উচ্চশিক্ষায় আমাদের যতখানি মনযোগ নিবিষ্ট রয়েছে, তার চেয়ে অধিক না হলেও অন্তত কম নয় এমন তীক্ষ্ণদৃষ্টি প্রয়োজন উচ্চশিক্ষায় আসার ক্ষেত্রে যে সব ধাপ অতিক্রম করতে হয় সে দিকে। কারণ, যেকোন শক্তিশালী উচ্চভিত্তির ক্ষেত্রেই গোঁড়াটা মজবুত হওয়া চাই। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও একথা সর্বাংশে সত্য। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা সে প্রচেষ্টার ফাঁকা বুলিকে বারবার কটাক্ষ করছে। একদিকে শিক্ষামন্ত্রীর বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার মান নিয়ে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর, অপরদিকে প্রশ্নফাঁস-দুর্বল শিক্ষা কাঠামোসহ নানা অসঙ্গতি। সবচে’ বড় দৈন্যদশা টের পাওয়া গেল এইসএসসি পরীক্ষাত্তীর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সিংহভাগের (গড়ে প্রায় ৯০ শতাংশের উপর) অকৃতকার্য হওয়া। ঢাবিতে অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় এইসএসসি পরীক্ষায় অসামান্য পাশের হার উল্টে ফেলের লজ্জায় ডুবালো। এ ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাদের উত্তর প্রজন্মকে কি শিক্ষায় শিক্ষিত করছি!

শিক্ষা। শিক্ষার উদ্দেশ্য। এসব নিয়ে ভালো ভালো কথা বইয়ে লেখা রয়েছে। সেখান থেকেই বলছি—শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানবিক মানুষ হওয়া। মানবিক মানুষটা কী, তা ব্যাখ্যা করতে পারলে নিজে খানিকটা স্বস্তি পেতাম; সুযোগ ও সমেয়ের অভাবে তা আরেকদিন আলোচনা করার ইচ্ছা রাখি। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো—যোগ্য ও দক্ষ অধুনিক জনশক্তি গড়ে তোলা। অর্থাৎ, শিক্ষার মাধ্যমে জনগণকে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ ও যোগ্য-দক্ষ জনশক্তিরূপে গড়ে তোলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য। যে সমাজ এ কাজটি যত সুনিপুণভাবে করবে, সে সমাজ ততবেশি এগিয়ে যাবে। এবার আসুন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে চোখ দেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও প্রায় এমন কথাই লেখা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন। শুধু ভিন্ন নয়, একেবারেই বিপরীত।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রচলিত কথায় বলা হয়ে থাকে কেরানী তৈরির শিক্ষা। আসলে এ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে মানুষ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির সুযোগ নিয়ত কমছে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি, আজকাল স্কুলের সামনে অভিভাবকদের চাতক অপেক্ষা স্বাভাবিক ও নিয়মিত ঘটনা। বিশেষত শিক্ষার্থীদের মায়েরা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে তার সন্তানটি কখন বেরোবে, তাকে নিয়ে আবার ছুটতে হবে অমুক স্যারের কাছে অথবা তমুক কোচিংয়ে। এ ঘটনার অবতারণা বাহুল্য, কারণ তা কারোরই চোখ এড়ায় না। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করেন, আপনাদের সন্তানদের আপনারা কি বানাতে চান? একজনকে থামিয়ে দিয়ে আরেকজন হুমড়ি খেয়ে বলবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি কর্মকর্তা, আমলা, পাইলট, ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই এসবই হয়ত হবে, মানুষ হবে কী? কেউ কি বলবেন, আমার সন্তানকে আমি মানুষ বানাতে চাই! হুম, বলবেন না; কেউই বলে না। অর্থাৎ, সমাজে শিক্ষার মধ্যদিয়ে চাকুরে তৈরির ব্যবস্থা ধীরে ধীরে আরো শক্তিশালী হচ্ছে; বিপরীতে জ্ঞানার্জনের স্পৃহা থেকে সরে যাচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এখন প্রায় সবাই একটা সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়ছেন। আগে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা থাকত—জ্ঞানার্জনের জন্য এসো, সেবার জন্য যাও। আর এখন তা বদলে লেখার উপক্রম হয়েছে—সার্টিফিকেটের জন্য এসো, চাকুরির জন্য যাও।

শিক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে মনে উঁকিঝুঁকি দেয়, এত এত স্নাতক বা স্নাতকোত্তর দিয়ে রাষ্ট্রের কী হবে? কেন সামান্য বেতনের চাকুরি পেতেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তরই হতে হবে? ব্যাংকের ক্যাশে বসে টাকা গোনার জন্য কেনইবা এদেশে স্নাতকোত্তর পাশ দিতে হবে? গঞ্জের মহাজনের গদিতে বসে সুদের টাকার হিসেব রাখার জন্য স্নাতকোত্তর কেন, ক্লাশ ফাইভ পাশ কর্মচারীর প্রয়োজনও তো পড়ে না! শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এমন ছেলে খেলা নতুন নয়। মনে রাখতে হবে যে আমাদের উচ্চশিক্ষার কৌশল কেমন হবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্রে চলছে আমাদের উচ্চশিক্ষা। একটি ব্যাংক যখন একটি দেশের উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়, তখন বুঝতে আর বাকি থাকে না সেখানকার শিক্ষার মূখ্য উদ্দেশ্য ব্যাবসা ও মুনাফা অর্জন;

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion