পাকিস্তান থেকে বাঙলাদেশ
পাকিস্তানের গত তেইশ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, পাকিস্তান কখনো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হয়নি।
প্রথম প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি চক্রান্তের রাজনীতিতে আস্থাবান ছিলেন এবং তাঁর আমল থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইঙ্গমার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের তন্নিবাহকদের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও চক্রান্তের জাল বিস্তার পেতে থাকে। চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, গোলাম মহম্মদ, ইসকান্দার মির্জা, এঁরা সবাই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের অনুগত ভৃত্য ছিলেন এবং চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গুপ্ত পথ বেয়ে পাকিস্তানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি নিয়োগপত্র নিয়ে ক্ষমতায় আসেন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী। ক্ষমতায় আসার সঙ্গেসঙ্গে পূর্বপরিকল্পিত পন্থায় বিভিন্ন সামরিক চুক্তি সম্পাদন করে পাকিস্তানকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের লেজুড়ে পরিণত করেন তিনি।
পাঞ্জাবের মালিক ফিরোজ খান নূন আর করাচীর আই. আই. চূঞিগড়ও সেই একই চক্রান্তের সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। আইয়ুব খান ছিলেন বৃটিশ সামরিক বাহিনীর একজন পেশাদার সৈন্য। তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। একটি সামরিক ‘জুন্টা’র সহায়তায়, আইয়ুব খানের অনুচর কালাতের খান মোনায়ম খান, সবুর খান এঁরাও কেউ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গদীনসীন হননি।
পাকিস্তানের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও ক্ষমতায় এসেছেন সামরিক বাহিনীর দৌলতে, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অন্ধকার পথ বেয়ে; আর তাই লিয়াকত আলী খান থেকে ইয়াহিয়া খান, পাকিস্তানের গত তেইশ বছরের ইতিহাস' হচ্ছে গুটিকয়েক ক্ষমতালিপ্সু; কায়েমী স্বার্থবাদী, আমলা মুৎসুদ্দি; সামন্তপ্রভু, ধনপতি, সাম্রাজ্যবাদের পদলেহী, সামরিক ও রাজনৈতিক স্বার্থশিকারীদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ইতিহাস।
যেহেতু, চক্রান্ত, দলাদলি ও ষড়যন্ত্রের পঙ্কিলতার মধ্যে এই শাসকগোষ্ঠীর জন্ম, লালন-পালন ও মৃত্যু, সেইহেতু ওই তিনটি প্রক্রিয়ার প্রতিই তাঁরা আস্থাবান ছিলেন। জনগণের কথা তাঁরা ভাবতেন না, কিম্বা ভাববার অবসর পেতেন না। জনগণের কোনো তোয়াক্কা তাঁরা করতেন না। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা তাঁদের চাওয়া-পাওয়া আর দাবি-দাওয়ার প্রতি সবসময় এক নিদারুণ নিস্পৃহতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন এই শাসকচক্র।
তাই এই গণবিমুখ শাসকচক্রের হাতে পড়ে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এক দুঃসহ সময় অতিবাহিত করেছে গত তেইশ বছর ধরে। ধনীরা আরো ধনী হয়েছে। গরিবের দল আরো গরিব হয়ে গেছে। যেহেতু এই শাসকচক্র, পাঞ্জাবী ভুস্বামী, পাঞ্জাবী ধনপতি, পাঞ্জাবী আমলা-মুৎসুদ্দি ও পাঞ্জাবী সামরিক ‘জুন্টা’র দ্বারাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো, সেইহেতু পাকিস্তানের বাকি চারটি প্রদেশ, পূর্ববাঙলা, বেলুচিস্তান, সিন্ধু ও সীমান্তপ্রদেশের সাধারণ মানুষ এই শাসকচক্রের হাতে আরো বেশি লাঞ্ছিত, নিগৃহীত ও শোষিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়েছে পূর্ববাঙলা ও পূর্ববাঙলার মানুষ পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ছাপান্ন ভাগ অধ্যুষিত পূর্ববাঙলা এই শাসক চক্রের হাতে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের আয় করা বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ আসত পূর্ববাঙলা থেকে তবু পূর্ববাঙলাকে তার আয়ের সিকিভাগও ভোগ করতে দেওয়া হতো না। সব তারা ব্যয় করত পশ্চিম-পাকিস্তানে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে কলকারখানা তৈরির কাজে। যদিও কেন্দ্রীয় পাক সরকারের আয়ের শতকরা সত্তরভাগ আসত পূর্ববাঙলা থেকে। তবু, শিক্ষাখাতে পশ্চিম-পাকিস্তানের জন্যে ব্যয় করা হতো মাথাপিছু চার টাকা ছআনা তিন পাই, আর পূর্ববাঙলার জন্যে মাথাপিছু মাত্র এক পাই।
শিল্পক্ষেত্রে পশ্চিম-পাকিস্তানের জন্যে মাথাপিছু একাত্তর টাকা চার আনা পনেরো পাই, আর পূর্ববাঙলার জন্যে মাথাপিছু মাত্র পাঁচ টাকা বারোঁ আনা পাঁচ পাই। সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পশ্চিম-পাকিস্তানে মাথাপিছু পাঁচ টাকা দুই আনা সাত পাই, আর পূর্ববাঙলার জন্যে মাথাপিছু মাত্র নয় আনা ছয় পাই।
বৈষম্যের এখানেই শেষ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে-বছরে মাত্র সত্তর-লক্ষ টাকা সাহায্য, দেয়া হয়েছে সেই একই বছরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য দেয়া হয়েছে চার কোটি দশ লক্ষ টাকা৷ যে-বছরে ঢাকা রেডিওর জন্যে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র এক-লক্ষ বিরানব্বই হাজার টাকা। সেই একই বছরে পশ্চিম-পাকিস্তানের রেডিও স্টেশনগুলোর জন্যে ব্যয় করা হয়েছে নয় লক্ষ
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment