দুর্ভিক্ষের রূপ
ছায়া 'পূর্বগামিনী'। কিন্তু দুর্ভিক্ষের শুধু ছায়া নয়, দুর্ভিক্ষই আবার এসে গেল! কর্তৃপক্ষ এখনো জানাচ্ছেন, ‘সব ঠিক হ্যায়। এদিকে মফঃস্বল থেকে প্রতিদিন যে সংবাদ কাগজে প্রকাশিত হচ্ছে তাতে দেখছি চালের দর ২৫/৩০ টাকা ছাড়িয়ে দু'একখানে এখনি ৪০ টাকায় পৌঁছচ্ছে। সরকারের গুদামে চাল ক্রমেই কমে আছে—তারা আমন ফসল মোটেই সংগ্রহ করতে পারেনি—অবশ্য সরকারের নাম করে তাদেরই অনুগ্রহভাজন এজেন্টরা যে সে ফসল নিজেদের চোরাগুদামে সংগ্রহ করে বসে আছে, তাতে সন্দেহ নেই। অন্য দিকে আই. সি. এস ও মিলিটারি অফিসারের রাজত্বে সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টের গুদামে গুদামে যা চাল আটা আছে, তাও পচছে। এবার দুর্ভিক্ষ আরও ভয়ংকর হবার কথা। কারণ, একে 'ফসল ফলেছে কম; তাতে ভারতবর্ষ জোড়া দুর্ভিক্ষ, আর পৃথিবীরও বহু দেশে নিদারুণ খাদ্যাভাব। তাই বাইরে থেকে খাদ্য বাংলা দেশ এবার বেশি আশাও করতে পারে না। আর ঘরের ভেতরে বাংলা দেশের জনসাধারণের মধ্যেও বিভেদ এখন বেশি এবং বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলির ও খবরের কাগজগুলির উপরে মুনাফাদার চোরাকারবারীর প্রতিপত্তিও বেশি।
কাজেই দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার শক্তি আমাদের আরও কম। কারণ, ইতিমধ্যে ১৩৫০’র কোনো ক্ষতই শুকায়নি; কোনো ক্ষতিই প্রায় পূরণ হয়নি; বাংলার মত জমিদার-তন্ত্রী দেশের যে মূলগত আর্থিক-সামাজিক অসঙ্গতির জন্য দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে তার সেই মৌলিক আর্থিক সুবিন্যাসের কোনো পথই তৈরী হয়নি। বরং সেই গেঁজে-উঠা সমাজের বুকে ফেঁপে উঠেছে গ্রামে ও শহরে জোতদার মজুতদার চোরাকারবারী ও চোরা-কর্মচারী। এসব যে মন-গড়া কথা নয়, তা দুর্ভিক্ষ-কমিশনের রিপোর্ট থেকেও প্রমাণিত হয়। আরও প্রমাণিত হয় সম্প্রতি প্রকাশিত অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ও ক্ষিতীশপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত রাশি-বৈজ্ঞানিক গবেষকদের একটি রিপোর্ট থেকে৷ তা বিশদভাবে সকলেরই আলোচ্য—এখানে শুধু তার সার সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করছি:
“দুর্ভিক্ষের পূর্বেও অবস্থা খারাপ হইতেছিল
১৯৩৯ সালের জানুয়ারী হইতে ১৯৪৩ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত দুর্ভিক্ষের পূর্বের যুগ। ইহার ভিতরেও কিন্তু বেশি লোকেরই অবস্থা খারাপ হইয়াছে। অনেকে নিঃস্ব হইয়া পড়িয়াছেন৷ যাঁহাদের অবস্থা ভাল হইয়াছে, তাঁহারা অনুপাতে কম। ইহাতেই প্রমাণ হইয়া যাইবে যে দুর্ভিক্ষ আসিবার পূর্ব হইতেই লোকের অবস্থা ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল। দুর্ভিক্ষের সময় শুধু তাহারই চূড়ান্ত পরিণতি ঘটিল।
দুর্ভিক্ষের ভিতর অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন
দুর্ভিক্ষের ভিতর লোকের অবস্থা অত্যন্ত তাড়াতাড়ি বদলাইতে লাগিল। পূর্বে যে হারে অল্প কিছু লোকের অবস্থা ভাল হইতেছিল এখন তাহাদের অবস্থা হয়তো দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি ভাল হইতে লাগিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি সর্বনাশের কথাও দেখিতে হইবে। তিনগুণ তাড়াতাড়ি লোকের অবস্থা খারাপ হইতে লাগিল৷ আগেকার চেয়ে বারগুণ তাড়াতাড়ি লোকে নিঃস্ব হইতে লাগিল।
দুর্ভিক্ষ অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পরিণতি
এখন তাহা হইলে ছবিটি পরিষ্কার দেখা যাইতেছে। দুর্ভিক্ষের সর্বনাশা নাগপাশ কোন কোন অঞ্চলকে ছারখার করিয়া দিয়া গিয়াছে। কোথাও বা তাহার ধমকটা তত হয় নাই। আবার অন্য কোথাও হয়তো তাহারও চেয়ে কম হইয়াছে৷ ইহাতেই প্রমাণ' হইয়া যায় যে, সাধারণ অবস্থাতেও দেশের এক এক স্থানের আর্থিক 'অবস্থা ছিল এক এক রকম। দুর্ভিক্ষের সময় সেই বৈষম্যটা বাড়িয়া গিয়াছিল। দেশের যাঁহারা সবচেয়ে গরীব সেই ভূমিহীন মজুরের দল, সেই মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও গ্রামের সেই শিল্পীরাই এ সময়ে সবচেয়ে কষ্ট পাইয়াছেন। তাঁহাদের অনেকে নিঃস্ব হইয়া গিয়াছেন । যাঁহারা মাঝামাঝি দরেব লোক, যাঁহাদের কিছু জমি ও অন্য দু’এক ছিটা সঞ্চিত কিছু ছিল, তাঁহারা কিছুক্ষণ যুঝিতে পারিয়াছেন। উপরের দিকের লোকদের বিশেষ কিছুই হয় নাই।' এই তালে তাঁহাদের কেহ কেহ অবস্থা ফিরাইয়া লইয়াছেন। দুর্ভিক্ষের সময় (১৯৪৩-এর জানুয়ারী হইতে ’৪৪-এর মে পর্যন্ত) এই উত্থান-পতনটাই আরও দ্রুতভাবে হইয়াছে। তাই ঠিকভাবে দেখিলে, ’৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ ভূমিকম্পের মত একটা আকস্মিক দুর্যোগ নয়। সাধারণ অবস্থাতেও যে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের খেলা চলিতেছিল, ইহা তাহারই পরিণতি।” (“স্বাধীনতা” থেকে উদ্ধৃত)
এ
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment