ফ্যাসিবিরোধী যুদ্ধ ও জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম
ফ্যাসিবাদের পরাজয়ের ৩০শ বার্ষিক উদযাপনের মুহূর্তে আজ আমরা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই গৌরবময় ভূমিকার কথা, যা ফ্যাসিবাদী বর্বরতার আক্রমণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিল। ইতিহাস এই সাক্ষ্য বহন করছে যে ফ্যাসিবাদের পরাজয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন চূড়ান্ত ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। সোভিয়েত রেড আর্মিকে পুরোভাগে রেখে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিল বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্টরা ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক শক্তি। আজ আমরা সেই কমিউনিস্ট যোদ্ধাদের গৌরবমণ্ডিত ভূমিকা সম্পর্কে গর্ব অনুভব করি।
বিশ্ব-বিপ্লবী প্রক্রিয়ার বিকাশ
স্বাভাবিকভাবেই, এই দুর্জয় সংগ্রামের ফলপরিণাম হিসাবে যুদ্ধোত্তরকালে পৃথিবীর রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রভাব দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিহাসের পাতায় পাতায় এর প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে পৃথিবীতে একটি মাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই যুদ্ধ শেষ হবার পরে পূর্ব-ইয়োরোপের কয়েকটি দেশে এবং চীনে, উত্তর-কোরিয়া ও উত্তর-ভিয়েতনামে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক কথায়, উপরোক্ত দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে ধনতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার মুখোমুখি একটি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাটি পৃথিবীর গতিকে চূড়ান্তভাবে প্রভাবিত করতে আরম্ভ করেছে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের যে শক্তি ছিল, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে তুলনায় তার শক্তি বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯১৭ সালে মাত্র একটি দেশে (সোভিয়েত রাশিয়া) কমিউনিস্ট পার্টি বিদ্যমান ছিল, অন্যান্য দেশে ছিল কমিউনিস্ট গ্রুপ মাত্র; ১৯২৮ সালে ৪৬টি দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছিল, ১৯৩৫ সালে ছিল ৬১; আজ কমিউনিস্ট পার্টির সংখ্যা ৯০। একথা জোরের সঙ্গেই ঘোষণা করা যায় যে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন হল এ যুগের সবচেযে প্রভাবশালী, সবচেয়ে জঙ্গী আন্দোলন।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের যে শক্তি ছিল, তুলনায় তা আজ বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে পরাধীন দেশগুলিতে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম চলেছিল, সাম্রাজ্যবাদ পঞ্চশক্তির জোরে বেশ কিছুটা তার গতিরোধ করে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদের শক্তি তুলনায় বিশেষভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্ব-পরিস্থিতিকে চূড়ান্তভাবে প্রভাবিত করার ক্ষমতা সাম্রাজ্যবাদ চিরতরে হারিয়েছে। ফলে, জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম দুর্বার বেগে এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে গত পঁচিশ বছরের মধ্যে প্রায় একশোটি দেশ ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করেছে। জোট-নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে তারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন ও প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে।
বস্তুত, বিশ্ব-সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা, উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলিতে শ্রমিক আন্দোলন, এবং শক্তিশালী জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম—এই তিন স্রোতধারা মিলিত হয়ে বিশ্ব-বিপ্লবী প্রক্রিয়ার অগ্রগতিকে আজ অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।
একাশি পার্টির দলিলে (১৯৬০) বিষয়টির গুরুত্ব নির্ধারণ করে সঠিকভাবেই বলা হয়েছে—‘আজ সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা, এবং সেইসব শক্তি—যারা সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে—সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের সপক্ষে সংগ্রাম করছে, এরাই সমাজের ঐতিহাসিক বিকাশের প্রধান মর্মবস্তু, প্রধান ধারা এবং প্রধান বৈশিষ্ট্যকে নির্ধারিত করছে। সাম্রাজ্যবাদ যতই চেষ্টা করুক, তারা ইতিহাসের অগ্রগতি রোধ করতে পারবে না।’
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের মধ্যে সম্পর্ক
প্রশ্ন উঠতে পারে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের এই যোগাযোগ কি আকস্মিক, অথবা, এই সম্পর্ক সমাজবিকাশের নিয়মের অঙ্গ?
এই বিষয়ে লেনিনের নির্দেশ শিরোধার্য। লেনিন লিখেছেন—সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে বিশ্ব-পরিস্থিতিতে প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এক নতুন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির জেহাদ—‘একথা যদি আমরা মনে না রাখি, তাহলে আমরা একটিও জাতীয় ও ঔপনিবেশিক প্রশ্নকে সঠিকভাবে উপস্থিত করতে পারব না’ (কমিন্টার্নের দ্বিতীয় কংগ্রেসে ঔপনিবেশিক কমিশনের রিপোর্ট)। যেহেতু সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামে প্রধান শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, তাই সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ও সৌহার্দ স্থাপন পরাধীন দেশগুলিতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের অগ্রগতির অপরিহার্য শর্তস্বরূপ হয়ে উঠেছে। লেনিন আরও বলেন—সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সাফল্যের
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment