বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শৃঙ্খলমুক্তি মানে কী?
বিজ্ঞান ও ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে কোনো অর্জনই আকস্মিক নয়। এর মালিকানা আসলে কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি বা দেশ দাবি করতে পারে না। প্রতিটি অর্জনই বস্তুত আগের দীর্ঘ অর্জনের সমষ্টি। প্রতিটি অর্জনই দীর্ঘ ধারাবাহিকতার ফসল। এই অর্জন, এই অগ্রগতি মানুষের, বিশ্বের সকলের। সে হিসেবে আমরাও এর অংশীদার। যদি বিচ্ছিন্নভাবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের অর্জনের বিষয় পরীক্ষা করতে বসি তাহলে তা খুব উল্লেখযোগ্য নয়। কেননা এই অঞ্চলে মানুষের জীবনের মতোই, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশও, এই দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশের মধ্য দিয়ে যা ঘটতে পারতো, তা বরাবরই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখানে এখন তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খণ্ডিত, আরোপিত, আগ্রাসনের সঙ্গী।
সাম্প্রতিককালে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণে বাংলাদেশও যুক্ত হয়েছে। দেশের ভেতরে বাইরে যোগাযোগের সম্প্রসারণ হয়েছে, ‘সেবা’ খাতের বিস্তার ঘটেছে। স্থবির অর্থনীতিতে নতুন ধরনের পেশার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখানে এটা বলা দরকার যে, এই বিস্তার কতদূর যাবে এবং তা কী চেহারা নেবে তা প্রযুক্তি দ্বারা নির্ধারিত হবে না। তা নির্ধারিত হবে সমাজের ক্ষমতার বিন্যাস দ্বারা। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রফেসর ইউনুস এবং তার সঙ্গে আরও অনেকেই এরকম একটা ধারণা দিচ্ছেন যে, ডাটা এন্ট্রির শ্রমিক হবার মধ্যেই বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মেধা আর যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব। তাদের কাছে কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট নিজে নিজেই এদেশের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম যদি সেগুলোতে বেসরকারি দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দেয়া যায়। কিন্তু এদেশের মানুষের জীবনে মহাসুযোগ মানে নিছক ‘সফটওয়্যার’ ডাটা শ্রমিক হবার সুযোগ বা ‘সুপার হাইওয়ে’-তে ঘুরিয়ে যুক্ত হবার বিষয়কে দেখা খুবই সংকীর্ণ ও বিভ্রান্তিকর।
আসলে আমাদের জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা আরও অনেক গভীর। কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি শুধু নয়, বিজ্ঞানের প্রাপ্তিকে নিজেদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত করবার প্রাথমিক ভিত্তি নির্মাণ করতে না পারা দিয়েই এর শুরু। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাহীনতা কিংবা উৎপাদনশীল কাজের সুযোগ সম্প্রসারণে সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি সবগুলো ক্ষেত্রে বর্তমানের নৈরাজ্য কোনো “অসচেতনতা” বা “বিচ্ছিন্ন নীতিমালা”র কারণে হয়নি। এটা হয়েছে এদেশের মানুষের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা লুম্পেন ব্যবস্থা ও শাসকগোষ্ঠীর জন্য। এদেশে যারা শাসন করেন, যারা ক্ষমতাবান, যারা বিত্তশালী তারা এদেশকে ব্যবহার করেন বিত্ত ও ক্ষমতা বানানোর ক্ষেত্র হিসেবে। তাদের ভবিষ্যতের জীবনের জন্য ভিন্ন কোনো অঞ্চল। সেজন্য দ্রুত টাকা বানিয়ে কেটে পড়াই তাদের প্রধান কাজ। একদিকে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় প্রান্তস্থ অবস্থান আর তার সঙ্গে এরকম লুম্পেন এবং শেকড়বিহীন শাসকগোষ্ঠীর অস্তিত্বই এদেশে উৎপাদনশীল ভিত্তির ভয়াবহ দুর্বলতা এবং সেইহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসংলগ্ন, ধ্বংসাত্মক ও নিপীড়নমূলক আরোপনের অন্যতম প্রধান কারণ।
বলাই বাহুল্য, তথ্যপ্রযুক্তি নিজে নিজে কোনো জগতের চেহারা নির্ধারণ করতে পারে না। বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে যে রোবোটিক যান্ত্রিক ভবিষ্যতের চিত্র আমরা দেখি সেটি হচ্ছে এমন একটি জগৎ যেখানে যন্ত্র মানুষের উপর আধিপত্য করে। যন্ত্র মানুষের উপর আধিপত্য করতে পারে তখনই যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী-পুরুষ নিজেরাই খণ্ড খণ্ড নাটবল্টুতে পরিণত হতে বাধ্য হন স্বল্পসংখ্যক অমানুষের আধিপত্যের সম্পর্ক বা ব্যবস্থার কারণে। কিন্তু যদি আবার বিপরীতটি ঘটে, যদি যন্ত্রের উপর মানুষের আধিপত্য তৈরি হয় তাহলে জগতটি খুবই প্রাণবন্ত শিল্পমণ্ডিত হতে পারে। গুটিকয়েক মানুষ নয়, সকল মানুষেরই অবসর তখন অনেক বেড়ে যেতে পারে। একঘেঁয়ে কাজের চাপ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ তখন নিয়োজিত হবেন মননচর্চায়, শিল্পচর্চায় এবং অবশ্যই সৃজনশীল বিজ্ঞানচর্চায়।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির একটা উল্লম্ফন ঘটেছে। এর বিকাশ মানুষের ক্ষমতা ও সুযোগের একটা চিত্র উপস্থিত করে যাতে সকল মানুষের আয়েশবৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ, যোগাযোগ এবং সকল অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সকল অঞ্চলের মানুষের পারস্পরিক আদানপ্রদান বৃদ্ধি এসবই যে সম্ভব তা ধারণা করা
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment