ফ্যাসিবাদ ও বিপ্লব
লেনিন বহুকাল আগে বলেছিলেন, পৃথিবীর শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন যে ভুলভ্রান্তি করে তার একটি কারণ হল নবাগত দলভুক্তদের প্রশিক্ষণ না-দেওয়া। বিপ্লবী আন্দোলনের মধ্যে নতুন নতুন যেসব প্রজাতি আসে তাদের যদি সেই আন্দোলনের বিপ্লবী অভিজ্ঞতার তত্ত্বগত বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ করা না-হয়, তাহলে এই নবাগত শক্তিগুলি প্রায়শই পুরনো ভুলগুলি করে থাকে। আন্দোলনে যারা কিছুটা প্রবীণতর, তাঁদের অবশ্য তরুণদের প্রতি অভিভাবকসুলভ সদয় দাক্ষিণ্যের মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়; আবার সেই সঙ্গে তাঁদের এটাও ধরে নেওয়া উচিত নয় যে তাঁরা যা জানেন, তরুণরাও তা জানেন।
আমার মনে হয়, ফ্যাসিবাদের ব্যাপারে কমিউনিস্ট ও অন্যান্য বামপন্থী শক্তির ক্ষেত্রে কথাটা বিশেষভাবে সত্য। যারা ১৯৩০-এর দশক থেকে আন্দোলনে আছেন এবং যারা ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি আন্দোলনে এসেছেন তাঁদের সকলের মনেই ফ্যাসিবাদ এমন স্বতঃস্ফূর্ত বীভৎসতা ও প্রচণ্ড প্রতিরোধের উদ্রেক করে, যা তিন-চার দশক বাদে আজও তাজা এবং সজীব। এঁদের মনে সমান সুস্পষ্ট অন্যান্য যেসব স্মৃতি জাগে, তার একটি হল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের লাইন—আগস্ট ১৯৩৫-এ অনুষ্ঠিত কমিনটার্নের সপ্তম কংগ্রেসে প্রদত্ত রিপোর্টে ডিমিট্রভ যে-লাইন চমৎকার স্বচ্ছতার সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন। সে সময়ে যাঁরা কমিউনিস্ট ও বামপন্থী আন্দোলনের মধ্যে ছিলেন, এই রিপোর্ট তাদের চৈতন্যেরই অংশ হয়ে রয়েছে। তাঁদের মনে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই যে ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতেই হবে এবং তাকে পরাস্ত করা যায় একমাত্র অতি ব্যাপক এক যুক্তফ্রন্ট গড়ে তুলে—যে ফ্রন্ট উদারপন্থী বুর্জোয়া গণতন্ত্রী পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রসঙ্গত, সেই কারণেই সিপিএম নেতৃত্ব এমন একটা সংকটে পড়েছেন। এমন কি তাঁদের অনেকের কাছেই সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে প্রয়াসী লোকজনের সাহচর্যে নিজেদের কল্পনা করাটা নিতান্তই বিতৃষ্ণাজনক। সেই কারণেই, সিপিএম নেতৃত্বের মধ্যে যাঁরা জয়প্রকাশ পরিচালিত আন্দোলনে তাঁদের পার্টিকে প্রায় লীন করে ফেলছেন তাঁরা পর্যন্ত তা করছেন এই যুক্তিতে যে এই আন্দোলনের একটা ‘গণতান্ত্রিক সারবস্তু’ আছে, কারণ তা ‘আধা ফ্যাসিস্ত’ ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে চালিত!
কিন্তু ১৯৭০-এর দশকে যাঁরা কমিউনিস্ট ও বামপন্থী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সেই লক্ষ লক্ষ নতুন লোকেরা কি এই ধরনের প্রায়-সহজাত দৃষ্টিভঙ্গির অংশীদার? তাঁরা কি জানেন ফ্যাসিবাদ কী? কিংবা তার বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করা হয়েছিল? কিংবা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট কিভাবে সারা পৃথিবীতে বিপ্লবী শক্তিগুলির অগ্রগতিকে সহজতর করেছিল? দুর্ভাগ্যবশত, জানেন না। সেটা মোটেই তাঁদের দোষ নয়। এ দোষ আমার মতো লোকেদের এবং এখনও যারা আন্দোলনে আছেন তাঁদের—এ ব্যাপারে নবাগতদের শিক্ষিত করার জন্য তাঁরা যথেষ্ট করেননি।
লেনিন ১৯০২ সালে তাঁর অমর রচনা ‘কী করতে হবে?’-তে স্বতঃস্ফূর্ততার এই রোগের বিরুদ্ধেই তীব্র আক্রমণ চালিয়েছিলেন। তরুণতর বিপ্লবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং নিজে থেকে ফ্যাসিবাদের সামাজিক সারমর্ম বুঝতে সক্ষম হবেন না, কিংবা তার বিরুদ্ধে কিভাবে লড়তে হবে তাও বুঝতে পারবেন না।
বাম-ঘেঁষা ছাত্রদের সঙ্গে কথাবার্তা ও তর্কবিতর্ক থেকে কিছুটা যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে বর্তমান প্রবন্ধে বিবেচ্য কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছতা থাকা দরকার।
প্রথম, ফ্যাসিবাদ কী? এর শ্রেণীগত সারমর্ম হল—এক প্রকাশ্য সন্ত্রাসমূলক একনায়কতন্ত্রী ধরনে একচেটিয়া পুঁজির সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, সবচেয়ে উগ্র জাত্যভিমানী ও সবচেয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির শাসন। পুঁজিপতিশ্রেণীর সমস্ত শক্তির শাসন তা নয়, এমন কি সমস্ত একচেটিয়া পুঁজিপতির শাসনও নয়, এ হল তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলির শাসন।
তার শাসনের ধরন তার শ্রেণীগত সারমর্মের সঙ্গে সংহতি রেখে চলে। এটা নেহাৎ একটা বুর্জোয়া সরকারকে আরেকটা বুর্জোয়া সরকারে বদলানোর ব্যাপার নয়। এ হল বুর্জোয়াশ্রেণীর শাসনের ধরনের ক্ষেত্রে এক গুণগত পরিবর্তন, বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থেকে সন্ত্রাসমূলক একনায়কতন্ত্রী পদ্ধতিতে পরিবর্তন।
সুতরাং, এটা হল বিপ্লবের নিকৃষ্টতম শত্রুদের শাসন এবং এমন ধরনের শাসন যা বিপ্লবী শক্তিগুলির অগ্রগতির দৃষ্টিকোণ থেকে নিকৃষ্টতম।
তার অর্থ এই যে সকল দেশে এবং সকল
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment