রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ছোট্ট রুবাইয়াৎ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে মা তার কিভাবে ম্যাচবক্স থেকে একটা কাঠি বের করে সেটা বক্সটার একপাশে ঘষে দিতেই কাঠিটার মাথায় আগুন ধরে গেল। সে আগুন আবার চুলোর কাছে নিয়ে ধরতেই চুলোয় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।

রুবাইয়াৎ মাকে প্রশ্ন করলো—আগুন জ্বলে কেমন করে, আম্মু? মা বললো—যাও, রাফসান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো। যদি ভাইয়া বলতে না পারে তাহলে আমি বলবো, কেমন?

রুবাইয়াৎ দৌড়ে রাফসান ভাইয়ার কাছে গেল। দেখলো সে পড়াশুনায় ব্যস্ত, সামনের মাসেই তার বড়সড় একটা পরীক্ষা আছে কিনা। তবুও তাকে সাহস করে প্রশ্ন করে বসলো রুবাইয়াৎ—আচ্ছা ভাইয়া, আগুন জ্বলে কেমন করে?

পড়াশুনায় বাধা পড়ায় রাফসান প্রথমে বিরক্ত হলেও একটু পরে অবাক হলো এই ভেবে যে, তার কেজি পড়ুয়া ছোট্ট ভাইটার মাথায় এই প্রশ্নটা এলেও তার মাথায় আগে কেন আসেনি? ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া রাফসান ছোট ভাইয়ের সামনে লজ্জায় পড়ে যেতে হবে উত্তর দিতে না পারলে। তাড়াতাড়ি বললো—তুই এখন যা, পড়া শেষ করে বলবো কিভাবে আগুন জ্বলে। উত্তর পাবার আশ্বাস পেয়ে রুবাইয়াৎ চলে গেল টিভিতে কার্টুন দেখতে।

এই ফাঁকে রাফসান লেগে গেল প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে। কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বই আর ইন্টারনেট ঘেটে পেয়ে গেল মজার মজার সব তথ্য। চলো সবাই জেনে নেই উত্তরটা কি...

বিজ্ঞানের ভাষায় আগুন জ্বলে ওঠা এক ধরণের রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা খুব দ্রুত ঘটে আর ঘটার সাথে সাথে আলো ও তাপ ছড়ায়।

আগুন জ্বালাতে তিনটি জিনিস প্রয়োজন—জ্বালানি (fuel), অক্সিজেন (oxygen) আর তাপ (heat)। এই তিনটি জিনিসের কোন একটি অনুপস্থিত থাকলে আগুন জ্বালানো সম্ভব হয় না। প্রয়োজনীয় তাপের উপস্থিতিতে জ্বালানি যেমন: কাগজ, কাঠ, কেরোসিন বা গ্যাস এবং বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের মধ্যে খুব দ্রুত রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে আগুন জ্বলে ওঠে।

যা জ্বলে বা পোড়ে তাই হলো জ্বালানি। প্রায় সব জিনিস বা বস্তুই জ্বলতে বা পুড়তে পারে। আমাদের চারপাশের যত জিনিস বা বস্তু (matter) আছে সেগুলো অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য কণা দিয়ে গঠিত, যার নাম দেয়া হয়েছে পরমাণু (atom)। অধিকাংশ জ্বালানিতেই যেসব পরমাণু থাকে সেগুলো হলো কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং সামান্য পরিমাণে সালফার।

নানা ধরণের বন্ধন (bond) দিয়ে এই সকল পরমাণু একজন আরেকজনকে ধরে রাখে। তবে ধরে রাখার শক্তির মধ্যেও কিছু পার্থক্য আছে। যে সব জ্বালানিতে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেনসহ অন্যান্য পরমাণু একজন আরেকজনকে অনেক বেশি শক্তি দিয়ে ধরে রাখে সে সব জ্বালানি হয় কঠিন বস্তু বা পদার্থ (যেমন: কাঠ), যদি কম শক্তি দিয়ে ধরে রাখে তাহলে সেটা হলো তরল পদার্থ (যেমন: কেরোসিন) আর ধরে রাখার শক্তি যদি হয় খুব দুর্বল তাহলে সেটা বায়বীয় পদার্থ (যেমন: গ্যাস)।

কোনভাবে যদি এই বন্ধনগুলো ভেঙে পরমাণুগুলো ছুটোছুটি আর নাচতে শুরু করে তাহলে তাদের গতি বেড়ে যায়। আর পরমাণুগুলোর মধ্যে ছুটোছুটি শুরু হয় কখন জানো? তাপ পেলে। যত বেশি তাপ পাবে পরমাণুগুলো তাদের মধ্যকার বন্ধন ভেঙে তত বেশি গতিতে ছুটতে থাকবে। তাপ দিয়ে পরমাণুর মধ্যকার বন্ধন ভাংগার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পাইরোলাইসিস (pyrolysis)।

এখন বলো তো, আগুন জ্বালাতে গিয়ে জ্বালানির পরমাণুগুলোর ছুটোছুটি বাড়ানোর কি দরকার? কারন ছুটতে থাকা এসব পরমাণু এক ধরণের উত্তপ্ত গ্যাস (hot gas) তৈরি করে যা বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের সাথে মিশে যেতেই নীলচে রঙের আলো দেখা যায় আর এভাবেই আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনের শিখার নিচের দিকে নীলচে আলো দেখা গেলেও উপরের দিকে হলুদ ও কমলা রঙের আলো দেখা যায় কেন জানো? সদ্য বন্ধনমুক্ত ভাসতে থাকা উত্তপ্ত কার্বন পরমাণুগুলো হলুদ ও কমলা রঙের আলো ছড়ায় বলে।

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion