বাঙলাদেশ বনাম পশ্চিমবাঙলার বিপ্লবী বুলি
বাঙলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা-সংগ্রাম সম্পর্কে ইতিমধ্যেই বিভ্রান্তি প্রচারের প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছে।
বাঙলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলীম লীগ কিংবা জামায়েত ঈ-ইসলামীর কথা বলছি না, বলছি না পশ্চিমবাঙলায় অখণ্ড বঙ্গ পরিষদ, কিংবা ‘জাগো বাঙালী’ আন্দোলনের কথা; কেননা, সমগ্র বাঙলাদেশে বা পশ্চিমবাঙলার জনজীবনে এরা এতই নগণ্য যে ব্যাপক ক্ষতি করার ক্ষমতাও এদের নেই।
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রকৃত কার্যকরী বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে কোনো কোনো বামপন্থী মহল থেকে, বিপ্লবী বুলির আড়ালে, তথাকথিত শ্রেণী-বিশ্লেষণের নামে।
কলকাতার রাস্তায় পোস্টার পড়ছে, ‘মুজিব মার্কিন দালাল। চীন বিরোধী যুদ্ধ ঘাঁটি হিসাবে পূর্ব-পাকিস্তানকে (এঁরা বাঙলাদেশ বলেন না) ব্যবহার করতে চায়’—ইত্যাদি।
এইসব বক্তব্য ইয়াহিয়া খাঁর প্রতি এমনই সমর্থনসূচক যে স্বাভাবিক কারণে এও কোনো বাঙলার মানুষের মনে রেখাপাত করে না, তাই এইসব বক্তব্যও তেমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না।
কিন্তু আর এক ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য হাজির করা হচ্ছে যা নিঃসন্দেহে মারাত্মক এবং পশ্চিম-বাঙলার কোনো কোনো অংশের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে এইসব বক্তব্যের প্রবক্তাদের এখনও কিছুটা গণভিত্তি আছে বলে এদের বিকৃত মতবাদ নিঃসন্দেহে ক্ষতিকারক। এদের মতে:
(ক) বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ঠিক আছে, কিন্তু নেতৃত্ব প্রতিক্রিয়াশীলদের হাতে, সুতরাং এঁদের উপর ভরসা করা যাবে না; সমান্তরাল নেতৃত্ব এবং আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
(খ) পশ্চিম-বাঙলারও একই দশা, বাঙলাদেশের সঙ্গে যেটুকু তফাৎ তা শুধু ডিগ্রীর; সুতরাং এখানকার আন্দোলনও একই খাতে বহাতে হবে।
২
এই সব বক্তব্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইংরেজ আমলে অবিভক্ত ভারতে জাতীয় মুক্তি-আন্দোলনের কোনো কোনো পর্যায়ে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ভ্রান্ত রাজনীতি এবং রণকৌশলের কথা। ভ্রান্ত রাজনীতি ও রণকৌশলের ফলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত স্বাধীনতা আন্দোলনকে বুর্জোয়া নেতৃত্বে পরিচালিত এই অজুহাতে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করা হয়েছে। শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্ব, কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ছাড়া জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন হলে তা বুর্জোয়াদের খপ্পরে পড়বে এবং সেই আন্দোলন জাতীয় স্বাধীনতা-সংগ্রামের ক্ষতি করবে এই ধরনের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর ফলে শ্রমিকশ্রেণীকে এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে জাতীয় আন্দোলনের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
যদিও আমরা সবাই জানি, মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিনের নির্দেশ:
পরাধীন দেশে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে জাতির মুক্তিতে আগ্রহী সমস্ত শ্রেণীকে নিয়ে মোর্চা গড়ে তুলতে হবে, শ্রমিকশ্রেণী থেকে জাতীয় বুর্জোয়া পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণী এই ফ্রন্টে সামিল হবে।
সেই সময় আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে স্তালিনের নেতৃত্ব ও প্রভাব ছিল অবিসম্বাদিত। জাতীয় মুক্তি-আন্দোলন সম্পর্কে স্তালিনের কিছু কিছু সংকীর্ণতা পরবর্তীকালে প্রকাশ পাওয়া সত্ত্বেও একথা অনস্বীকার্য যে, তিনিও বারংবার এই পর্যায়ে সমস্ত শ্রেণীকে নিয়ে ফ্রন্ট গড়ে তোলার উপর জোর দিয়ে গিয়েছেন।
কংগ্রেসকে এবং জাতীয় বুর্জোয়াশ্রেণীকে বাদ দিয়ে জাতীয় স্বাধীনতা—সংগ্রামের যে মোর্চা গঠনের কথা একদা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রণ-নীতিতে স্থান পেয়েছিল, তার সঙ্গে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তো কোনো সম্পর্ক ছিলই না এমনকি স্তালিনের বা কমিনটার্নের ষষ্ঠ কংগ্রেসের বক্তব্যও সেখানে মানা হয়নি। জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম প্রসঙ্গে ট্রটস্কী এবং এম. এন. রায়ের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীই ছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন রণকৌশল ; এই লাইনের উৎসাহী প্রবক্তা ছিলেন, বি. টি. রণদীভে-মুজফফর আহমদ প্রমুখ তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতৃত্বের একাংশ।
৩
আমরা লক্ষ্য করেছি, এই পশ্চিমবঙ্গ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্ব তথা আওয়ামী লীগের শ্রেণী-চরিত্র বিশ্লেষণের নামে সেই একই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে—একই ধরনের বিপ্লবী বুলির আড়ালে। প্রশ্ন উঠতে পারে পশ্চিমবঙ্গে বাঙলা দেশের নেতৃত্ব সম্পর্কে যে সমালোচনাই হোক্ না কেন, বাঙলাদেশ পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র, তার প্রভাব ওখানে পড়বে কেন, এপারের সমালোচনা ওপার বাঙলার ক্ষতিই বা করবে কিভাবে?
আমরা জানি, আজকের দুনিয়াটা এত ছোট হয়ে গিয়েছে যে ভালো-মন্দ যে-কোন তত্ত্বের প্রভাবই সারা পৃথিবীর উপর পড়ে। আমরা চোখের সম্মুখেই তো দেখলাম, সঙ্কীর্ণ রাজনীতির ফলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি কিভাবে তিন টুকরো হয়ে গেল। চে গুয়েভারা লাটিন আমেরিকায় ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটরশীপের
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment