প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক লিউসিপ্পাস (আনু, খ্রি. পূ. ৪৯০-৪৫০) কে অণুবাদের আবিষ্কর্তা হিসেবে স্বীকার করা হয়।[১] তিনি ছিলেন অণুবাদের প্রধান প্রবক্তা বিজ্ঞানী ডেমোক্রিটাস (খ্রি. পূ. ৪৬০-৩৭০) এর শিক্ষক। সকালে লিউসিপ্পাসের অনুবাদের চিন্তা ততটা তাত্ত্বিক হয়ে না ওঠলে ও তাঁর অনুমান ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে ডেমোক্রিটাসই তাঁর পারমাণবিক প্রতীতির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত তাঁর তত্ত্বানুযায়ী পৃথিবীর সমস্ত পদার্থ অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত।[২] তারা এত ক্ষুদ্র যে তাদের আর বিভাজন করা যায় না। এই সমস্ত কণা শাশ্বত, অপরিবর্তনযোগ্য ও ধ্বংসের অতীত। বিভিন্ন পদার্থের কণার আকার, আয়তন, অবস্থান ও অন্যান্য ধর্ম পৃথক পৃথক। এই সমস্ত কণা বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন পদার্থ গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন পদার্থের ধর্মও বিভিন্ন হয়। তাঁর এই পরমাণুবাদ সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত খুব একটা স্বীকৃতি লাভ করেনি। অথচ তারও আগে ভারতীয় ঋষি কণাদ পরমাণুবাদের কথা বলেছেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় বৈশেষিক দর্শনের আদি প্রবক্তা।[৩] বুদ্ধদেবের (খ্রি.পূ. ৫৬৩-৪৮৩) জন্মের আনুমানিক ৮০০ বছর পূর্বে (মতান্তরে ৪০০ বছর পূর্বে) তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। বৈশেষিক মতে কোনো বস্তুকে বিভক্ত করতে করতে শেষ পর্যন্ত যে সর্বসূক্ষ্ম অংশের কথা স্বীকার করতে হয় তারই নাম পরমাণু; বাস্তু সূত্র গঠিত, সূত্র অংশ গঠিত, অংশ তদংশ গঠিত, এইভাবে অবয়ব-অবয়ব বিভাগের যেখানে শেষ বা বিশ্রাম তারই নাম পরমাণু। পরমাণুর আর অবয়ব নেই, পরমাণুতেই ক্ষুদ্রতা বিশ্রান্তির বা বিভাগ নিবৃত্তির শেষ। জৈন দর্শনেও বৌদ্ধ দর্শনে পরমাণুবাদের উল্লেখ দেখা গেলেও ঠিক পদার্থের সূক্ষ্মতম কণিকা বিবেচনা করা হলেও তাতে পরমাণুবাদের কোনো উল্লেখ দেখা যায় না। সুতরাং কণাদের পরমাণুবাদ গ্রিক বিজ্ঞানীদের সমকালীন বা পূর্ববর্তী যাই হোক না কেন—ভারতীয় পরমাণুবাদ দ্বারা গ্রিক বিজ্ঞানীরা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন সে রকম কোন সূত্রের সন্ধান লাভ করা যায় না।[৪] যদি কণাদের পরমাণুবাদ ও ডেমোক্রিটাসের পরমাণুবাদের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া কণাদ বা ডেমোক্রিটাসের পরমাণুবাদ ডাল্টনের (১৭৬৬-১৮৪৪) পরমাণুবাদ উদ্ভাবনে সেভাবে কোনো প্রেরণা দিয়েছে সেকথাও বলা যাবে না।[৫]

মহর্ষি কণাদ ‘কণভূক’, ‘কণভক্ষ’, ‘উলুক’ প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিলেন।[৬] ন্যায়কুন্দলীতে উল্লেখ আছে যে, তিনি ক্ষেত্রে পড়ে থাকা শস্যকণা ভক্ষণ করে বা একপ্রকার ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবিকা ধারণ করতেন বলেই তাঁর নাম কনাদ নামকরণ করা হেেছ। কণাদ নামানুসারে এই দর্শন কনদ দর্শন এবং উলুক নাম অনুসরণ করে এই দর্শন উলুক্য দর্শন নামে পরিচিত। ‘বিশেষ’ পদার্থের উপর গুরুত্ব আরোপ করার এই দর্শনকে বৈশেষিক দর্শনও বলা হয়। কোনো কোনো মতে পদার্থের বিশেষত্ব বা বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে এই দর্শনের নাম বৈশেষিক দর্শন। সে যাই হোক, মহর্ষি কণাদের ‘বৈশেষিক সূত্র’ বৈশেষিক দর্শনের আকর গ্রন্থ। তবে এই গ্রন্থের প্রকৃত কোনো ভাষ্যগ্রন্থ পাওয়া যায় না। বিভিন্ন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে আত্রেয় বৈশেষিক সূত্রের একটি ভাষ্য রচনা করেছেন। রাবণও বৈশেষিক সূত্রের উপর একটি ভাষ্য রচনা করেছিলেন। আচার্য শঙ্কর এই ভাষ্যকে রাবণভাষ্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে প্রশ্বস্তপদাচার্যের ‘পদার্থধর্ম সংগ্রহ’ বৈশষিক সূত্রের সঠিক ভাষ্য না হলেও ভাষ্যস্থানীয় এবং ‘প্রশস্তপাদভাষ্য’ নামে পরিচিত। চন্দ্রানন্দের বৃত্তি, শঙ্কর মিশ্রের বৈশেষিক সূত্রে পিস্কার’ এবং ভট্টবাদীন্দ্রের ‘কণাদ সূত্রনিবন্ধ’ বৈশেষিক দর্শনের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ব্যোমশিবের ‘ব্যোমবতী’, উদয়নের ‘কিরণাবলী’ এবং শ্রীধরের ন্যায়কুন্দলী পদার্থধর্ম সংগ্রহের উপর উল্লেখযোগ্য টীকাগ্রন্থ। বৈল্লভাচার্যের ‘ন্যায়লীলাবতী’ এবং উদয়নের ‘লক্ষণাবলী’ বৈশেষিক দর্শনের উল্লেখযোগ্য স্বতন্ত্র গ্রন্থ।

মহর্ষি কণাদের পিতার নাম উলুক মুনি।[৭] এলাহবাদের অদূরে প্রভাসতীর্থে কণাদ জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকে কণাদ ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী। জ্ঞানলাভের জন্যে তাঁর প্রবল আকাক্সক্ষা দেখে পিতা তাঁকে বিখ্যাত পণ্ডিত সোম শর্মার টোলে ভর্তি করে দেন। সোম শর্মার কাছে তিনি দীর্ঘদিন নানা বিষয়ে

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion