এটাই দর্শনের প্রথম এবং প্রধান প্রশ্ন। কি ভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব? সংজ্ঞাটি মানুষের নিজের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষের মধ্যে। কিন্তু এটা কি ঠিক? আমরা প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষের মধ্যে যা আবিষ্কার করতে পারি প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষ ঠিক কি সেটাই। কিন্তু আমরা প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষ কী সে বিষয়ে উৎসাহী নই। কারণ তা শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষ কোনো বিশেষ মুহূর্তে কেমন সেটাই বোঝাতে পারে। যদি আমরা বিষয়টিকে এইভাবে বিবেচনা করি তাহলে আমরা দেখব যে ‘মানুষ কী’ এই প্রশ্নের মাধ্যমে আমরা আসলে বোঝাতে চাই ‘মানুষ কী হয়ে উঠতে পারে?’, অর্থাৎ মানুষের পক্ষে নিজের ভবিতব্যকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হোক বা না-ই হোক, মানুষ কিন্তু ‘নিজেকে গড়ে তুলতে পারে’, নিজের জন্য একটি জীবন সৃষ্টি করতে পারে। সেই কারণে আমরা বলি, মানুষ হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া, এবং সংক্ষেপে কর্ম সমষ্টির প্রক্রিয়া। যখন আমরা বিষয়টিকে এইভাবে বিবেচনা করি তখন ‘মানুষ কী’ প্রশ্নটি আর কোনো ‘নৈর্ব্যক্তিক বা বিমূর্ত প্রশ্ন’ থাকে না। এই প্রশ্নের উৎপত্তি হয় আমরা নিজেদের সম্পর্কে এবং অন্যদের সম্পর্কে কি ভাবি সেখান থেকে। আমরা কি ভাবি ও কি দেখি তার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে। আমরা জানতে চাই আমরা কী ও আমরা কী হয়ে উঠতে পারি। এটা যদি সত্য হয় তাহলে কোন্ সীমার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা ‘নিজেদের গড়ে তুলি, নিজেদের জীবনকে সৃষ্টি করি, নিজেদের ভবিতব্যকে নির্মাণ করি’। আমাদের ‘দৈনন্দিন’ জীবন ও বর্তমানের নির্দিষ্ট অবস্থার ভিতরে থেকে আমরা জানতে চাই এই ‘বর্তমান’-কে এবং তা অন্য কোনো জীবন ও মানুষ বিষয়ে নয়।

এই প্রশ্নটির উৎপত্তি হয় এবং প্রশ্নটির বিষয়বস্তু সংগৃহীত হয় মানুষের জীবন সম্পর্কিত বিশেষ অথবা নির্ধারিত প্যাটার্নের গুণাগুণ বিচার করা থেকে। এগুলির ভিতরে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘ধর্মীয়’ প্যাটার্ন এবং একটি বিশেষ ধর্মীয় প্যাটার্ন—ক্যাথলিসিজম্। বাস্তবিকভাবে আমরা যখন নিজেদের জিজ্ঞাসা করি, ‘মানুষ কী এবং নিজেকে সৃষ্টি করার জন্য ও জীবনযাপনের জন্য মানুষের ইচ্ছা ও সুনির্দিষ্ট কর্ম কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?’ তখন আমরা আসলে বোঝাতে চাই, ‘ক্যাথলিসিজম্ কি মানুষ ও জীবন বিষয়ক একটি সঠিক ধারণা?’ একজন ক্যাথলিক হিসেবে, ক্যাথলিসিজম্কে জীবনযাপনের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করে আমরা ঠিক করছি না, ভুল করছি? সকলেরই একটা অস্পষ্ট অনুভূতি আছে যে ক্যাথলিসিজম্কে জীবনযাপনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে ভুল। কারণ কোনো ব্যক্তিই ক্যাথলিসিজম্কে আগ্রহের সঙ্গে জীবনযাপনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে না, নিজেকে ক্যাথলিক হিসেবে ঘোষণা করা সত্ত্বেও। একজন দৃঢ়চেতা ক্যাথলিক যদি তার জীবনের প্রতি পদক্ষেপে ক্যাথলিক নীতিগুলি প্রয়োগ করেন তবে তিনি একজন অস্বাভাবিক বা অদ্ভুত জীব হিসেবেই পরিগণিত হবেন এবং এই বিষয়ে চিন্তা করলে এটাই হবে ক্যাথলিসিজমের নিজের বিরুদ্ধেই সবথেকে শক্তিশালী ও অখণ্ডনীয় সমালোচনা।

ক্যাথলিকরা উত্তর দেবেন এই বলে যে, কোনো ধারণাকেই অনমনীয়ভাবে অনুসরণ করা হয় না, সুতরাং তারা সঠিক। কিন্তু এ থেকে কেবলমাত্র এটাই প্রমাণিত হয় যে, চিন্তা ও কর্মের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে কখনই বাস্তবে কেবলমাত্র এমন একটি নীতির অস্তিত্ব ছিল না যা সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা যায়। এটা ক্যাথলিসিজমের পক্ষে কোনো যুক্তিই নয়। যদিও এই ধরনের লক্ষ্যে চিন্তা ও কর্মকে বহু শতাব্দী ধরে সংগঠিত করা হয়ে আসছে—যা কিছু অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে এখনও ঘটেনি; একই লক্ষ্যে সব কিছু বিন্যস্ত করা, পদ্ধতির চেতনার অভিন্নতা, ধারাবাহিকতা এবং কেন্দ্রীভবনের একতা। সবকিছু সত্ত্বেও, ‘দার্শনিক’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অন্যদের নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ক্যাথলিসিজমের ব্যর্থতা হচ্ছে যে, ক্যাথলিসিজম মানুষের সমস্ত পাপের উৎস সন্ধান করে মানুষের নিজের ভিতর, অর্থাৎ ক্যাথলিসিজম্ মানুষকে কল্পনা করে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত ও সীমাবদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে। এটা বলা যায় যে, এখন পর্যন্ত সমস্ত

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion