পাকিস্তানে বাংলা
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ‘ইষ্ট (পূৰ্ব্ব) পাকিস্তান’ নাম পরিবর্ত্তন করিয়া ‘পূর্ব্ব বাংলা’ বা শুধু ‘বাংলা’ করিবার প্রস্তাব আসিয়াছে। যদি ইহা শেষ পর্য্যন্ত সম্ভব হইয়া উঠে, এবং যাহার সম্ভাবনা সমধিক, তাহা হইলে কেবল পূৰ্ব্ব বা পশ্চিম নহে, যেখানে যত বাঙ্গালী আছে সকলেই গৰ্ব্বানুভব করিবে। পাকিস্তানের অন্যতর জাতীয় ভাষা (উর্দুর সঙ্গে সমপর্যায়ে) বাংলা নিজ উৎসের সন্ধান এবং পুনর্বাসনে উৎফুল্ল হইয়া নিজ মহিমায় ফুটিয়া উঠিবার শক্তিলাভ করিবে। একদিন ইহা যে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হইয়া উঠিবে না তাহাই বা কে বলিতে পারে? সপত্নী উদ্দুর শিরঃ-পীড়ার কথা পরে আলোচনা করিতেছি।
আয়ূব খাঁনের পর (মেজর জেনারেল আঘা মহম্মদ) ইয়াইয়া খাঁন ১৯৬৯ মার্চ্চ ২৫-এ পাকিস্তানের ডিক্টেটর বা হর্তাকর্তা হইয়া মসনদ আরোহণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক শাসন (martial law) প্রবর্তিত হইয়া গেল। রাজ্যশাসন সম্বন্ধে বিশেষ কোনো আলোচনার স্থান ইহা নহে, তবে তিনি যে রাষ্ট্রনৈতিক বা সাংবিধানিক পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়াছেন তাহাতে (পূৰ্ব্ব) বাংলার অবস্থা কি দাঁড়াইতে পারে সংক্ষেপে সে বিষয় আলোচনার ক্ষেত্র উদ্ভুত হইয়াছে।
ডোমিনিয়ণ (ব্রিটিশ উপনিবেশিক) শাসন হইতে পাকিস্তান ইসলামিক গণতন্ত্র (Islamic Republic) রূপে ১৯৫৬ মার্চ্চ ২৩-এ আত্মপ্রকাশ করে। আয়তন ৩, ৬৫, ৫২৯ বর্গমাইল, লোক সংখ্যা (১৯৫১) ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ। বহওয়াশপুর ও খয়েরপুর যুক্ত হইয়া আরও ৫০/৫২ লক্ষ বাড়িয়াছে৷ নুতন সংবিধান প্রচলিত হইবার পূর্ব্ব পর্য্যন্ত ইংরেজ আমলের প্রদেশ বিভাগ মানিয়া শাসন কাৰ্য্য পরিচালিত হইয়াছে। বন্ধনীর মধ্যে জনসংখ্যা হিসাবে ইহারা ছিল, পাঞ্জাব (১ কোটি ৫৭ লক্ষ), উঃ পঃ সীমান্ত প্রদেশ (৩০.৪ লক্ষ) সিন্ধু (৪৫.৩ লক্ষ) বালুচিস্থান (৫ লক্ষ)—আর ইহাদের সম্মিলিত জন সংখ্যা ২ কোটি ৩৮ লক্ষ৷ আর এক ইষ্ট পাকিস্তানের ছিল ৪ কোটি ১৮ লক্ষ। অর্থাৎ অপর সব কয়টি প্রদেশের সম্মিলিত সংখ্যা অপেক্ষা ১ কোটি ৬২ লক্ষ জন বেশী।
পাকিস্তানের কুটনীতিজ্ঞরা সহজেই বুঝিতে পারেন যে জনসংখ্যার শক্তিতে সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান পূৰ্ব্ব বাংলার পিছনে পড়ে৷ আয়তন হিসাবে পশ্চিম পাকিস্তান অনেকটা বড়,—৩, ১০, ৪১৩ বর্গ মাইল সেখানে পূর্ব্ব বাংলার মাত্র ৫৫, ১২৬। দুই প্রান্তের দুই অংশের দ্বন্দ্ব সম্ভাবনা রহিত করিবার এবং পূর্বাঞ্চলের সামনে এক অবিভক্ত প্রচণ্ড শক্তির মূল্য প্রচারের জন্য পূর্ব্ব বাঙ্গলা যেমন একটি সম্পৃক্ত অঞ্চল, পশ্চিম পাকিস্তান সেই ভাবে এক ইউনিটে পরিবর্তিত হইল৷
পুর্ব্ব বাঙলার জোড়াতালি প্রয়োজন হইল না। কেবল “বাঙালী” লইয়া চারটি ডিভিশন (division) বলিয়া প্রচারিত হইল, যথা (১) ঢাকা, (২) চট্টগ্রাম (৩) রাজসাহী, (৪) খুলনা। ১৯৬১ সালের সেন্সাস মতে ইহাদের অধিবাসী সংখ্যা ৫ কোটি ৮ লক্ষ ৪০ হাজার৷
পশ্চিম পাকিস্তান ৪ কোটি ২১ লক্ষ অধিবাসী লইয়া দ্বাদশ বিভাগে ‘একত্রীভূত' বা এক ইউনিট নিম্নরূপে গঠিত হয়:
রাষ্ট্রীয় বিভাগ | বৰ্গ মাইল | জন সংখ্যা (হাজার) |
পেশোয়ার | ২৮,১৫৩ | ৫৩,৭২ |
ডেঃ ইসমাইলখা | ১১, ১৩০ | ১২,০৬ |
রাওয়ালপিণ্ডি | ১১,২০৬ | ৩১,৭১ |
সারগোধা | ১৭, ০১৫ | ৫৯,৭৭ |
লাহোর | ৮,৯০৭ | ৬৪,৪১ |
মুলতান | ২৪,৮২৬ | ৫৬, ০৩ |
বহওয়ালপুর | ১৭,৫০৮ | ২৫,৭৮ |
খয়েরপুর | ২০,৭৯৩ | ৩১,৩৪ |
হায়দারাবাদ | ৩৬,৮২১ | ৩২,৯১ |
কোয়েটা | ৫৩, ১১৫ | ৬,৩০ |
কালাট | ৭২,৯৪৪ | ৫, ৩১ |
করাচী | ৮,৪০৫ | ২১,৩৫ |
ইহার মধ্যে পাঞ্জাবী রহিয়াছে ২ কোটি ৩০ লক্ষ। ১৯৬১ সেন্সেস মতে সমগ্র পাকিস্তানের জন সংখ্যা ৯ কোটি ৩৭ লক্ষ৷ পাকিস্তানের প্রথমাবস্থায় পাঞ্জাবী ছিল ১ কোটি ৫৭ লক্ষ অর্থাৎ ইষ্ট পাকিস্তানের অনেক পিছনে৷ ব্যবহার ক্ষেত্রে দেখা গেল এই পাঞ্জাব, পশ্চিম-পূৰ্ব্ব নির্বিশেষে, সকলের উপর প্রভুত্ব কায়েম করিতেছে। সুদূর পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে পশ্চিমী (বিশেষতঃ পাঞ্জাবী) পুলিশ ও সৈন্যদের অত্যাচার স্থানীয় লোককে ত্রস্ত করিতে চেষ্টা করিয়াছে। বিভ্রাট শুরু হইল ইষ্ট পাকিস্তানে। দুর্বল, ভীরু শান্তস্বভাব বাঙালীকে ভয় দেখাইয়া বশে রাখিবার মাত্রা বেশী হইয়া পড়ায় গণ্ডগোলের সুত্রপাত। নানা প্রতিবাদের সহিত ভাষার দাবীতে বিরাট বিক্ষোভ দেখা দিল এবং ১৯৫২ ফেব্রুয়ারী ২১-এ তিনটি বাঙালী যুবক পুলিশের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন করিল। পরের দিন এবং দিনের পর
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment