি ইন্‌স্টিট্যুট' প্রতিষ্ঠা করেছেন—কতক সরকারী সাহায্যে এবং লেখক ইউনিয়ন দ্বারা এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। এখানে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাহিত্যরচনা ছাড়াও ভাষাতত্ত্ব, বিভিন্ন দেশের সাহিত্যের ইতিহাস ও মার্কসীয় দর্শন প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা এখানে আমন্ত্রিত হয়ে ছাত্র ও অধ্যাপকদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ছিলাম। মঙ্গোলিয়া থেকে সোভিয়েটের প্রত্যেক রিপাবলিকের ছাত্রছাত্রী এখানে দেখলাম। এছাড়া বুলগেরিয়া, রুমানিয়া থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে আছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭০। এখানে পাঁচ বছর ধরে অধ্যয়ন ও শিক্ষানবিসী করতে হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা বিনা ভাড়ায় রেলে, ট্রামে ও বাসে যাতায়াত করে। গুণ অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৮০০ রুব্‌ল্‌ মাসিক ভাতা পায়। বাপমায়ের উপর নির্ভরশীল ছাত্রসংখ্যা অতি অল্প। সরকারী রেস্তোরাঁয় এরা সস্তা দামে খাবার পায়। ছাত্রদের আগ্রহে আমরা আত্মপরিচয় ও দেশের পরিচয় দিয়ে কিছু কিছু বললাম। মঙ্গোল, সাইবেরিয়ান, আজারবাইজান, কাজাক, রুশ, উক্রেন প্রভৃতি নানা দেশের ছাত্রছাত্রীরা ভারতের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের প্রশ্ন করল। এদের প্রশ্নের ভঙ্গি থেকে বুঝলাম এখানে পল্লব-গ্রাহিতার স্থান নেই। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিকেরা এখানে এসে নিয়মিতভাবে অধ্যাপনা করে থাকেন। বিদেশী লেখকদেরও বক্তৃতার ব্যবস্থা আছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা পাবার পর ছেলেমেয়েরা লেখক ও সাংবাদিক সংঘের সভ্য হয় এবং তাদের

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion