আজি এই পূণ্য দিনে

গাঁয়ের কিসান

কি গাহিব গান—

নাই ভাষা

দৈন্য হতাশায়

মন ম্রিয়মান।

হয়ত বা কেহ কেহ

বসি নিজে চৌতালের ‘পরে

গর্ব করে

শিখিয়াছি রবীন্দ্রের গীতি

গাই নিতি

বেহাগ খাম্বাজ ও ভৈরবী

নানাবিধ সুরে।

হয়ত বা দু’একটি পল্লীর গান

কাকডাকা সুরে

আমিও দিয়াছি টান

লোক দেখানোর তরে,

সে-সুর বেসুর বাজে

পৌঁছে নাই সবার অন্তরে।

ভেঙ্গে গেছে মানুষের মন

ভেঙ্গে গেছে কুঁড়ে ঘর

কামার ছেড়েছে গ্ৰাম

গুটায়ে হাপর,

জেলে কাঁদে জাল নাই

তাঁতী ব'সে গুটাইয়া তাঁত

এদের কান্নার সুরে

কেবা করে কর্ণপাত।

অজ্ঞতায় অন্ধকারে আছি

কোটি কোটি পুরুষ রমণী

কেউ দেয় নাই জানি

তব বাণী—

দীপশিখা খানি

এদের সম্মুখে আনি

হে কবি

তোমার সোনার মাঠে কে কাটিবে ধান

কে গাহিবে গান

কেউ রুগ্ন শুয়ে আছে

কেউ গ্রাম ছেড়ে গেছে

কেউ ত্যজিয়াছে প্রাণ

তোমার মাঠের রাজা

মরেছে কিসান।

হঠাৎ তোমার ডাক

কোন ফাঁকে পশিয়াছে কানে,

‘ভয় নাই ওরে ভয় নাই

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান

ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই—’

তাই দলে দলে

যারা বেঁচে আছে

তারা চলে।

তারা দল বেঁধে আসে

দল বেঁধে যায়

দল বেঁধে হাসে

দল বেঁধে গায়

ভাঙ্গা পরিবার

আবার গড়িতে চায়।

এদের অস্পষ্ট বুলি

কেউ বুঝে কেউ বুঝে না

কেউ শুনে কেউ শুনে না

গাঁয়ের বারতা

এদের প্রাণের কথা,

তবু বারে বারে

ওরা বলে মানুষেরে—

ঘুচাও মোদের ব্যথা

ওগো দাও অধিকার

মানুষের মত

বেঁচে থাকিবার।

[এ কবিতাটির রচয়িতা ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জের একজন পল্লী কবি। পল্লীর সাধারণের সুখদুঃখের কথাই তিনি তাদের মত করে গাথায় ছড়ায় গাইতেন, সাহিত্যিক বচনা ও কবিতার সঙ্গে তাঁর প্রায় সম্পর্কই ছিল না। কিন্তু তাঁর ছড়া গান পল্লী অঞ্চলের কৃষক ও জনসাধারণের প্রিয় হয়ে ওঠে। মাত্র বৎসর দুই পূর্বে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতার সঙ্গে পরিচিত হন—ভারতীয় গণনাট্য-সঙ্ঘে শম্ভু মিত্রের মুখে ময়মনসিংহে কবিতাপাঠ শুনে তাঁর স্বাভাবিক রসবোধ জাগ্রত হয়। পল্লীকবি দৃষ্টিতে ও সৃষ্টিতে অগ্রসর হ'য়ে এসেছেন, সাহিত্যিকসমাজ

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion