মধ্যযুগ ও ভারতীয় বাণিজ্য
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আমলে ভারতের সঙ্গে বহির্জগতের যে যোগাযোগ ঘটেছিল, তার বিবরণ অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। বিজয়নগরের গৌরব অস্তমিত হল তালিকোটার যুদ্ধক্ষেত্রে। এ শুধু তারই শোচনীয় পরাজয় নয়। দাক্ষিণাত্যের শেষ হিন্দু স্বাধীন ও সমৃদ্ধতম রাষ্ট্রের অবসান। কিন্তু প্রশ্নটা শুধু হিন্দু-মসলিমের রাষ্ট্রদ্বন্দ্ব নয়। অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাতও তার মধ্যে জড়িত রয়েছে। দক্ষিণাপথের সম্মিলিত সুলতানদের কাছে রাম রায় যখন পরাস্ত ও নিহত হলেন, তখন সমগ্র রাজ্যের ওপর দিয়ে যে অত্যাচার, রক্তপাত ও নিষ্ঠুর লুণ্ঠন-লীলা চলেছিল পাঁচ মাস ধরে, তার বর্ণনা ও নির্ভরযোগ্য কাহিনী পাওয়া যাবে ব্যরহান-ই-মাসির নামক ইতিবৃত্তে এবং সিউয়েল সাহেবের প্রসিদ্ধ ইতিহাস-গ্রন্থে। বিজয়নগরের পতন দাক্ষিণাত্যে মুসলিম রাষ্ট্রশক্তির দ্রুত বিস্তার সহজ করে দেয়। আর উত্তর-ভারতেও তখন মোগল-আফগান দ্বন্দ্বের অবসান হয়ে মোগল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও দখল পাকা হয়েছে। মোগল সম্রাটদের আমলে ভারত ও বাহির্জগতের সংস্পর্শ সে-যুগের ইওরোপীয় পর্যটকদের কাহিনীতে পরিষ্কারভাবেই লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু এই দুই যুগের মধ্যকালে অর্থাৎ প্রাক্-মোগল যুগে, ভারতের ভিতরকার অবস্থা এবং বাইরের জগতের সঙ্গে তার বাণিজ্য-বিনিময় এবং যোগাযোগ—এক কথায় এই রাষ্ট্রীয় ভাগ্য-বিবর্তন আর সমগ্র ভারতে একটি নিশ্চিত কেন্দ্রশক্তির প্রতিষ্ঠার মধ্যবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিদেশীর সংস্পর্শে তার লাভ-লোকসানের ইতিহাসের সঙ্গে একটা মোটামুটি পরিচয় থাকা দরকার। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি যে, এ-যুগের সমাজ ও অর্থনীতির একটি সম্পূর্ণ, সুসংবদ্ধ কাহিনী উদ্ধার করা কঠিন কাজ। কারণ, এটা ফিউডাল অর্থাৎ সামন্ততন্ত্রের যুগ। উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে ও পশ্চিমে তখন বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজ্য এবং একাধিক অর্ধ-স্বাধীন সামন্ত-রাষ্ট্র। এ-স্থলে সমগ্র সমাজ এবং অর্থনীতির কোনোও সম্পূর্ণ চিত্র পরিস্ফুট হতে পারে না।
তবু সৌভাগ্যক্রমে নানা ঐতিহাসিক উপকরণ প্রক্ষিপ্ত হয়ে আছে। মুসলমান লেখকদের রচিত কাহিনী, বিদেশী পর্যটকদের বিবরণ আর আবিষ্কৃত বহু, মুদ্রা প্রভৃতি উপাদান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা অসম্ভব নয়। জিয়াউদ্দীন বরানী, সাম্স-ই-সিরাজ, ফেরিস্তা প্রমুখ মসলিম লিপিকার, সুলতান ফিরোজ শাহের আত্মচরিত, মূলতানী রচিত মনসাত্-ই-মাহর, সরহিন্দি প্রণীত তারিখ-ই-মুবারক সাহি, আমির খসরুর তুঘলক-নামা বদাওনি, বাবরের স্মৃতিকথা ‘তুজাক’, আফ্রিকান পর্যটক ইবনে বতুতা, রাশিয়ান ভ্রমণচারী নিকিটিন এবং মৌহান, বার্থেমা ও বার্বোসা প্রভৃতি ইওরোপীয় অতিথিদের লিখিত বিবরণ থেকে যে-সব মাল-মশলা পাওয়া যায়, তার ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। তবে তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যায় বিদেশীর চোখে দেশের ভিতরকার ছবি যেন আরও পরিষ্কার। রাজসভার আড়ম্বর এবং ঐশ্বর্যের পাশাপাশি দেশের জনসাধারণের দৈন্য-দূর্দশার কথাও তাঁরা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপে বাহ্মনী-রাজ তৃতীয় মহম্মদ শাহের রাজত্বকালে রাশিয়ান পর্যটক নিকিটিনের তীক্ষ্ণ-দৃষ্টিসম্পন্ন বিবরণের উল্লেখ করা যেতে পারে। অথচ ঐ-যুগের মুসলমান ইতিবৃত্ত-লেখকরা অধিকাংশই রাজবংশের গুণাবলী আর যুদ্ধ-তালিকা এবং বিজয়কীর্তির কথাই সগৌরবে ঘোষণা করেছেন। ইচ্ছায় হোক অথবা অনিচ্ছায় হোক, দেশের প্রকৃত ইতিহাস অর্থাৎ মানুষ ও মাটির কথা তাঁরা এড়িয়ে গেছেন।
সে যাই হোক, এ-সময়ে ভারতের সঙ্গে বাইরের চিরদিনের যোগ অক্ষুণ্ণ হয়নি। বাণিজ্যের সূত্র ধরেই বহির্জগতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক—এ-তথ্যটি পুরাতন হলেও পুনরুক্তির প্রয়োজন। একদিক থেকে যেমন দুর্ধর্ষ আক্রমণকারী মধ্য-এশিয়া থেকে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে হানা দিয়েছে, তৈমুর লঙ ও তুর্কী-চাঘতাই দলপতি ভারতে প্রবেশ করে অবাধ লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে, অপরদিকে তেমনি ট্রান্স-অক্সিয়ানা, বোখারা, সমরকন্দ, ফারগনা, কাবুল, পারস্য, আরব, মিশর, এমন কি পূর্বে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সহিত ভারতের যোগাযোগ ঘটেছে। বিদেশীর আক্রমণ ধ্বংসমূলক বলেই সামরিক সংস্পর্শের ফল ইতিহাসবিশ্রুত হলেও সাময়িক মাত্র। আর ব্যবসায়িক যোগাযোগ দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছে, তাই তার ফলাফল সুদূরপ্রসারী। এছাড়া ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত বহু বিদেশী ভাগ্যসন্ধানী ভারতে এসে বসবাস করেছে এবং কালক্রমে তুর্কী শাসক-সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আরবী, হাব্সী, পাঠান, মিশরী, ইরানী, এমন কি যবদ্বীপ ও মালয়-অঞ্চলের একাধিক ব্যবসায়ী ও কারু শিল্পী ভারত-অধিবাসীদের পর্যায়ভুক্ত হয়ে গেছে। অর্থ ও প্রতিপত্তি
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment