[ম্যাক্সিম গোর্কী (১৮৫৮-১৯৩৬) সোভিয়েত রাশিয়ার অমর কথাশিল্পী হিসেবে সুপরিচিত। বিজ্ঞানের স্বপক্ষে তিনি তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি ১৯১৭ সালে কেরেনেস্কির অস্থায়ী সরকারের সময়ে ‘ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন ফর দি ডেভেলপমেণ্ট অ্যান্ড প্রোপাগেশন অব দ্য পজিটিভ সায়েন্স’-এর প্রথম অধিবেশনে পাঠ করেন।]

...সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ! আপনাদের কাছে সম্ভবত এটি অদ্ভূত লাগবে যে, আমি বিজ্ঞান সম্পর্কে, নবজাত রাশিয়ার জীবনে এর তাৎপর্য সম্পর্কে এবং নতুন রাশিয়ার ইতিহাসে বিজ্ঞান প্রযুক্তবিদ্যা কী ভূমিকা পালন করবে সে সম্পর্কে আমার অনভিজ্ঞ মতামত উপস্থাপিত করে আপনাদের বিব্রত করব বলে মনস্থির করেছি।

কিন্তু আমার এই ঔদ্ধত্য সম্পর্কে আপনাদের স্বাভাবিক এবং সহজবোধ্য সন্দেহজনক মনোভাব হয়ত আমি দূর করতে পারি, যদি ব্যবহারিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে আমার মনোভাব এবং আমাদের দেশের মত চিন্তাভাবনায় পেছিয়ে থাকা দেশে বিজ্ঞান যে সৃজনীমূলক ভূমিকা পালন করতে পারে এবং পারবে সে সম্পর্কে আমার ধারণা আপনাদের কাছে নিবেদন করার অনুমতি পাই।

মাননীয় নাগরিকবৃন্দ। শিল্পকলা এবং বিজ্ঞানের মত সৃজনীমূলক এবং সামাজিক ধারণা শিক্ষণে আর কোন শক্তিশালী মাধ্যমের কথা আমি জানি না। শিল্পকলার সামান্য পরিচিত একজন প্রতিনিধি হিসাবে আমি এ সম্পর্কে আরও কিছু বলব। মানুষের শিক্ষার প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানকে আমি গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে এবং সজ্ঞানে প্রথম স্থানে রাখব।

কেননা শিল্পকলা অনুভূতিসঞ্জাত; খুব সহজেই স্রষ্টার মানসিকতার খামখেয়ালীপনার শিকার হয়ে পড়ে; ঐটি খুব বেশি পরিমাণে শিল্পীর তথাকথিত মেজাজের উপর নির্ভরশীল; আর সে কারণেই এটা খুব অল্প ক্ষেত্রেই প্রকৃত অর্থে মুক্ত, খুব অল্প ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত, শ্রেণিগত, জাতিগত এবং বর্ণগত কুসংস্কারের শক্তিশালী প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসতে সক্ষম।

এইসব প্রভাবমুক্ত ও সঠিক পর্যবেক্ষণের ফলনশীল জমিতে প্রচণ্ড বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যবহারিক বিজ্ঞান অঙ্কশাস্ত্রের লৌহদৃঢ় নীতির দ্বারা পরিচালিত ব্যবহারিক বিজ্ঞানের ভাবনা প্রকৃত অর্থেই আন্তর্জাতিক এবং সমস্ত মানুষের উদ্দেশ্যপিয়াসী। রুশ জার্মান কিংবা ইতালীয় শিল্পকলার কথা আমাদের বলার অধিকার আছে কিন্তু এই গ্রন্থে কেবলমাত্র একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান রয়েছে এবং এই ঘটনা আমাদের ভাবনায় ডানা মেলে দেয়, ঠেলে নিয়ে যায় বিশ্বের রহস্যের প্রান্তে, জানিয়ে দেয় আমাদের অস্তিত্বের দুর্ভাগ্যের মূলগুলি; বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করে ঐক্য স্বাধীনতা ও সৌন্দর্যের দ্বার।

রুশ গণতন্ত্র যা এই সময়ে আবার নতুন জীবনীধারায় সঞ্জীবিত হয়ে উঠেছে, সঠিক বিজ্ঞান-চেতনায় তাকে পরিপূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনাদের বোঝানোর দায়িত্ব আমার নয়। কে. এ. টী. সিরিয়াজেভ্, একজন অসাধারণ বিজ্ঞানী ও ব্যক্তি জীবনে সবচেয়ে সৎ মানুষ, দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছিলেন; ‘ভবিষ্যৎ হোল বিজ্ঞানের এবং গণতন্ত্রের।’ এটি একটি মহান সত্য এবং আমি গভীরভাবে বিশ্বাসী যে, বিজ্ঞানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে না চললে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নেই।

আমরা যারা রাশিয়ার মানুষ, আমাদের নিজেদের সঠিক বিজ্ঞান-চেতনায় সজ্জিত হওয়া খুব বেশি জরুরী। অন্য কোন জাতির চেয়ে রুশ জাতির বেশি প্রয়োজন বুদ্ধির প্রতি শ্রদ্ধা জন্মাবার, এর প্রতি ভালবাসা তৈরি করার ও এর সর্বজনীন শক্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার। এটি বোঝা দরকার যে, সেই বুদ্ধি আমাদের আলোকবর্তিকা, এটি সেই শক্তি যার তাপ আমাদের উদ্দীপ্ত করতে পারে, এবং কেবলমাত্র এর প্রদীপ্ত ডানায় ভর করে মানুষের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি, যা সত্যের জন্যে মানুষের দুঃখ বরণ ও সত্যের প্রতি তার অতৃপ্ত পিয়াসের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পারে।...

...আমি বিশ্বাস করি যে, বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রকৃত বিজ্ঞানের তাৎপর্য গ্রহণ করবে। আমি জানি যে, গণতন্ত্র প্রকৃত বিজ্ঞানকে ভালবাসে এবং আমি বলব যে, আপনাদের সংকল্পে রয়েছে রাশিয়ার আত্মিক পুনর্জন্ম।

রাশিয়ার জীবনে আলো পড়ুক।...

...মুক্ত অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞান যত উপরে উঠবে, বাস্তব জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োগের সম্ভাবনা তত প্রসারিত হবে। আমরা জানি, প্রকৃতিতে মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই।

বিজ্ঞান দীর্ঘজীবী হোক!

লেখক: ম্যাক্সিম গোর্কী (ভাষণ)
অনুবাদ: অংশুতোষ

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion