“একটা ভাল ফিল্ম-স্টুডিয়ো তৈরি করা এমন কিছু কঠিন নয়। কিন্তু একটা ভাল ফিল্ম তৈরি করা খুবই কঠিন। বিষয় আর নির্মিতির অভাব ভাল স্টুডিয়ো আর ভাল যন্ত্রপাতি দিয়ে মেটানো যায় না। শিল্পের মানে শিল্পই। কোনো কিছুই শিল্পের বিকল্প নয়। রাজনীতি দিয়ে শিল্পের কাজ হয় না। নতুন যন্ত্রপাতি দিয়েও হয় না। রাজনীতি দিয়ে শিল্পের কাজ সারতে গেলে শুধু শ্লোগান-বানানো হয়। যন্ত্রপাতি দিয়ে শিল্পের কাজ সারতে গেলেও ভাল কিছু হয় না। মানবজমিনই, হচ্ছে আসল কথা।

‘(শিল্প) প্রতিভার বিকাশ অত সহজ কাজ নয়, দু-এক বছরে এ কাজ হয়, না, এর জন্যে ধৈর্য দরকার। ...শিল্পীদের বেশি খাটানো কখনোই উচিত নয়। শিল্পীদের পক্ষে রাতদিন খাটা সম্ভব নয়। তাদের বিশ্রামের ও পড়াশোনার সময় দরকার।’

‘অনেকেই বিদেশী শব্দ ব্যবহার করতে ভালবাসেন—যদিও তার বদলে খুব ভাল দেশী শব্দ ব্যবহার করা যায়।—কেউ, সব কথাই অতি-সংক্ষেপে সারতে চান।—কেউ একই কথা বহুবার ব্যবহার করেন। ...আমাদের নতুন শব্দ চাই নতুন নতুন শব্দ আমাদের অত্যন্ত দরকার। বিশেষত বিজ্ঞানে, কারিগরিতে। আমাদের ভাষায় নতুন শব্দ আনতে হবে।—আমাদের ভাষার একটা ভাল ব্যাকরণ তৈরি করতে হলে সবচেয়ে আগে দরকার ভাষা সম্পর্কে ধারণা ও প্রক্রিয়া ঠিক করে নেয়া। —আমাদের ভাষার নবীকরণ দরকার।’

এই কথাগুলি বলেছিলেন ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফ্যাম ভন দঙ। আজ নয়। ১৯৬৪ সালে ও তার পর।

১৯৬৪-র গ্রীষ্ম থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ভিয়েতনামের ওপর বোমা ফেলতে শুরু করে। সেই যুদ্ধ ইতিহাসে ধ্বংস ও বর্বরতার নিদর্শন হিসেবেই অবিস্মরণীয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি-নিধনের পরও ভিয়েতনাম- নিধনের কর্মসূচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারি ভাবে নিয়েছিল বলেও ‘অবিস্মরণীয়।’ সমস্ত পৃথিবীর গণতান্ত্রিক মানুষ হিটলারকে হারিয়েছিল আর পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্রতম দেশ পৃথিবীর একটি বৃহত্তম দেশকে হারিয়ে দিল—এই কারণেও অবিস্মরণীয়।

ভিয়েতনাম মানুষের সৃষ্টিশীল স্পর্ধা ও সাহসের নতুনতম নৈতিক প্রমাণও—সে-কারণেও এই যুদ্ধ অবিস্মরণীয়।

সেই যুদ্ধের মধ্যে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী শিল্পী-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের নানা মিটিঙে বক্তৃতা করতেন। কখনো তাঁর আলোচ্য—ছোট ফিল্ম তোলা ভাল, নাকি, বড় ফিল্ম তোলা ভাল। কখনো তাঁর বিষয়—শিল্পীদের ঠিকমতো বিশ্রাম জুটছে কিনা। কখনো তিনি বলেন— ভিয়েতনামী ভাষায় একটা অভিধান তৈরির সমস্যা। কখনো জিজ্ঞাসা করেন—দক্ষিণ ভিয়েতনামে অনেক ভাল গল্প-কবিতা লেখা হচ্ছে, উত্তরে হচ্ছে না কেন।

আর বারবার লোকগীতির ধুয়োর মতো, বলেন, সব কিছু করতে হবে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।

বারবার, বিঠোভেনের সিম্ফনির মতো এক মহাসঙ্গীতের প্রধান স্বরের পুনরাবৃত্তির মতো, বলেন, সব কিছু করতে হবে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।

দু-এক সময় লেনিনের নাম করেন, দু-এক সময় হো-চি-মিনের কথা বলেন, দু-এক সময় মার্কস-এঙ্গেলসের কথা বলেন।

কিন্তু নামটুকুই। উদ্ধৃতি নেই, দার্শনিক তত্ত্বের কূটকচাল নেই। তাত্ত্বিক বিতর্ক নেই।

কারণ, তখন ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো’ উদ্ধৃত হচ্ছিল উত্তর ভিয়েতনামের আকাশে, মার্কিনি বোমার রাতকে দিন বানানো বিকট আলোতে—‘কমিউনিজমের প্রেত সারা দুনিয়াকে ভয় দেখাচ্ছে’। তখন লেনিনের ‘সাম্রাজ্যবাদ—ধনতন্ত্রের পরিণতি’ উদ্ধৃত হচ্ছিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়াকে দখলে রাখার জন্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চালানোর খরচ অনুমোদন করে মার্কিনি কংগ্রেসের একের পর এক নতুন প্রস্তাবে। তখন, হ্যাঁ তখনই, ‘জার্মান ইডিওলজি’র তরুণ মার্কস উদ্ধৃত হচ্ছিলেন হো চি মিনের গলায়—আমরা আমাদের জন্মভূমিকে শতগুণ সুন্দর করে গড়ে তুলব—এই নদী, পাহাড়, বন তো বদলাবে না, এই মানুষও তো বদলাবে না। তখন মার্কিন বিমান বহরকে মাটিতে টেনে নামানোর কাজে ঐ টুকু দেশের প্রতিটি মানুষ যখন পথে, তখন প্রধানমন্ত্রী : আলোচনা করেন—একটা কবিতার কথা বা একটা গানের কোনো লাইন'

কারণ, ভিয়েতনাম জানত, যেমন জানত ১৯১৭-র রাশিয়া, ১৯৪৮-এর চীন, ১৯৫৯-এর কিউবা, মানুষের ইতিহাসে এই প্রথম একটি দর্শন দুনিয়াকে—বদলে দিচ্ছে—সে দর্শন মানুষের পূর্ণতম বিকাশের দর্শন।

মার্কসবাদের আগে আর-কোনো ‘দর্শন’, দর্শনের কর্মসূচিকে এমন বদলে দেয় নি।

মার্কসবাদের আগে আর কোনো দর্শন কি ‘দুনিয়া’ বলতে

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion