প্রায় ৮৪ বৎসর বয়সে সরলা রায় (মিসেস্ পি. কে. রায়) দেহত্যাগ করেছেন। যথাকালেই তাঁর জীবনাবসান হয়েছে, বলতে হবে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তিনি এখনো এতটা দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অধিষ্ঠিতা ছিলেন যে, তাঁর অনুপস্থিতি স্বীকার করে নেওয়া তাঁর দেশের ও সমাজের পক্ষে সহজ নয়। সম্ভবত, তাঁর উত্তরাধিকারিণীও আর একাল কেউ আসবেন না।

আমাদের অনেকেরই নিকট মিসেস্ পি. কে. রায় “গোখলে মেমোরিয়েল গার্লস্ স্কুলের” (এবং তার কলেজ শাখারও) প্রতিষ্ঠাত্রী ও প্রধান পরিচালিকা হিসাবেই সুপরিচিতা ছিলেন। হয়ত এজন্যই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের প্রথম নারী সদস্যা মনোনীত হন। বাংলা দেশের উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কন্যাদের শিক্ষাবিষয়ে সে স্কুলটির যে বিশেষ দান আছে তা সুপরিজ্ঞাত।

বিলেতী ধনিকশ্রেণীর উদারনৈতিক শিক্ষা ও জীবনাদর্শের সঙ্গে ভারতীয় জীবনের শিক্ষাদীক্ষা ও জীবনপদ্ধতির যথা সম্ভব একটা সুসঙ্গতি রক্ষা করে এ কালের বালিকা ও তরুণীদের শিক্ষাদান করাই সম্ভবত গোখ্‌লে স্কুলের বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যের পিছনে ছিল শ্রীযুক্তা পি. কে. রায়ের স্বকীয় চিন্তা ও আদর্শ, বিশেষ করে তাঁর সবল ব্যক্তিত্ব ও অক্লান্ত প্রয়াস। অবশ্য তিনিও তাঁর এ আদর্শ লাভ করেছিলেন ঊনিশ শতকের শেষার্ধের বাঙলার প্রগতিবাদী সুসম্পন্ন সমাজ থেকে। সুপ্রসিদ্ধ দাশপরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হাইকোর্টের তখনকার বিখ্যাত উকীল দূর্গামোহন দাশমহাশয় ছিলেন তাঁর পিতা ৷ শিক্ষিত সাধারণের নেতৃত্বে ও ব্যবহারজীব হিসাবে বোধহয় সমস্ত ভারতবর্ষে দাশ পরিবারের প্রতিষ্ঠা অতুলনীয়; মিসেস্ পি. কে. রায়, মিসেস্ ডি. এন. রায় ও লেডি জে. সি. বোস, এই তিন সহোদরার মধ্যে এখনো লেডি অবলা জীবিত আছেন। আর নারীশিক্ষায় ও সমাজ সেবায় এখনো তিনি ক্লান্তিহীন। সেদিনের ব্রাহ্মসমাজের ও সমস্ত প্রগতিকামীদের মধ্যেও দাশপরিবার বহু দিকেই ছিল অগ্রণী। এই প্রগতিকামীদের দৃষ্টিতে তখনকার বিলাতী ধনিকবর্গের উদারনৈতিক আদর্শ ও জীবনযাত্রাই নানা কারণে মহৎ ও অনুকরণীয় জিনিস ছিল; তখনো বিলাতী ধনিকের সেই উদারনৈতিক আদর্শে সত্যই এত ঘুণ ধরেনি। মিসেস রায় এই পরিবেশেই মানুষ হন। আর তাঁর উৎকৃষ্ট ঐতিহ্যকেই তিনি এ দেশের ক্ষেত্রে সুচারুহস্তে সঞ্জীবিত করতে যত্ন করেন। অবশ্য স্বদেশের ভূমি ও জীবনযাত্রার রূপও তিনি সে সঙ্গে স্মরণ রেখেছিলেন; আর ইতিমধ্যে পৃথিবীর গতিতে যে নতুন ভঙ্গিমা আস্‌ছিল সে সম্বন্ধেও তিনি সচেতন থাকতেন।

প্রায় ৬৫ বৎসর পূর্বে তখনকার তরুণ অধ্যাপক ডাক্তার পি. কে. রায়ের তরুণী পত্নীরূপে সরলা রায় ঢাকায় প্রথম মহিলাসমিতির স্থাপনে উদ্যোগী হন। তারপরে কলকাতায় এসে এদিকে তিনি সাহচর্য লাভ করলেন স্বর্গীয়া স্বর্ণকুমারী দেবী ও মিসেস্ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (জ্ঞানদাসুন্দরী দেবী) প্রমুখ বিদুষী মহিলাদের। আরও পরে অবশ্য তিনি বিদেশী নারীস্বাধীনতা আন্দোলনের, বিশেষ করে ব্রিটেনের “সাফ্রেজেট” আন্দোলনের নেত্রীদের সঙ্গেও সুপরিচিতা হন; এবং তাঁদের সমবেত প্রয়াসে শিক্ষার উদ্দেশ্যে এদেশ থেকে মেয়েদের বিলাতে প্রেরণের উপযোগী ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানও গঠন করেন।

এরূপ বহু উদ্যোগ ও প্রয়াসের মধ্য দিয়ে সরলা রায়ের বহুমুখী ও জাগ্ৰত কৰ্মজীবনেরই যে শুধু পরিচয় পাওয়া যায়, তা নয়,—তাঁরই গৃহে ও তাগিদে সেদিনে রবীন্দ্রনাথেরও নতুন সৃষ্টি উৎসারিত হয়েছে, তাও আমরা জানি। এ সবের মধ্যদিয়ে আরও বেশি করে পরিচয় পাওয়া যায় একটি অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বের, যার প্রভাব বাঙালী অ-বাঙালী অনেক মনস্বীকেই সানন্দে স্বীকার করতে হত। গত অর্ধ শতাব্দী ধরে “মিসেস্ পি. কে. রায়” নিজেই প্রায় বাংলা দেশের একটি বিশিষ্ট কীর্তি স্বরূপা হয়ে ছিলেন। তাঁর সমাপ্ত ও অসমাপ্ত কাজ দিয়েও তাই তাঁর ঠিক পরিমাপ হয় না ৷ এই বিশেষ সত্যটিই শ্রীযুক্তা সরোজিনী নাইডু প্রকাশ করেছেন তাঁর মৃত্যুর পরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে এই কথাটিতে—A great Indian matriarch has passed to her rest.

ম্যাটিয়ার্ক বা কুলকর্ত্রীর যুগ এ দেশের সমাজজীবনেও হয়ত আর ফিরে আসবে না! কিন্তু নারী-সাধারণের ব্যক্তিত্ব বিকাশের ও ব্যক্তিত্ববতী

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion