রাজপুত্তুরের নাম ইন্দ্রনাথ। বড়ো একটা দেশ একেবারে কম আয়াসে জয় করে নিলে! অত অত সৈন্য নেই, তেমন হাতি নেই, ঘোড়া নেই, তেমন কামান বন্দুক নেই তবু জয় করে নিলে। তারপর তার খুশি দেখে কে? এমন হলে কে না খুশি হয়? রাজ্য পেয়েই তো ইন্দ্রনাথ রাজা হল। এবার শাসনের পালা। অত বড়ো দেশ সে কেমন করে শাসন করবে? কিন্তু ইন্দ্রনাথ ঘাবড়াল না। খুব বুদ্ধিমান কিনা! শাসনকাজে আগে যেসব বড়ো বড়ো কর্মচারী ছিল তারা ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এইজন্য তাদের একেবারে পথে বসানো হল না। ছেলে বা অন্য কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে সেইসব পদে নিযুক্ত করা হল। কাজেই তারা অধীন থেকেও খুশি হয়ে গেল। আর যারা বিদ্রোহ করেছিল, সংখ্যায় তারা অল্প, তাদের কেউ করলে আত্মহত্যা, কেউ পালিয়ে গেল দেশ থেকে। কিন্তু কী ক্ষমা! তাদের খালি তক্তপোশে তাদের আত্মীয়স্বজনদেরই বসানো হল, লোকচক্ষে নিজে বেদখল না করে—আসলে কিন্তু রাজ্যশাসন করবে নিজেই, অথচ জনসাধারণ ভাবল, কী ভালো আমাদের নতুন রাজা! দেখ, ওদের কোনো শাস্তি পর্যন্ত দিলে না!

রাজকুমার ইন্দ্রনাথের বুদ্ধি আছে। এইভাবে রাজ্য জয়ের ব্যাপারে যেসব বিশৃঙ্খলা জেগে উঠেছিল, সেসব সহজেই থামানো গেল। ইন্দ্রনাথের নিজের দেশ যেখানে ছিল—এই নতুন রাজ্যের কাছেই, নইলে আর অত সহজে জয় করা যাবে না কেন, সেই দেশের রীতিনীতি আইনকানুন, শাসনের অবস্থা সব ভালো করে জেনেই সে এসেছিল—নিজের যে দেশ, সেখানে লোক ভয়ানক গরিব, সেখানে তেমনি পাঁচজন লোক খেতে পায় তো পঞ্চাশ জন না খেয়ে থাকে, সেখান থেকে লোক আনিয়ে ইন্দ্রনাথ তাদের ভালো ভালো চাকরি—যেসব চাকরিতে দায়িত্ব আর সিন্দুক খোলার চাবি,—দিলে। এতে এক বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল; লোকগুলো তো নিজের দেশের আর হাতের; ভুলেও কখনও বিদ্রোহ করবে না, বরং এদের জোরে পরের রাজ্যে নিজের পক্ষটা শক্তিশালী হল। এদিকে ছোটো ছোটো আর মাঝারি গোছের সমস্ত চাকরি, যেগুলিতে নেই দায়িত্ব আর চাবি, সেগুলো দেওয়া হল এই দেশের লোকদের—রীতিমতো মাইনে আর বুড়ো হলে চাকরি ছাড়বার সময় অনেকগুলো টাকা একসঙ্গে পাওয়া যায়, যা আগে ছিল না। এই পেয়ে সকলে খুশি।

এইভাবে চলছে তো চলছেই, অনেকগুলো বছর গেল কেটে। ইন্দ্রনাথ শাসনের সুবিধার জন্য সারা দেশটা কতকগুলো ভাগে ভাগ করে নিলে—এখানকার লোক বুঝলে, এই,—আর মনে করল, তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের ভিন্ন ভিন্ন লোক। আসলে একই দেশে বাস করল, কারণ মহারাজ ইন্দ্রনাথই যে রয়েছে সকলের উপরে, মূল ক্ষমতার অধিকারী সে-ই। কিন্তু দু-একজন যারা চিন্তাশীল তারা ভাবল, এসব বাইরের চটক, দোকানদারের গ্রাহক আকর্ষণ করবার মতো একটা উপায়। তারা প্রতিবাদ জানাল। ইন্দ্রনাথ মনে মনে ঘাবড়ে গেল, এতকাল নিশ্চিন্তে রাজত্ব করে, পরেরটা দিয়ে নিজের দেশের আর ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি বাড়িয়ে, অথচ বুদ্ধি খাটিয়ে এদেশের অত অত অনুভূতি ছাড়া লোকদের খুশি রেখে, বা খুশি না রেখেও প্রতিবাদ করবার মুখ কৌশলে ভেঙ্গে অমন আরামের সন্ধান পেয়ে এতকাল ভাবতেও পারেনি যে তার ভিতরের কৌশলও অনেকে ধরে ফেলেছে, সে মনে মনে ভয়ানক ঘাবড়িয়ে গেল। কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করল না। রাজ্য পাবার পর এতকাল সে এ দেশেরই লোক দিয়ে অনেক সৈন্য তৈরি করেছে, ভাবতে পারা যায় না সে কত সৈন্য! আর তৈরি করিয়েছে কত দুর্গ, অস্ত্রশস্ত্র, জোগাড় করেছে কত ঘোড়া, হাতি,—নিযুক্ত করেছে এ দেশেরই লোক দিয়ে কতকগুলি চর। তাই সে প্রথমে কিছু গ্রাহ্যই করলে না, কিন্তু কানের কাছে সবসময়ে একটা জিনিস বাজলে তার তো প্রতিকার করতে হয়। তাই ইন্দ্রনাথ ডেকে পাঠাল তাদের, ওই কটি লোককে যদিও অনায়াসে পারত, তবুও কামান দিয়ে দিলে না উড়িয়ে, নিজের আত্মসম্মান একটু

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion