অতীত আর ভবিষ্যৎ

মস্কো যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল যে, (১) কাজাকস্থানের তেশিক্‌তাশ্‌ এলাকায় নিয়েনডারথাল মানুষের যে কঙ্কাল ও পাথরের প্রাগৈতিহাসিক যন্ত্রপাতি বেরিয়েছে সেগুলি দেখব ; (২) সোবিয়েত রুশ ও মধ্য এশিয়ার সোবিয়েতে প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ; এবং (৩) ঐ সব অঞ্চলে শ্রমিকমঙ্গলের ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করব : (৪) লেনিনের সমাধিগৃহে শ্রদ্ধানিবেদন করব। মধ্য এশিয়া যাওয়া কেন হল না, তা আগেই লিখেছি। যে ন'দিন মস্কোতে ছিলাম, বাকি কাজগুলি সম্পন্ন হয়েছিল। সে বিষয়ে কিছু বলার আগে, একটি জিনিস—যেটি মস্কো যাত্রার শুরু থেকে নজরে এসেছিল, সেটির উল্লেখ করব। প্রাগ থেকে মস্কো উড়োজাহাজ যায় সোবিয়েত দেশে। প্লেন-ছাড়ার বন্দরে ঢুকলেই চোখে পড়ে নানা ভাষায় লেখা— “সোবিয়েত দেশের অতীত ইতিহাস গৌরবময় ; আমরা ভবিষ্যতকে উজ্জ্বলতর করব।” “শান্তিই মানুষকে সংস্কৃতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।” “সংস্কৃতির অধিকার সাধারণ মানুষ মাত্রেরই আছে।”

মস্কোর বড় হোটেলে, প্রেক্ষাগৃহে, ভুগর্ভস্থ “মেট্রো” যাত্রীবাহী গাড়িগুলির সুসজ্জিত বিরামস্থানে, প্রাথমিক ও উচ্চ শিক্ষায়তনে, সব জায়গাতেই এই শান্তির আবশ্যকতার উপর ঝোঁক দেওয়া লেখা, আলোচনা ও বিবৃতি। লেনিনের স্মৃতিগৃহে (মিউজিয়াম) পরিদর্শয়িকারা বিশেষ করে সমস্ত দর্শককে লেনিনের লেখা শান্তির বিশেষ আবশ্যকতার উপর প্রবন্ধটি শুনিয়ে ব্যাখ্যা করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে এর পিছনে রাষ্ট্রের কর্ণধার স্তালিনের সমর্থনও নির্দেশ করেন। সমস্ত জাতের ছেলে বুড়ো সকলকে শান্তি সম্বন্ধে এতবার বলা ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য তার মূল্য বিশদভাবে বোঝানো এবং সোবিয়েত রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধেয় লোকদের বাণীদ্বারা তার সমর্থন করা-এর একমাত্র ফল হবে সমস্ত জাতিকে শান্তিপ্রিয় ও শান্তিকামী করা। কোনও কোনও অবিশ্বাসী লোকে এই শান্তির ওপর ঝোঁককে 'রাজনৈতিক প্রচার’ বলে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু যে 'প্রচারের' ফলে সমস্ত জাতির শান্তির পথ গ্রহণ করা অনিবার্য, তাকে অত্যন্ত কার্যকরী এবং ঐ উদ্দেশ্য (শান্তিকামী করা) মূলক প্রচার বলেই মেনে নিতে হয়। তথ্য ও যুক্তির ফলে এই সিদ্ধান্ত ভিন্ন অন্য কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছান যায় না। সোবিয়েত দেশের মানুষ যে লড়তে জানে এবং দেশের ও মানুষের মঙ্গলের জন্য অকাতরে আত্মদান করতে পারে, তা বিগত মহাযুদ্ধে তারা দেখিয়েছে। কিন্তু তারা যুদ্ধ চায় না ; চায় মানুষের উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের পথে এগোতে।

শিক্ষার আয়োজন

সোবিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত দেশগুলিতেই নিরক্ষরতা এখন দূর হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষার ব্যবস্থা এখন সর্বত্র একই সাধারণ ছাঁচে ঢালা ; কেবল মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যম বলে, এবং বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দরুন পড়ার বই-এর ভাষা এবং আধ্যেয়, এই দুই-এতে তফাত আছে। পশ্চিম  ইওরোপের ধনবাদী রাষ্ট্রের মতো এখানেও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বয়স হচ্ছে সাত হতে তেরো বৎসর। তবে সুদূর এশিয়া ভূখণ্ডে কোন কোনও যায়গায় এখনও বয়সের সীমা কিছু কম আছে। গত মহাযুদ্ধের ক্ষতির ফলে শিক্ষার প্রসারে এর পরের ধাপ নেওয়া এতদিন এদেশে সম্ভব হয় নাই। আগামী চার বৎসরের মধ্যে সোবিয়েত মণ্ডলীর সমস্ত বড় শহরে এবং তারপরের পাঁচ বৎসরে সমস্ত দেশে দশ বৎসর শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত সোবিয়েত রুশদেশে শিক্ষার সাংঘাতিক ক্ষতি হয়, ঐ দেশের সংস্কৃতি লোপের জন্য নাৎসীদের ধ্বংসতাণ্ডবের ফলে। সে ক্ষতি সামলে নিতে এদের প্রায় চার বৎসর লাগে ৷ এই ন'বছর এদেশের শিক্ষার অগ্রগতি এইভাবে বাধা পাওয়াতে দশ বৎসর বাধ্যতামূলক শিক্ষা সর্বত্র প্রসারের পরিকল্পনা কিছ, বিলম্বে নিতে হয়েছে।

এখানে মনে রাখতে হ'বে যে ১৯১৭ সালে জারের শাসিত সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শিক্ষার মান কত নিচে ছিল। জারের আমলের সরকারী গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে বিপ্লবের ঠিক আগে রাশিয়াতে শতকরা মাত্র ১৮ জন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ছিল। এশিয়া ভূখণ্ডে ঔপনিবেশিক রুশ সাম্রাজ্য কোথাও শতকরা ২ জন, কোথাও ১ জন, কোথাও বা তার চেয়েও কম

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion