লোকসংস্কৃতির চর্চায় বাঙলাদেশ
বিশ্ব-লোকসংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ এলাকা হলো বাঙলাদেশ, কারণ লোকসংস্কৃতির এমন কোনো উপাদান নেই, যা বাঙলাদেশে নেই। জনগণের, বিশেষত বাঙালি কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে লোকসংস্কৃতির সম্বন্ধ ঘনিষ্ঠ। লিখিত সাহিত্যে যাদের পরিচয় নেই, তাদের প্রকৃত পরিচয় রয়েছে লোকসংস্কৃতির মধ্যে। কাজেই জনগণের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সন্ধান করতে হলে লোকসংস্কৃতির যথার্থ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও চর্চা অপরিহার্য। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন বাঙালি জনগণকে নিজের স্বরূপ জানার দিকে আগ্রহী করে তোলে। ভাষা-আন্দোলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফল ‘বাঙলা একাডেমী’র প্রতিষ্ঠা। একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একটি লোকসাহিত্য বিভাগ খোলা হয়। প্রথম দিকে এ বিভাগের প্রধান কাজ ছিল লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উদাহরণের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। বৈজ্ঞানিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ কিভাবে হতে পারে, তা নির্ণয় করতে একাডেমীকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। এ-ব্যাপারে একাডেমীর অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে প্রথমদিকে সংগ্রহের কাজে বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ ছিল না। যাই হোক পরবর্তীকালে, একাডেমী বেতনভুক সংগ্রাহক নিয়োগ করেন। প্রতিটি জেলা থেকে সংগৃহীত লোকসাহিত্যের উপাদানকে জেলাভিত্তিক নথিতে সাজানো হয়। ফলে লোকসংস্কৃতির আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক পর্যায়ে আলোচনা ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। লোকসংস্কৃতির যেসব উপাদান সংগৃহীত হয়, সেগুলো হলো: লোককাহিনী, লোকসঙ্গীত, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, লোকসংস্কার, লোকশিল্পের নানা উদাহরণ এবং লোকবাদ্যযন্ত্র। সংগ্রহের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল লোককাহিনীর বিস্তৃত সংকলন।
বাঙলা একাডেমীর নিয়মিত সংগ্রাহক ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি অনিয়মিতভাবে সংগ্রহের কাজ করেছেন। একাডেমী এদেরকেও পারিশ্রমিক দেবার ব্যবস্থা করেছিলেন। বাঙলা একাডেমীর সংগ্রহই হলো বাঙলাদেশের বৃহত্তম লোকসাহিত্যের সংগ্রহশালা। লোকসাহিত্যের সংগ্রহ এবং তার সংরক্ষণ একেবারে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাপার। সংগ্রহের যেমন সমস্যা আছে, তেমনি আছে সংরক্ষণের সমস্যা। প্রথম দিকে একাডেমী সবরকম সংগৃহীত উপাদানকে একই নথিভুক্ত করেন। একাডেমী কর্তৃপক্ষ পরে প্রতিটি উপাদানের জন্য কার্ড-সূচি প্রণয়নের দিকে নজর দিয়েছিলেন। বাঙলা একাডেমীর সংগ্রাহকরাই হলেন সংগ্রহের জন্য দায়ী এবং অন্যদের চেয়ে এঁদের দায়িত্ব ছিল সর্বাধিক। আমি একাডেমীর সংগ্রহশালাটি বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন করবার সময় অনুভব না করে পারিনি যে, এই সংগ্রাহকরাই আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি অসামান্য সংগ্রহশালা নির্মাণে সহায়তা করেছেন। সেইসঙ্গে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ সর্বদা বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত হয় নি। কিন্তু আবার একথাও সত্য যে বাঙলা একাডেমীর সমস্ত কাজকর্ম নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ বরাদ্দ করত, প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অতি সামান্য। অন্যদিকে ব্যয় করবার পর ‘লোকসাহিত্য বিভাগ’-এর জন্য যা থাকত, তাকে অকিঞ্চিৎকর না বলে উপায় নেই। ফলে কিছুদিন আগে সংগ্রহের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, কেন্দ্ৰীয় সরকার বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য BNR বা ব্যুরো অব ন্যাশন্যাল রিকন্সট্রাকশন নামক একটি প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনকে যে অর্থ দিতেন, তার তিনভাগের একভাগ টাকাও বাঙলা একাডেমী পেত না। ১৯৭০-৭১ সালে বি-এন-আর প্রায় অর্ধকোটি টাকা পায় আর বাঙলা একাডেমী আট-দশ লাখের বেশি পায়নি। প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড একই আর্থিক দৈন্যে ভুগছে জন্মাবধি।
যাইহোক, প্রতিকূলতাসত্ত্বেও, বাঙলা একাডেমী লোকসাহিত্যের উদাহরণ সংগ্রহ করে বাঙলাদেশের জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। একাডেমীর সংগ্রাহকদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ( ইনি মোহাম্মদ সাইদুর নামে লিখে থাকেন), রংপুর জেলার সামীয়ুল ইসলাম, সিলেট জেলার চৌধুরী গোলাম আকবর বিশেষভাবে লোকসাহিত্যের চর্চায় নিরলস। মোহাম্মদ সাইদুর রহমান লোকশিল্প সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেক চিত্রশোভিত প্রবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া বিভিন্ন জেলার মেলা ও অনুষ্ঠানের চিত্র তুলে লোকসাহিত্য-বিভাগে একটি স্থায়ী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সামীয়ুল ইসলাম প্রধানত রংপুর জেলার লোকসঙ্গীত সম্পর্কে অনেকগুলি প্রবন্ধ লিখেছেন। চৌধুরী গোলাম আকবরও লোকসাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ছাড়াও বাঙলা একাডেমী লোকসাহিত্যের সংগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ‘লোকসাহিত্য’ নামে একটি অনিয়মিত সঙ্কলন ৮টি খণ্ডে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment