বল্ মা তারা
সেকেলে লম্বা থার্ড ক্লাস কামরা, প্রচুর জায়গা। ভিড় একেবারে নেই। কামরার একধারে বসিয়া আছেন প্রকাশবাবু, প্রকাশবাবুর স্ত্রী সুলোচনা এবং তাঁহাদের কন্যা উমা। উমার বয়স ষোলো কি ছাব্বিশ তাহা তাহার মুখ দেখিয়া বা চেহারা দেখিয়া নির্ণয় করা সম্ভব নয়। রোগা ছিপছিপে চেহারা। চোখের কোণে কালি পড়িয়াছে। গালের হাড় দুটি বেশি উঁচু। তবু মোটের উপর দেখিতে মন্দ নয়। দেখিতে আরও হয়তো ভালো হইত যদি মুখে আর একটু সজীবতার ছাপ থাকিত। মুখের ভাবটি বড়ই ম্রিয়মাণ। প্রকাশবাবু বেঁটে বলিষ্ঠগঠন ব্যক্তি। কালো রং। গোঁফ দাড়ি কামানো। মুখটি চতুষ্কোণ। চক্ষু দুইটি বড় বড় এবং রক্তাভ। মুখভাব উপর্যুপরি সাত-গোল-খাওয়া-ফুটবল-টিমের ক্যাপ্টেনের মতো মরিয়া। সাতটি কন্যার পিতা তিনি। উমা তৃতীয়া কন্যা। তাহাকেই দেখাইতে লইয়া যাইতেছেন। টকটকে লালপেড়ে শাড়ি পরা সুলোচনা, মাথায় আধ ঘোমটা টানিয়া সসঙ্কোচে বসিয়া আছেন একধারে। সাতটি কন্যা প্রসব করিয়া চোরের দায়ে ধরা পড়িয়া গিয়াছেন যেন। মুখের চামড়া ঝুলিয়া পড়িয়াছে। চোখের নীচে ফোলাফোলা ভাব, এবং কোণে জরার চিহ্ন। মাথার সামনের দিকটা টাক। টাকেরই উপর খানিকটা সিঁদুর থ্যাবড়ানো। তাঁহাকে দেখিলেই মনে হয় তিনি স্থবিরা। প্রকাশবাবুর স্ত্রী বলিয়া মনেই হয় না, মনে হয় তাঁহার দিদি বুঝি। তাঁহার মুখের আত্মসমাহিত ভাবটি কিন্তু মুগ্ধ করে। তিনি যেন অদৃষ্টের উপরই হোক বা ভগবানের উপরই হোক সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া বসিয়া আছেন। যাহা হইবে তাহাই মানিয়া লইবেন।
কামরার অপর প্রান্তে কোণের দিক ঘেঁষিয়া আর একটি মেয়ে বসিয়া ছিল। ইহারও বয়স কত তাহা বলা শক্ত, তবে বুড়ি নয়। ত্রিশের কাছাকাছিই হইবে। এ মেয়েটিও রোগা, কালো। কিন্তু চোখেমুখে একটা বুদ্ধির দীপ্তি আছে। পোশাক-পরিচ্ছদেও বেশ একটু ছিমছাম ভাব। বাঁ হাতের কবজিতে রিস্ট-ওয়াচ। অলঙ্কারের বাহুল্য নাই, কানে ফুল, হাতে একগাছা করিয়া চুড়ি। পাশে যে ভ্যানিটি ব্যাগটি রহিয়াছে তাহাও সুরুচির পরিচয় বহন করিতেছে।
মেয়েটি নিবিষ্ট চিত্তে বসিয়া বই পড়িতেছে একটি। আর মাঝে মাঝে আড়চোখে প্রকাশবাবুদের দিকে চাহিয়া দেখিতেছে। সাধারণ মেয়ে হইলে হয়তো আলাপ করিত। কিন্তু অপরিচিতের সঙ্গে গায়ে পড়িয়া আলাপ করা আধুনিক কায়দা নয়, আর মঞ্জুশ্রী তেমন মিশুক প্রকৃতির মেয়েও নয়। অপরের সম্বন্ধে জানিবার কৌতূহল অবশ্য আছে, কিন্তু অযাচিতভাবে আলাপ করিয়া তাহা সে চরিতার্থ করিতে চায় না। আড়চোখে চাহিয়া এবং কথাবার্তা শুনিয়া যতটা জানা যায় তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকে সে। তাহার উপরই কল্পনার রং চড়ায় একটু-আধটু।
দুই
প্রকাশবাবু সহসা বেঞ্চির উপর চাপ-টালি খাইয়া বসিলেন। এবং বাম জানুটি নাচাইতে লাগিলেন। তাহার পর সহসা বলিলেন, “যাই বল, লোকটা ছোটোলোক। অত করে যেতে লিখলুম, কানই দিলে না সে কথায়।”
সুলোচনা বলিলেন, “ছুটি নেই, কি করবে বল।”
“রোববারেও ছুটি নেই? কাকে বোঝাচ্ছ তুমি!”
“ছেলের ঠাকুমাও না কি দেখতে চায়। বুড়োমানুষ কি অতদূর যেতে পারে?”
“বুড়ো মানুষ কেদারবদরি যেতে পারে, আর এই পাঁচ-ছ ঘণ্টার রাস্তা যেতে পারে না? কাকে বোঝাচ্ছ তুমি!”
সুলোচনার আত্মসমাহিত মুখে একটু হাসির ঝলক ফুটিয়া উঠিল।
“গরজ তো তোমাদেরই। তুমি মেয়ের বাপ এ কথা ভুলে যাচ্ছ কেন?”
“তোমার বাবাও মেয়ের বাপ ছিল। কিন্তু তাঁকে আমরা স্টেশনের ওয়েটিং রুমে টেনে আনিনি। তোমার বাপের বাড়ি ধাপধারা গোবিন্দপুর খুরশিদ্গঞ্জেই গিয়েছিলুম আমরা। জাত হিসাবে সত্যিই অত্যন্ত নেবে গেছি আমরা। হু হু করে নেবে যাচ্ছি, ছি, ছি, ছি, ছি—”
পুনরায় জানু নাচাইতে লাগিলেন।
হঠাৎ উমার দিকে চাহিয়া প্রশ্ন করিলেন, “কি রঙের শাড়ি এনেছিস?”
“মা বললে লাইট গোলাপীটা আনতে। সেইটেই এনেছি।”
“তাহলেই হয়েছে। সেদিন যে সবুজ শাড়িটা কেনা হল সেইটে আনলে না কেন—”
“ডীপ ডগমগে রঙের শাড়ি কি তোমার কালো মেয়েকে মানায়? আমার ও-শাড়িটা কেনবার ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু সবুজ রং দেখলে তো তোমার আর জ্ঞান
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment