মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিরবছিন্ন সংগ্রাম আমাদের দেশের বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির সামনে অন্যতম প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংগ্রাম নিছক নেতিবাচক নয়। হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের জনগণকে উভয় ধরনের সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব মুক্ত করে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে সচেতনভাবে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করে ভুগতে হবে। এই প্রসঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতন ব্যক্তিত্ব যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যাঁরা হিন্দু ও মুসলিম দুই ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবিচলভাবে লড়াই করেছেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সব মানুষ তাদের অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদের স্থান প্রথম সারিতে। দুঃখের বিষয়, এই ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের কথা এখন পর্যন্ত অনেকের কাছেই অজ্ঞাত রয়ে গিয়েছে। কারণ অবশ্য একটা আছে। মোল্লাতন্ত্রের ধর্মান্ধতা এবং অনগ্রসরতার বিরুদ্ধে তিনি তত্ত্বগত এবং রাজনৈতিকভাবে যা কিছু লিখেছেন তার সবই উর্দু ভাষায়। তার প্রতিষ্ঠিত এবং সম্পাদিত 'আল হিলাল' পত্রিকার কথা অনেকেরই জানা আছে। শিল্পীর একটি উর্দু, প্রকাশন সংস্থা 'আল হিলাল' পত্রিকার সম্পাদকীয়গুলির কয়েকটি সঙ্কলন প্রকাশ করেছেন, সম্ভবত দুই দশক প্রথম খণ্ডটির নাম 'ইসলাম আউর জমহুরিয়ৎ' অর্থাৎ 'ইসলাম এবং গণতন্ত্র'। প্রথম মহাযুদ্ধের পরে যখন তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছিলেন তখন তাঁর সেই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী প্রচার অভিযানে ইংলণ্ডের কয়েকজন খ্যাতনামা 'ইসলাম বিশেষজ্ঞ' অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা ঐশ্লামিক ধর্মগ্রন্থ এবং ইতিহাসের নজীর তুলে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে ইসলাম ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না । তাদেরই প্রেরণায় এদেশের কিছু সংখ্যক মুসলিম পণ্ডিতও সুর মিলিয়েছিলেন। তাঁরা আর এক ধাপ এগিয়ে বলার চেষ্টা করেন যে ইসলামের শিক্ষা হল রাজভক্তি। মনে রাখা দরকার সেই সময়টাতে ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন জোয়ার এসেছে এবং হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়েরই সাধারণ মানুষ উদ্বেল হয়ে উঠেছে। ঐসব প্রচারকদের যুক্তির বিরুদ্ধেই আবুল কালাম আজাদ তাঁর বলিষ্ঠ লেখনী চালনা করেন। ঐশ্লামিক ধর্মগ্রন্থ এবং ইতিহাস সম্বন্ধে তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল বিশ্ব-বিশ্রুত। তিনি উদ্ধৃতি, নজীর এবং যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করেন যে জাতীয় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সামাজিক কায়ের জন সংগ্রাম ইসলামের শিক্ষার বিরোধী তা নয়ই, বরং তারই যুক্তিসঙ্গত পরিণতি।
বর্তমান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য অবশ্য উপরোক্ত বিষয়ে আলোচনা করা নয়। এখানে মৌলানা আজাদের অসাম্প্রদায়িক এবং দেশপ্রেমিক কার্যকলাপের অন্য একটি প্রায় অজ্ঞাত দিকের উপর আলোকপাত করা হবে। সে কথা মনে রেখেই প্রবন্ধের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে। শিরোনামটা অবশ্য কারো কারো কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। যদি হয় তবে তার কারণ দুটি। (১) আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং বিশেষভাবে বিপ্লব আন্দোলন সম্বন্ধে বহু তথ্য এখনও অজানা রয়ে গিয়েছে, (২) যাঁরা এই বিষয়ে কিছুটা খোঁজখবর নিচ্ছেন তাঁদের অনেকে এমন কতকগুলি পূর্বকল্পিত যান্ত্রিক ছকে বাধা ধারণা নিয়ে অগ্রসর হন, যেগুলির সঠিকতা সম্পর্কে নতুনভাবে যাচাই করে দেখা দরকার। ঐসব অতিসরলীকৃত ছক অনুসরণ করার ফলে বহু তথ্য হয় নজর এড়িয়ে যায় নতুবা সেগুলির সঠিক তাৎপর্য পরিষ্কার হয়ে ওঠে না। ফলে তথ্যগত এবং পদ্ধতিগত দুদিক থেকেই ভুল হতে বাধ্য।
একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া থাক। দীর্ঘদিন ধরে মার্কসীয় পণ্ডিতদের কারো কারো মধ্যে ধারণা প্রচলিত আছে যে জাতীয় আন্দোলনে, বিশেষত জাতীয় বিপ্লবী আন্দোলনের উপর হিন্দু ধর্মীয় ধ্যানধারণার প্রভাব ছিল বলেই নাকি মুসলিম সম্প্রদায় তা থেকে দূরে থেকেছে। কেউ কেউ এমন মতও প্রকাশ করেন যে ঐ কারণেই নাকি 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' মাথা তুলেছে এবং ব্রিটিশ গভর্ণমেন্ট তাকে কাজে লাগাতে পেরেছে। এই প্রবন্ধে উক্ত ধারণার ভ্রান্তি সম্বন্ধে বিশদ বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, খানিকটা অবান্তর হয়েও পড়বে। তবু প্রসঙ্গক্রমে সংক্ষেপে দুই একটি কথা বলে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment