আইনস্টাইন-রবীন্দ্রনাথ সংলাপ একটি বহুল আলোচিত বিষয়। সে সম্পর্কে কৌতুহল থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। দুজনেই বিশ্ব ইতিহাস বিখ্যাত। একজন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আরেকজন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য প্রতিভার অন্যতম। বয়েসের দিক দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বড়। আইনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্ভবত কয়েকবার দেখা হয়েছিল। দুইবারের সাক্ষাৎ ও কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছিল। টেপ রেকর্ডে নয়। দোভাষী দিমিত্রি মারিয়ানফ যেভাবে লিখে রেখেছিলেন, সেইভাবেই তা প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৩০ সালের ১৪ জুলাই বার্লিনের উপকণ্ঠে কাপুথে। পরেরবার একই বৎসর ১৯ আগস্ট বার্লিনে। দুইবারই রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের অতিথি। আইনস্টাইন বলেছেন জার্মান ভাষায়, রবীন্দ্রনাথ ইংরেজিতে। প্রথমবারের সংলাপ, যা দোভাষী রেকর্ড করেছিলেন তাই-ই ছাপা হয়েছিল একই বৎসরে আগস্ট মাসে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়।

কথোপকথনটি ছাপা হলে আইনস্টাইন অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ তাঁর মতে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছিল। ওটা ছাপানো ঠিক হয়নি। ফরাসী সাহিত্যিক রোমারোলার কাছে লেখা চিঠিতে আইনস্টাইন লিখেছিলেন “ভাব বিনিময়ের অসুবিধার দরুণ টেগরের সঙ্গে আমার আলাপ আলোচনা মোটের উপর ব্যর্থ হয়েছিল, ওটা প্রকাশ করা সঠিক হয়নি।” দোভাষী ও আলোচনা রেকর্ডকারী সাংবাদিক মারিয়ানফও বলেছেন, “একজন পর্যবেক্ষকের কাছে মনে হবে, দুটি গ্রহ যেন গল্পসল্প করছে।” তিনি বলতে চেয়েছেন, দুইটি স্বতন্ত্র গ্রহ নিজ নিজ কক্ষে ঘুরছে, কেউ কাউকে বুঝতে পারছেন না।

বিজ্ঞানী ও কবি আলোচনা করেছেন দর্শন নিয়ে। দেখা গেল দুজনের দার্শনিক ভাবনা একেবারে বিপরীতমুখী। পাশ্চত্যের দর্শন সম্পর্কে আইনস্টাইনের ভালো পড়াশুনা ছিল। চীনের কনফুসিয়াস ছাড়া প্রাচ্যের কোনো দর্শনের প্রতি আগ্রহও ছিল না। কনফুসিয় দর্শন ইহলোকবাদী এবং মলত নীতিদর্শন বলেই এই ব্যাপারে আইনস্টাইনের কিছুটা তাঁর আগ্রহ ছিল। আধ্যাত্মিকতা ও প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসে আইনস্টাইনের কোন আগ্রহ ছিল না। তিনি কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতেন না, যদিও ইহুদী বংশে তাঁর জন্ম হয়েছিল। প্রচলিত ধর্মমতে যে ঈশ্বর, তাতেও তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না।

অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মূলত ভাববাদী। তাঁর দর্শন চিন্তায় উপনিষদ গভীরভাবে গেড়ে বসেছিল। তিনি আইনস্টাইনকে ভারতীয় দর্শন, বিশেষ করে উপনিষদ ভিত্তিক দর্শন বোঝাতে চেয়েছিলেন বলে মনে হয়। উপনিষদের প্রবল প্রভাব থাকা সত্ত্বেও কখনও কখনও রবীন্দ্রনাথকে বস্তুবাদের খুব কাছাকাছি মনে হয়েছে। বিজ্ঞানেও তাঁর আগ্রহ ছিল। শেষ বয়েসে তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা ‘বিশ্ব পরিচয়’ একটা আশ্চর্য ব্যাপার ছিল বৈকি। কিন্তু আইনস্টাইনের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি যেন বস্তুবাদ থেকে বহুদূরে এমনকি কিছুটা মায়াবাদের কাছাকাছি ছিলেন বলেও মনে হয়েছে। ফলে দর্শন আলোচনায় দুইজন দুইপ্রান্তে অবস্থান করেছেন।

তবে দ্বিতীয়বারের আলোচনার শেষাংশে তারা সঙ্গীত নিয়েও আলোচনা করেছিলেন। আইনস্টাইন নিজেও সঙ্গীত রসিক ছিলেন। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ তো সঙ্গীত রচিয়তা। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা বেশ জমে উঠেছিল।

দুই
এটা ভাবতে অবাক লাগে যে, রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনকে তার বিশ্ববিখ্যাত আবিষ্কার—আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করেননি। কেন? রবীন্দ্রনাথ হয়তো ভেবে থাকতে পারেন যে, বিষয়টি এত জটিল ও গাণিতিক যে সেটা তাঁর বোধগম্যতার বাইরে। বরং এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে, আইনস্টাইন বিব্রতবোধ করতে পারেন। অথবা এও হতে পারে যে, এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের কোন আগ্রহ ছিল না। রবীন্দ্রনাথের আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্বন্ধে কি কোন ধারণা ছিল? আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বলে যে একটা বিষয় আছে এবং আইনস্টাইন যে তাঁর প্রণেতা এটা কি রবীন্দ্রনাথ জানতেন? অবশ্যই জানতেন। যে বিজ্ঞানীর সঙ্গে তিনি দেখা করতে যাচ্ছেন তাঁর সম্বন্ধে এতটুকু ধারণা থাকবে না, এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। তাছাড়া আরও একটি তথ্য আমাদের কাছে আছে, যাতে অনুমান করা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনের আবিষ্কারের বিষয় সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞাত ছিলেন। সে সম্পর্কে একটু পরে আসছি।

অন্যদিকে আইনস্টাইন কি রবীন্দ্রনাথের কোন রচনা পাঠ করেছেন? না, তিনি রবীন্দ্রনাথের কোন লেখা পড়েননি। তখন

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion