প্রয়োজন জাতীয় পুনরুজ্জীবন
এক গভীর ও সর্বব্যাপী সংকটজাল আমাদের দেশকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। জনগণের দৈনন্দিন জীবনে, সামগ্রিক জাতীয় অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে, নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে, সংস্কৃতিতে—সর্বত্রই সংকট, স্থবিরতা ও অবক্ষয়-অধোগতি। মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী সৌভাগ্যবান বাদে সকলেই এই সংকটের জ্বালা কম-বেশি অনুভব করছে। 'উন্নয়নের' নামে যা কিছু হচ্ছে তা মূলত উপরভাসা। এর সামান্যই চুইয়ে এসে পৌঁছতে পারছে আপামর জনগণের কাছে। সিংহভাগ জনগণের অবস্থার যৎসামান্য উন্নতি কিছুটা হয়তো ঘটছে, কিন্তু তার কয়েক'শ গুণ বেশি স্ফীত হচ্ছে মুষ্টিমেয় উপরতলার মানুষের ভাগ্য। শ্রেণী-বৈষম্য ও ধন-বৈষম্য বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এক মহা-কুৎসিত আকার ধারণ করেছে। ব্যাপক জনগণের পেটে লাথি মেরে চলছে বেপরোয়া লুটপাটের মহোৎসব। অর্থনীতির এই হালচাল প্রতিফলিত হয়েছে রাজনীতির রুগ্নতা ও অবক্ষয়ে। এটা ঘটেছে অবধারিতভাবে। কারণ, 'রাজনীতি হল অর্থনীতিরই ঘনীভূত প্রকাশ'। সমাজ দেহের এই পীড়া ও অধোগতি গ্রাস করেছে সামাজিক মনস্তত্ত্ব, সংস্কৃতি ও নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রকেও। মাঝে-মধ্যে অগ্রগতির বজ্রসম ঝলকানি দেখা গেলেও সংকটজাল ও অবক্ষয়ের কলোমেঘ কাটেনি। ফেলে আসা দিনগুলি সম্পর্কে গানের সেই কলিতে প্রকাশিত আক্ষেপ 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...' তাই এখনো সকলের কাছে এতো অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
আসলে একই অবস্থা চলছে বহুযুগ ধরে। একেবারে ঔপনিবেশিক অতীত থেকে। সেসময় থেকে চলে আসা সামাজিক-অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা ও অনগ্রসরতা দূর করার জন্য আমাদের জাতি আজও পর্যন্ত কোনো ধারাবাহিক, বলিষ্ঠ, কার্যকর উদ্যোগ সূচিত করতে পারেনি। একাত্তরের স্বাধীনতার পর চকিত চমকের মতো যে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল, সহসাই তা স্থিমিত হয়ে পরে। পঁচাত্তরের পর তা সম্পূর্ণই নির্বাপিত হয়ে যায়। তার পরবর্তীতে দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় কর্তৃত্ববান হয়ে থাকা সামরিক স্বৈরশাসকদের অনুসৃত অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক নীতি জাতির জীবনে জঞ্জালের স্তূপকে ক্রমাগত বাড়িয়েই তুলেছে। নব্বইয়ের পরে, বর্তমান মহাজোট সরকারসহ চার-চারটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসেছে। মাঝে দু'বছর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও শাসনকাজ পরিচালনা করেছে। কিন্তু, টুকটাক এদিক সেদিক করা ছাড়া কোনো সরকারই অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটায় নি। দেশে চলেছে সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর লুটপাটের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, চলেছে অবাধ খোলা বাজার অর্থনীতির দর্শন, চলেছে ঢালাও বেসরকারীকরণ-বিনিয়ন্ত্রণ-উদারিকরণের নীতি। 'বাজার অর্থনীতি'র পথ ধরে জন্ম নিয়েছে 'বাজার রাজনীতি' এবং তারই অবশ্যম্ভাবী অভিপ্রকাশ হিসেবে রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ ও দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। ফলে উপরভাসা 'উন্নয়নে'র কিছু চাকচিক্য ও তৃণমূলের জন্য তার চুইয়ে পড়া ছিটেফোঁটা ছাড়া সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতি-নৈতিকতা প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই সমস্যা-সঙ্কট ও অবক্ষয়-অধোগতির ধারা ক্রমাগতই গভীরতর হয়ে চলেছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণই হল জাতির সামনে এখন প্রধান কর্তব্য। এজন্য প্রয়োজন এক সার্বিক জাতীয় পুনরুজ্জীবনের ধারার সূচনা করা। দেশের সামনে এটাই এখন মুখ্য ও কেন্দ্রিক এজেন্ডা।
সার্বিক পুনরুজ্জীবনের এই মুখ্য কাজটি কিন্তু খুব সহজসাধ্য ও সরল কোনো ব্যাপার নয়। বস্তুত একদিকে যেমন, সাম্রাজ্যবাদ ও বহুজাতিক কর্পোরেট অর্থশক্তির একচেটিয়া কর্তৃত্বাধীন বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই দুর্বল ও নাজুক এবং অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে অনগ্রসরতা, পশ্চাদপদতা ও বহুমুখী সঙ্কটের ধারা আজ যেরূপ অব্যাহতভাবে বিরাজমান, তাতে জাতীয় পুনরুজ্জীবনের কাজটি এক কঠিন যুদ্ধের সমতুল্য। তাছাড়াও রয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল ও রক্ষণশীল শক্তির প্রবল বাধা ও প্রতিবন্ধকতা। ডুবন্ত জাহাজকে খালি হাতে টেনে তোলার মতো কঠিন এ কাজ। প্রায় অসম্ভব এই কাজকে সম্ভব করার জন্য যা একান্ত প্রয়োজন তা হল, জাতির সব সম্ভাব্য ইতিবাচক শক্তিকে জাতীয় পুনরুজ্জীবনের এই লক্ষ্যে সমবেত করা।
সার্বিক জাতীয় পুনরুজ্জীবনের সম্ভাব্য পথ ও পন্থা কী? এ বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। সেজন্য প্রয়োজন গভীর বিচার বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, আলোচনা-পর্যালোচনা, তর্ক-বিতর্ক-বিশ্লেষণ। এসব বাদ দিয়ে শুধু অতীত নিয়ে নানা অপ্রয়োজনীয় অবান্তর কাদা ছোঁড়াছুড়িতে আটকে পড়ে থাকা অথবা নিছক নেতা-নেত্রী ভজনে বিভোর হয়ে থাকাটা (যা দুঃখজনকভাবে এখনো ক্রমাগতভাবে চলছে।) শুধু কুৎসিত ও
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment