আনোয়ারা সৈয়দ হকের নরক ও ফুলের কাহিনী
মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত, কাইয়ুম চৌধুরির আঁকা প্রচ্ছদের এই আত্মজীবনীটি আমাকে একদম শুষে নেবে ভেতরের দিকে, অতোটা আশা করিনি। প্রচ্ছদটি দেখে আমার মন কাড়েনি। কিন্তু ভেতরে যা আছে, তা আমাকে এক অন্যরকম পৃথিবী দেখিয়েছে। একজন নারীর শৈশব, যিনি দেখেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যিনি দেখেছেন সাতচল্লিশের দেশভাগ। যার শৈশব কৈশোর জুড়ে রয়েছে, যশোরের চুড়িপট্টি। নানান বঞ্চনা, গঞ্জনা, অ্যাডভেঞ্চার, আর শেকল ভাঙার নানান ব্যর্থ চেষ্টাসমৃদ্ধ একটা শিশু জীবন।
যে শিশু জীবন দেখেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, হিন্দু বাঙালির দেশ ছাড়ার মিছিল। বাঁশের সাঁকোর মতো নড়বড়ে একটা শৈশব-কৈশোর, ভয়ে ভয়ে পার করে হয়ে উঠেছেন যুবতী। আনোয়ারা সৈয়দ হকের শৈশবের আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে, তার পিতা-মাতার দাম্পত্য জীবন, আলাদা ভাষা, আলাদা ধর্ম ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ। এতো কিছুর ভিড়েও, নারী শিশু হয়ে জন্ম নেওয়ার আজন্ম অপরাধ তাকে ছাড় দেয়নি। তিনি সেই শিশু বয়সেই শিকার হয়েছেন যৌন নিপীড়নের। ভেতরের শিশুকে ডিঙিয়ে হয়ে উঠেছেন, প্রতিবাদী, বারবার মার খেয়েও শেকল ভেঙে ছুটেছেন নিজের স্বপ্ন আর ভালোলাগার পেছনে।
জীবনের নিষ্ঠুর কিছু সত্য, কিছু বিব্রতকর বাস্তবতা তিনি বলে গেছেন অকপটে। দেশভাগে হওয়া পরিবর্তন, হিন্দু বাঙালিদের দেশ ছাড়ার দরুণ বন্ধু বিচ্ছেদ, বাবার মুখে শোনা হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ভয়াবহতা তাকে শিশু বয়সে নাড়া দিয়েছে, আর তাঁর লেখায় ফুটে ওঠা চিত্র দেখে আমার চোখে জল এসেছে। ইচ্ছে করছে যেন আমি ছোট্ট আনোয়ারা কিংবা মঞ্জুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকি কিছুক্ষণ। তাঁর মন খারাপের সময়গুলো ভাগ করে নিই।
নরক ও ফুলের কাহিনী
লেখক: আনোয়ারা সৈয়দ হক
প্রকাশক: মাওলা ব্রাদার্স
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ শিশুমনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা ফুটে উঠেছে লেখায়। শিশুমনে ধীরে ধীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় সাম্প্রদায়িকতার বীজ, যা শেষ পর্যন্ত হত্যা করে সবার শৈশব, কৈশোর, যৌবন—পুরো জীবন।
পুরো বইয়ের পাতায় পাতায় নানান রকম অনুভূতি আর ভিন্ন এক সময়ের গল্প। সেই সময়ে জন্ম নেওয়া এক মেয়ে শিশুর জীবন-যাপন আমাকে বিস্মিত করেছে। মায়ের হাতে নিত্যদিন নানান কারণে চুলোর ফুঁকো দিয়ে মার খেতে খেতে সয়ে যাওয়া পিঠে ভর করেছিল দুটো প্রজাপতির ডানা, যে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে বেড়াতো মঞ্জু তার দুরন্ত খেয়ালে।
নিয়মিত পয়সা চুরি—শুধু বই পড়ার জন্য, এমন বই পড়ুয়া শিশু, যে বইয়ের ভেতরে মুখ গুঁজে দেখে নিতে চায় পুরো পৃথিবী, স্বপ্ন দেখে এস্কিমোদের ইগলুতে বসে চা খাবার। সত্যিই বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে।
আত্মজীবনীটিতে বন্ধু বিচ্ছেদের কথনগুলো আমাকে ছুঁয়ে গেছে। শিশু মনে যাকেই আকড়ে ধরে নিজের ব্যক্তিগত মানুষ হিসেবে ধরে নিয়েছেন, তাকেই যেন সড়ে যেতে হয়েছে নিয়তির নির্মম পরিহাসে। কখনো ধর্ম, কখনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এই সব কিছু বন্ধুহীন করে রেখেছে মঞ্জুকে। অনেকগুলো না পাওয়া কষ্টের ভেতর এই কষ্টটিই বারবার করে বেজে চলে লেখকের হৃদয়ে, এবং সেই কষ্টের সুরেই মন ভার হয়ে আসে।
মানুষ যেমন চলে গেছে যশোর ছেড়ে, তেমনি পশ্চিমবঙ্গ থেকেও মানুষ এসেছে যশোরে। কেউ কলকাতা, কেউ চব্বিশ পরগণা, কেউ শান্তিনগর থেকে এসে নতুন বসত গড়েছে। কেউ সম্ভাবনাময় একটা জীবন ফেলে শুধু প্রাণভয়ে কিংবা সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে চলে এসেছে এপারে। তাদের কারো কারো স্বচ্ছল জীবন ছিল ওখানে, তাদের সেই স্বচ্ছলতা, আদব কেতা, তুলনামূলক পরিপাটি ও ঝকঝকে জীবন এপারে এসে বদলে গেছে। একটা একটা করে গয়না বিক্রি হয়ে গেছে, সংসার জীবন চালানোর খাতিরে। সম্ভাবনাময় সচ্ছল সুন্দর ঝকঝকে জীবনে জন্ম নেওয়া মানুষদের দুটো পয়সার জন্য প্রভুভক্ত জীবন-যাপন করতে হয়েছে মাথা নিচু করে। দুটো ভালো-মন্দ খাবে বলে আরেক বাড়ির রান্না ঘরে বসে থেকেছে জীবন। নির্মম সেই জীবন আর জীবনের বর্ণনা।
নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে, নিজেদের সম্ভাবনাময় জীবনকে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment