- হাসান তারেক
- 06 Apr 2015
- 460
- 02
কাগজের নল থেকে স্টেথোস্কোপ
মানুষের কল্যাণে কাজ করলেও অনেকসময় সইতে হয় একরাশ নিন্দা ও গঞ্জনা। তবুও কিছু কিছু উদারমনা মানুষ নিরলস কাজ করে যান মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, সভ্যতার জন্য। সমকালে মূল্যায়িত না হলেও ইতিহাস কিন্তু মূল্যায়ন করতে ভুল করে না। এ প্রসঙ্গে ড. হুমায়ুন আজাদের “আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে" কবিতার কথা মনে আসে।
ঠিক এমন একজনের কথাই জানবো, যিনি প্রকৃতপক্ষেই জন্মেছিলেন অন্যদের সময়ে, বেঁচে ছিলেন অন্যদের সময়ে। তিনি হলেন ডা. রেনে হিউফিল হায়াসিনথি লেনেক। ঊনিশ শতকের শুরুতে ১৮১৬ সালে তিনি ছিলেন প্যারিসের বিখ্যাত ন্যাক্কারে হাসপাতালে কর্মরত। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ফুসফুস ও শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগাক্রান্ত। একদিন হঠাৎ করে অতিকায় এক ভদ্রমহিলা হৃদরোগের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে পরীক্ষা করতে গিয়ে ভীষণ বিড়ম্বনায় পড়েন ডা. লেনেক। আগের দিনে শ্বাস-নিঃশ্বাস পরীক্ষার জন্য বুকে কান দিয়ে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন শুনতে হতো। সেই অতিকায় স্বাস্থ্যবন ভদ্রমহিলার ক্ষেত্রে তিনি পড়লেন বিপত্তিকর এক সমস্যায়। কী করবেন ভাবতে ভাবতে আনমনে ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন।
পাশেই ছিল এক খোলা মাঠ। মাঠে শিশুরা খেলছিল। কায়কটা শিশু অদ্ভুত খেলা খেলছিল, ডা. লেনেকের দৃষ্টি তাদের উপর নিবদ্ধ হলো। শিশুরা একটি পড়ে থাকা কাঠের গুড়ির এক পাশে শব্দ করছে আর বাকীরা অপর প্রান্তে কান পেতে শুনছে। ডা. লেনেকের শব্দের সাধারণ নিয়মের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর মুখে একপ্রস্থ হাসি ফুটে উঠল, সে হাসি চেপে রাখা গেল না। দৌড়ে তার চেম্বারে ফিরে এসে নার্সদের বললেন, কাগজ দাও। কাগজ নিয়ে লম্বা গোলক তৈরি করে দৌড়ে গেলেন সেই অতিকায় মহিলার হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করতে। হৃদযন্ত্র কাগজের এক প্রান্ত রেখে অপর প্রান্তে কান লাগাতেই পরিষ্কার শুনতে পেলেন হৃদস্পন্দন। পরীক্ষা করে তাকে রেখে দৌড়ে ওয়ার্ডের অন্যান্যদের হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করে অবাক হলেন। এক এক রোগাক্রান্ত রোগীর এক এক রকম হৃদস্পন্দন শুনলেন তাঁর কাগজে তৈরি নলটি দিয়ে।
কাগজের নলটি সবসময় ব্যবহার উপযোগী নয়, বিধায় তিনি কাঠ দিয়ে চমৎকার একটা ফাঁপা নল তৈরি করে নিলেন এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত সেটি দিয়ে কাজ করে গেছেন।
সেটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম স্টেথোস্কোপ। তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্র কাঠের নলটির একটি নাম দিতে হয়, তিনি এটির নামকরণ করলেন ‘স্টেথোস্কোপ’। গ্রিক ‘স্টেথো’ অর্থ বুক আর ‘স্কোপিন’ অর্থ পরীক্ষা করা; এই দুইয়ে মিলে স্টেথোস্কোপ অর্থাৎ হৃদবীক্ষণ যন্ত্র। আজকাল ডাক্তারদের সাদা এপ্রনের উপর গলায় যে যন্ত্রটি ঝুলতে দেখা যায়, তা হলো আধুনিক স্টেথোস্কোপ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গেই কাঠের নল বদলে আজকাল ক্রোমিয়াম ও রাবারের তৈরি আধুনিক স্টেথোস্কোপ লক্ষ-কোটি মানুষের প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডা. লেনেকের আবিষ্কার আজকে যেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
১৭৮১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া ডা. লেনেক মাত্র সাতচল্লিশ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ সময়টুকু মানুষের বঞ্চনা-গঞ্চনা সহ্য করে, রোগে-শোকে ভুগে যক্ষায় মারা যান। নিজের কথা না ভেবে শুধু মানুষের সেবায় নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেওয়ার অসামান্য নজির হলেন আত্মাভিমানী ডা. লেনেক। সারাজীবন যক্ষা রোগীদের চিকিৎসা করতে করতে যক্ষা কখন যে তাঁর নিজ শরীরেও সংক্রামিত হয়েছে, তা টের পাননি নিজের প্রতি ভীষণ উদাসীন এই মানবতাবাদী চিকিৎসক।
মানুষের অবহেলা-নিন্দা সইয়েও জীবনের শেষ পর্যন্ত মানুষের জন্যই কাজ করে গেছেন তিনি। অবশেষে অসামান্য অভিমান নিয়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এক মহাপ্রাণের জীবনাবসান হয়।
-
রাবার বুলেট কী এবং তা কতটা ক্ষতিকর?_43575836
Leave A Comment
Stay Connected
Get Newsletter
Subscribe to our newsletter to get latest news, popular news and exclusive updates.
Featured News
Advertisement
-
Long established fact that a reader will be distracted
- by Ninurta
- 16 April 2017
-
Long established fact that a reader will be distracted
- by Ninurta
- 16 April 2017
-
Long established fact that a reader will be distracted
- by Ninurta
- 16 April 2017
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment