ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইতিহাসে লেখা আছে একদিন বখ্তিয়ার যখন তার তুর্কী সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে কামান নিয়ে এসে বিহারের নালন্দা আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর অতর্কিত কামান দাগতে আরম্ভ করেছিলেন সেদিন কয়েক হাজার দেশ-বিদেশের ছাত্র সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করত, তোপের সামনে তাদের কেউ পালিয়ে বাঁচল, কেউ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। সে আজ সাতশ বছরের ইতিহাসের কথা। আমরা জানি, মধ্যযুগ ছিল বর্বরতার যুগ, ধর্মান্ধতার যুগ, সামন্ততন্ত্রের বা স্বৈরাচারের যুগ; কিন্তু বিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্রের যুগেও যে সেই মধ্যযুগের ঐতিহাসিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ তাই ঘটেছে গত ২৫-এ মার্চ মধ্যরাত্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে।
একদিন নালন্দার প্রান্তরে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, যে নিদারুণ দুর্দিনে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ভবনের উপর বখ্তিয়ারের তোপ এসে পড়ল, সেদিন আবাসিক ছাত্র অধ্যাপকদের মধ্যে কি আতঙ্ক না জানি দেখা দিয়েছিল। তারপর তাদের সর্বস্ব সেখানে ফেলে কেউ প্রাণ নিয়ে পালাবার চেষ্টা করতে তোপের মুখে পড়ল, কেউ হয়তো প্রাণে বেঁচেও এই নিদারুণ আঘাত শেষ পর্যন্ত সইতে পারল না। সেজন্য নালন্দার চারদিককার জনমানবের মধ্যে তার কোনো চিহ্নই আজ অবশিষ্ট দেখতে পাওয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তেমনই এক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, অনেকটা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই বললেও ভুল হয় না; তবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল শিক্ষণীয় বিষয় ছিল বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন, বুদ্ধের মূর্তি সেখানে উপাসিত হতো, বৌদ্ধ আদর্শে জীবন গঠিত হতো; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক বিংশ শতাব্দীর আদর্শে গঠিত, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাই সেখানকার শিক্ষা ছিল৷
তবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটু ভুল ধারণা আমাদের বাইরের জগতের মধ্যে প্রচলিত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববাঙলার শিক্ষায় অনগ্রসর মুসলমান সমাজের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যেই সে সময়কার ইংরেজ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ-কথা সত্য, তথাপি আমার সেখানকার ষোল বছরের ছাত্র এবং অধ্যাপক জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে এ-কথা বলতে পারি যে ১৯৪৭ সন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যত হিন্দু ছাত্র এবং অধ্যাপক উপকৃত হয়েছেন, মুসলমান ছাত্র ও অধ্যাপক তার অর্ধেকও উপকৃত হয়নি।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেব একদিন বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে লোকে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলে; তুমি তা দেখছ, এর শতকরা দশ ভাগ অধ্যাপকও মুসলমান নয়, সবই হিন্দু; আর শতকরা পঁচিশ ভাগ ছাত্রও এখন পর্যন্ত মুসলমান নয়, সবই হিন্দু। সুতরাং একে বরং ঢাকেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় বলা উচিত।
শহীদুল্লাহ সাহেব যখন এ-কথা বলেছিলেন, তখন সম্ভবত ১৯৩২ সন। তাঁর কথা বিন্দুমাত্রও অতিরঞ্জিত ছিল না। এমনকি, দেশ বিভাগের সময় পর্যন্তও হিন্দু অধ্যাপকের সংখ্যা শতকরা পঁচাত্তর ভাগ এবং হিন্দু ছাত্রের সংখ্যাও পঞ্চাশ ভাগের বেশি ছিল। সেইজন্যই বলছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্তও হিন্দু সমাজের যত উপকার হয়েছে, মুসলমান সমাজের তত উপকার হয়নি। সেইজন্য সকল শ্রেণীর ছাত্র, অধ্যাপকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের বলে মনে করত। আজ তাই তার এই দুর্দিনে ভারতের হাজার হাজার অধিবাসীর মনে সুগভীর বেদনা অনুভূত হচ্ছে।
আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজের আবাস বা গৃহের মতো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও আমাদের কাছে তাই ছিল। অধ্যাপকগণও সেখানে ছাত্রদের থেকে দূরে থাকতেন না, সর্বদা ছাত্রদের সুখদুঃখের সঙ্গে, নিজেদের জড়িয়ে রাখতেন। সেইজন্য তাঁদের সকলেরই পরম আত্মীয় বলে মনে হতো। ঢাকায় তখন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন চলছে, ছাত্র সমাজ পুলিশী নির্যাতনের লক্ষ্য। কত ছাত্রকে যে কত ভাবে কত রকম বিপদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রক্ষা করেছেন, তা কোনোদিনই কোনো স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে লেখা হবে না।
তখন একজন ইংরেজ ভাইস-চ্যান্সেলার ছিলেন, তাঁর নাম জি. এইচ. ল্যাংলি ( G. H. Langley)। আমরা তাঁকে নিজেদের মধ্যে গৌরহরি ল্যাংলি বলতাম, তাঁর পুরো নাম ছিল জর্জ হ্যামিলটন ল্যাংলি। একদিন কয়েকটি ছাত্র—তারা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র কি না জানা যায়নি—কোনো একটা রাজনৈতিক অপরাধ
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment