বিপ্লবী কমরেড অমল সেন
আজীবন বিপ্লবী কমরেড অমল সেন পৃথিবী থেকে চলে গেলেন। এক সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনের অবসান ঘটলো। একটি বিপ্লবী জীবনের অবসান ঘটলো। ১৯১৪ সালে নড়াইল জেলার আফরা গ্রামে সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মানুষটি ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমার মনে হলো, একটি যুগের যেন সমাপ্তি ঘটলো। তিনি ছিলেন সেই যুগের কমিউনিস্ট, যে যুগের কমিউনিস্টদের আদর্শ, চরিত্র ও জীবন পদ্ধতি আজকের কমিউনিস্টদের থেকে একেবারেই ভিন্ন ছিল। ব্যক্তিগত স্বার্থ, লোভ- লালসা-চাহিদার উর্ধ্বে উঠে শ্রমজীবী মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে বিপ্লবের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা ছিল তাদের সহজাত ধর্ম। তাদেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ছিলেন কমরেড অমল সেন। সে সময়ের কমরেডদের মধ্যে এখন দু'একজন থাকতে পারেন। কিন্তু তারা কি নতুন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে আছেন? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পদ্ধতি, বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের এজেন্ডা ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়, একথা সত্য। কিন্তু কমরেড অমল সেন বিপ্লবী জীবনের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তার মর্মবস্তুকে যদি আমরা অনুধাবন ও বাস্তবে প্রয়োগ করতে না পারি, তবে সেটা হবে বড় দুঃখজনক। অবিচল আদর্শ নিষ্ঠা, বিপ্লবী দৃঢ়তা, ভিন্ন মতাদর্শের সঙ্গে সামান্যতম আপোস না করা, সর্বোপরি বিপ্লবের স্বার্থে জীবনকে উৎসর্গ করার যে দৃষ্টান্ত তা সমাজ ও পৃথিবীর বহু পরিবর্তন সত্বেও অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে। তাই মনে হয় কমরেড অমল সেনের যেন আরো কিছুদিন সুস্থ দেহে বেঁচে থাকা দরকার ছিল। আমি জানি, এ বড় বাড়তি চাওয়া। নব্বই বছর বেশ দীর্ঘ জীবনই বলতে হবে। প্রকৃতির নিয়ম অলঙ্ঘনীয়। তবু মনে হয়, আজ যখন ভোগবাদী মানসিকতা সর্বত্র পেয়ে বসেছে এবং তার কিছু ছাপ কমিউনিস্ট আন্দোলনেও এসে পড়েছে। তখন বোধহয় আগের চেয়ে বেশি করে প্রয়োজন ছিল কমরেড অমল সেনের। আর ঠিক সেই সময়েই তিনি চলে গেলেন। এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্য এ যে অপূরণীয় ক্ষতি, তা কেবল কথার কথা নয়, মামুলী আনুষ্ঠানিক বিবৃতি নয়, সত্যি আজ বড় বেশি করে প্রয়োজন ছিল কমরেড অমল সেনের।
সামন্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছাত্র হিসাবে তিনি ছিলেন মেধাবী। সে সব তো আমি দেখি নি, তবে পরবর্তী জীবনে তার মেধার যে পরিচয় পেয়েছি রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রে, তাতে ধারণা করতে পারি তিনি আসলেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার অভিভাবকরা ঠিক করেছিলেন, এই ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠানো হবে জার্মানিতে। অমল সেন যদি সেই কিশোর বয়স থেকেই ব্যতিক্রমী চরিত্রের না হতেন, তাহলে হয়তো তিনি জার্মান-ফেরত ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বেশ আরাম আয়েসের জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু যে মানুষ ভিন্ন ধাতুতে গড়া তাকে ঐ সাধারণ বিলাসী জীবন কখনই আকৃষ্ট করতে পারে না, করেও নি। তিনি যখন নবম শ্রেণীর ছাত্র তখনই তিনি কোনো এক সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী দলের সংস্পর্শে আসেন এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আত্মনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী দলটি, আমি যতদূর জেনেছি, যশোর-খুলনা কেন্দ্রিক ছিল, তবে সম্ভবত অনুশীলন সমিতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। দেশপ্রেমের আগুন সেদিন এক কিশোরের মধ্যে জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। তাঁর মধ্যে ছিল স্বাধীনতার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা। আর সশস্ত্র বিপ্লবী সংগ্রামের মানসিক দৃঢ়তা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা অক্ষুণ্ণ ছিল, তবে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল নতুন এক মহান মতবাদ- মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। শুধু ব্রিটিশের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা নয়, গোটা পৃথিবীকে বদলানো, দেশি ও বিদেশি সকল শোষক শ্রেণীকে উৎখাত করে মেহনতী মানুষের মুক্ত রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার এক মহান স্বপ্ন তাঁকে তাড়িত করেছে পরবর্তী জীবনে। তিনি যখন কলেজে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে পড়ছেন, তখনই তিনি এই মতবাদের সংস্পর্শে আসেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এটা ছিল ১৯৩৩ সাল, যখন তাঁর বয়স
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment