ধনতন্ত্রের ফ্যাসিস্ট মূর্তি
বণিক, শিল্পপতি, মূলধনী—ধনতন্ত্রের তিন মূর্তিরই মোক্ষ হইল মুনাফার রাজত্ব বিস্তারে। কিন্তু ইহার বাধাও অনেক। প্রথমত ধনতন্ত্রের ভিতরে ধনিক গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে বিরোধ থাকে। সকল দেশের ধনতন্ত্রের উন্নতি সমান তালে চলে না। কাজেই কোনো কোনো দেশের ধনিকগোষ্ঠী মুনাফা শিকারের প্রতিযোগিতায় পিছনে পড়িয়া থাকে। ইহাদের অগ্রগতির বাধা দু’দিকে। প্রথমত, শোষণের বিরুদ্ধে নিঃস্ব মজুরশ্রেণীর প্রতিবাদ, বিদ্রোহ এবং সংঘবদ্ধ প্রতিরোধশক্তি বাড়িতে থাকে। দ্বিতীয়ত, অন্য দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ধনিকগোষ্ঠীর দুনিয়ার ব্যবসার বাজার দখল করিয়া ফেলিতে থাকে। ধনতন্ত্রের এই সংকটে-দেশে দেশে ধনিকগোষ্ঠীগুলির মধ্যে দুনিয়ার বাজার ভাগবাটোয়ারা নিয়া-কাড়াকাড়ি মারামারি শুরু হয়। জাপানের মাঞ্চুরিয়া দখল, ইটালির আবিসিনিয়া দখল, নাৎসি জার্মানির উপনিবেশ দাবি এই সকলই নিজেদের দেশের ধনিক-গোষ্ঠীর মুনাফা শিকারের পথ পরিষ্কারের জন্য। কিন্তু অন্য দেশের ধনিকেরা যাহারা দুনিয়ার বাজার ভাগবাটোয়ারা করিয়া নিয়াছে, তাহারাও চুপ করিয়া থাকে না। কাজেই দেখা দেয় ধনতন্ত্রের অন্তর্বিরোধ, সংকট, প্রতিযোগিতা, যুদ্ধবিগ্রহ। কোনো দেশের ধনতন্ত্র যখন এইরূপ সংকটে ভাঙিয়া পড়িতে থাকে তখন দেখা দেয় ধনতন্ত্রের ফ্যাসিস্ট মূর্তি। ধনিকেরা প্রথমে চেষ্টা করে দেশের শোষণব্যবস্থাকে শক্তভাবে চালু রাখিতে। সেজন্য দরকার হয় শোষণের বিরুদ্ধে সমস্ত রকম প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করা। ছল-চাতুরি, গুণ্ডামী ও নিষ্ঠুর জুলুমবাজী দ্বারা ধনিকগোষ্ঠীগুলি শোষিত শ্রেণীগুলিকে দাবাইয়া ফেলে। দীর্ঘ শ্রেণীসংগ্রামের মধ্য দিয়া নিঃস্ব মজুরশ্রেণী যে সকল গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করিয়াছিল, তাহা সমস্তই কাড়িয়া নেওয়া হয়। এইভাবে শোষণব্যবস্থার সংকট দূর করিবার জন্য ধনিকেরা গণতন্ত্রের স্থানে নির্মম জুলুমতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। বন্দোবস্তে শোষিত শ্রেণীগুলি হুকুম তামিলের কলে পরিণত হয়। যেখানেই ধনতন্ত্রের সংকট চরমে পৌঁছায়, সেখানেই ধনিকেরা গণতন্ত্রের মুখোশ ফেলিয়া দিরা জনসাধারণকে মুনাফা শিকারযন্ত্রের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া ফেলিতে চেষ্টা, করে। একদিকে দেশের ভিতরে নির্জলা জুলুমতন্ত্র চালু করিয়া শোষণব্যবস্থা, শক্ত করা হয়, অন্য দিকে বিদেশের ধনিকগোষ্ঠীর সঙ্গে বাজার দখলের লড়াই করিবার জন্য প্রস্তুতি চলিতে থাকে। ফ্যাসিজমের চেষ্টা হয় পররাজ্য দখল এবং বিজিত দেশগুলিতে ফ্যাসিস্ট পদ্ধতিতে শোষণব্যবস্থা প্রচলন করা। সাম্রাজ্যবাদের মতো ফ্যাসিজমও দুনিয়ার বাজার দখল করিতে অভিযান শুরু করে।
এক হিসাবে ফ্যাসিজম হইল ধনতন্ত্রের চূড়ান্ত পরিণতি। যন্ত্র এবং মজুর-শোষণের অবাধ বন্দোবস্ত হইল ফ্যাসিজম। জার্মানিতে নাৎসি দলের যখন উন্নতির শুরু, তখন মূলধনী ও শিল্পপতিরা নাৎসিদের সমর্থনে প্রচুর টাকা ঢালিয়েছে। যুদ্ধ বাধিবার পূর্ব পর্যন্ত দেশ-বিদেশের ধনিকগোষ্ঠীরা নাৎসিদের কায়দা-কৌশলকে বাহবা দিয়াছে। যদিও অন্য দেশের ধনিকগোষ্ঠীদের ভয়ের কারণ ছিল, নাৎসিরা জার্মানিতে ক্ষমতা দখল করিলে দুনিয়ার বাজার দখলের জন্য হাত বাড়াইবে ইহা জানাই ছিল। তবুও অন্য দেশের ধনিকেরা অবাধ মজুর-শোষণের নূতন নাৎসি কায়দা দেখিয়া গদগদ হইয়াছিল। নাৎসি কায়দা নকল করিবার ইচ্ছা এক কথা; কিন্তু তাই বলিয়া নাৎসিদের দুনিয়া দখলের প্ল্যান মানিয়া নিতে অন্য দেশের ধনিকগোষ্ঠীগুলি সহজে রাজী হইবে কেন? ইহা ছাড়া অন্যান্য ধনতান্ত্রিক দেশে, যেমন ইংলণ্ড ও আমেরিকাতে সাম্রাজবাদের যুগেও সাধারণ মানুষদের কতকগুলি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী ছিল। নাৎসি নববিধানের সঙ্গে এই গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ধরনধারণ, দৃষ্টিভঙ্গির আকাশ-পাতাল প্রভেদ। কাজেই ফ্যাসিজমের সঙ্গে সাবেকী ধনতন্ত্রগুলির সংঘর্ষ ঘটিল দুই কারণে। একটি স্বার্থগত, অন্যটি আদর্শগত অন্য দেশের ধনিকগোষ্ঠীগুলি শেষ পর্যন্ত নাৎসিদের দুনিয়া দখলের প্ল্যান ভয়ের চোখে দেখিল। আবার এইসব দেশের জনসাধারণ নাৎসি নববিধানে ধনতন্ত্রের চরম পাশবিক ব্যবস্থাকে প্রতিরোধ করিতে দৃঢ় সংকল্প নিল। ধনিকগোষ্ঠীর সংকীর্ণ স্বার্থ এবং দুনিয়ার জনগণের স্বার্থ দুই-ই ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধশক্তি প্রবল করিল।
ইহা ছাড়াও নাৎসি ফ্যাসিস্টতন্ত্রের আর একটি দুর্দমনীয় শত্রু আছে। ফ্যাসিজমের লক্ষ্য হইল সারা পৃথিবীতে শোষিত শ্রেণীগুলিকে চিরকালের মতো গোলামে পরিণত করিয়া ধনিক-রাজ চিরস্থায়ী করা। পৃথিবীর এক প্রান্তেও যদি কোথায়ও শোষিত জনসাধারণের স্বাধীনতা থাকে, তাহা হইলেই ফ্যাসিজমের বিপদ কারণ কোনোখানে যদি শোষিত জনগণের স্বাধীনতা-লাভের বিন্দুমাত্র আশা, প্রেরণা বা সুযোগ থাকে—তাহা
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment