বাংলা দেশে জনশিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস
আধুনিক দৃষ্টিতে জনশিক্ষা বলতে আমরা যা বুঝি ঊনবিংশ শতাব্দীতে তা ছিল না। জনশিক্ষার প্রতি সমাজের দৃষ্টিও সেভাবে আকৃষ্ট হয়নি। দেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তের ছেলেরাই কিছু কিছু শিক্ষার সুযোগ পেতো, বেশীর ভাগ গরীব অন্ত্যজ শ্রেণীর লোকেরা কোনরকম সুযোগ পেতো না।
স্যার জন শোরের শাসনকালেই (১৭৯৩-৯৮) ভারতবর্ষে জনশিক্ষার প্রশ্নটি সরকারী ভাবে উত্থিত হয়। তার Notes on Indian Affairs দলিলে তিনি এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করেন এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে যাতে দেশের সাধারণ মানুষ শিক্ষালাভ করতে পারে তার জন্য তৎকালিক বিদ্যালয়গুলির উন্নতি সাধন ও প্রয়োজনবোধে নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
সুচিন্তিত সরকারী প্রচেষ্টা কিংবা দেশীয় বিদ্যোৎসাহী বা মিশনারীদের পদক্ষেপের পূর্বেই ১৮০০ সালে আমরা দেখি মিঃ এলারটন নামে মালদহের এক নীলকর সাহেব সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রচেষ্টায় ও উৎসাহে তাঁর এলাকায় কতকগুলি প্রাথমিক বিদালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে স্থানীয় ছাত্রদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি ঐ বিদ্যালয়গুলির উপযোগী কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেন। পরবর্তীকালে ১৮১৪ সালে রেঃ রবার্ট মে নামে একজন খ্রীষ্টান পাদ্রী চুঁচুড়া অঞ্চলে ১৬টি এবং মিঃ পিয়ার্সন ও মিঃ হার্লে খুলনা, শ্যামনগর ইত্যাদি অঞ্চলে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন মূলত একই উদ্দেশ্যে। প্রায় ঐ একই সময়ে শ্রীরামপুর মিশনের পাদ্রী কেরী, মার্শম্যান ও ওয়ার্ড কলিকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে, চার্চ মিশনারী সোসাইটির ক্যাপটেন স্টুয়ার্ট বর্ধমান অঞ্চলে, এবং লণ্ডন মিশনারী সোসাইটির টালিগঞ্জ, খিদিরপুর ইত্যাদি অঞ্চলে বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় জনশিক্ষার্থে প্রতিষ্ঠা করেন। জাতিধর্ম নির্বিশেষে হিন্দু মুসলমানের ছেলেরা (তবে তুলনামূলকভাবে মুসলমানের ছেলেরা অনেক কম সংখ্যায়) সেগুলিতে যোগদান করে। এই সময় মিস্ কুক্ (পরবর্তীকালে মিসেস উইল্সন্) মেয়েদের জন্য কয়েকটি পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮২২ সালে ‘খ্রীষ্টীয়ান নলেজ সোসাইটি’র উদ্যোগে কাশীপুর, টালিগঞ্জ ও হাওড়ার বিখ্যাত সার্কেল প্রথায় (circle system) কয়েকটি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।১ ‘সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভা’র অন্যতম সদস্য শ্রী উদয়চরণ আঢ্য বাংলার মাধ্যমে ছেলেদের শিক্ষাদানের জন্য কলিকাতায় একটি আদর্শ পাঠশালা বা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেন এবং ঐ উদ্দেশেই তার একবছর পরে হিন্দু কলেজের কর্মকর্তাগণের—রাজা রাধাকান্ত দেব, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, ডেভিড হেয়ার, দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রভৃতির—উদ্যোগে হিন্দু কলেজের অধীনে ১৮৪০ সনের ১৮ই জানুয়ারী একটি বাংলা পাঠশালার কাজ আরম্ভ হয়। ঐ বছরেই জুন মাসে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পূর্বোক্ত পাঠশালার আদর্শে ‘তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা’র প্রতিষ্ঠা করেন। আবার তত্ত্ববোধিনীর আদর্শে পাণিহাটি, মুখসাগর ইত্যাদি স্থানে বাংলা পাঠশালা স্থাপিত হয়। মাতৃভাষার প্রতি সরকারের ও জনসাধারণের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তৎকালীন বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৮৪৪ সনে সুবে বাংলায় সরকারী ব্যয়ে ১০১টি আদর্শ দেশীয় বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই সব বিদ্যালয়ে কমবেশী ইতিহাস, ভূগোল, পাটীগণিত স্বাস্থ্যতত্ত্ব, সাধারণ বিজ্ঞান ইত্যাদি মাতৃভাষার মাধ্যমে পড়ানো হোত। ‘কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি’ দীর্ঘকাল ধরে এই ধরণের স্কুলের জন্য পাঠ্য পুস্তক প্রকাশে সাহায্য করেছে।২
কিন্তু এই সময় ইংরাজী ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা’র পরিপোষক সরকারী শিক্ষা নীতি ও জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিতে নতুন চিন্তাধারা এক পৃথক মূল্যবোধের সৃষ্টি করে যার প্রভাব পরবর্তীকালে বাংলাদেশে জনশিক্ষার গতি ও প্রকৃতি নির্ধারণে ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। ইংরাজ প্রবর্তিত ভূমি ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এক ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। তারা নিজেদের স্বার্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষার মাধ্যমের প্রশ্নে ইংরাজীর প্রতি সমর্থন জানান। ভারতবাসীদের শিক্ষার আলোকে উজ্জ্বল করার জন্য এক শ্রেণীর ইংরাজও এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন।৩ দেশীয় বিত্তশালী শ্রেণী জমিদারেরা উদারভাবেই ইংরাজী শিক্ষার জন্য গ্রামে ও শহরে ব্যাপকভাবে ‘এ্যাংলো-ভার্নাকুলার স্কুল’ স্থাপন করতে লাগলেন ও সরকারী অনুদানের দাক্ষিণ্যও সেগুলির উপর বর্ষিত হতে লাগলে। টাকী, জনাই, বর্ধমান, আন্দুল, এমন কি সুদূর ঢাকাতেও ইংরাজী স্কুলের সাফল্য এই বিশেষ সামাজিক দিক
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment