প্রতিরোধের কাহিনী
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে শেখ সাহেবের আলোচনা ভেঙে গেছে। সংবাদটা সমস্ত শহরবাসীর মনের উপর কালো ছায়ার মত নেমে এসেছে। বাতাসটা যেন ক্রমেই ভারী হয়ে আসছে। বেশ বুঝতে পারছি এক মহাবিপর্যয়ের ধারালো খড়্গ ক্ষীণসূত্রে আমাদের মাথার উপর ঝুলছে। যে-কোনো সময় তা ছিঁড়ে পড়ে যেতে পারে। আমরা ক-জন বন্ধু সেই কথা নিয়েই আলাপ আলোচনা করছিলাম। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর সময়টা যে এখনই এসে গেছে তা আমরা কেউ ভাবতে পারিনি।
বড়ভাই হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরের মধ্যে এসে ঢুকলেন। বড়ভাই ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী। ঘরের মধ্যে ঢুকেই তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, এখানে বসে বসে করছ কি তোমরা? এখন কি বসে থাকার সময় আছে! আজ রাত্রেই ওরা হামলা করতে এসেছে।
—হামলা করতে এসেছে? কারা?
—কারা আবার, মিলিটারী।
আমরা সবাই বসেছিলাম, উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম, সত্যি খবর?
—সত্যি বই কি! আমি খুব নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছি।
—এখন কি করব আমরা? কি করতে হবে?
বড় ভাই ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন:
—এক মুহূর্ত দেরী করার সময় নেই। এখনই ছুটে বেরিয়ে যাও তোমরা। পাড়ার সমস্ত ছেলেদের ডেকে জড়ো কর। মালীবাগ আর শান্তিনগরের মোড়ে ব্যারিকেড গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে অন্যান্য জায়গায় কাজ শুরু হয়ে গেছে। এক্ষুনি চলে যাও! আমাদের হাতে কতটুকু সময় আছে তাও জানি না। খুব ভাল করে ব্যারিকেড দেবার চেষ্টা করবে। একটা কথা যেন মনে থাকে, এবারকার হামলা এক প্রচণ্ড রূপ নিয়ে আসবে। কিন্তু যতই প্রচণ্ড হোক না কেন, আমাদের যেটুকু শক্তি আছে তাই নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। এ-নিয়ে কোনো দ্বিধা বা ইতস্তত করবার মতো সময় নেই।
আমার বয়স আঠারো। এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা খুবই সামান্য। কিন্তু তা হলেও বুঝতে পারছিলাম এবারকার হামলা প্রচণ্ড মুর্তিতে নেমে আসছে। কিন্তু সেই প্রচণ্ডতার রূপটা কি হতে পারে, আমি কেন, বড় ভাইও কল্পনা করতে পারেনি। সারা পূর্ববঙ্গে এমন একটি লোকও নেই যার কল্পনায় এ-কথা আসতে পারে। আমার মনে হয় না পৃথিবীতে এর অনুরূপ দৃষ্টান্ত আছে।
আমরা ক-জন আর দেরী না করে ছুটে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের মালীবাগ পাড়ায় ইতিমধ্যেই খবরটা কিছুকিছু ছড়িয়ে পড়েছে। দেখতে দেখতে মালীবাগের মোড়ে লোকের ভিড় জমে গেল। সবাই উত্তেজিতভাবে এই নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছে। কিন্তু কি করতে হবে স্থির করে উঠতে পারছে না। অথচ কিছু ত’ একটা করতেই হবে। সেই ভিড়ের মধ্যে দুটো একটা গাদাবন্দুক দেখতে পাচ্ছি। এই হাতিয়ার নিয়ে ওরা প্রবল পরাক্রান্ত সামরিকবাহিনীর সাথে মোকাবিলা করতে এসেছে। দেখলে হাসি পায়, দুঃখও হয়। আমরা তাদের সামনে গিয়েই হেঁকে উঠলাম:
—দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছেন আপনারা? এক মুহূর্ত দেরী করার সময় নেই। ব্যারিকেড গড়ে তুলুন। ওরা এসে পড়লো বলে।
এদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যাই বেশি। দু-চারজন বয়স্ক ভদ্রলোকও আছেন। আর আছে রিক্সাওয়ালা; মোটবওয়া মেহনতী মানুষ যারা। এবারকার আন্দোলনে প্রথম থেকেই এরা একটা বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করে আসছে। এরা কিছু একটা করবার জন্য অধীর হয়ে উঠেছিল। আমাদের কথা শোনামাত্রই তারা কাজে হাত লাগাল। সামনেই তিতাস গ্যাসের অফিস। সেখানে কতগুলো পাইপ পড়ে আছে। আমরা সেগুলা ধরাধরি করে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে এলাম। অফিসের লোকেরা আপত্তি জানিয়েছিল, কিন্তু তাদের সেই আপত্তি টিকল না। কিন্তু এতেও চলবে না, আরো বড় করে—আরো উঁচু করে—আরো মজবুত করে এই ব্যারিকেডের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পরে বুঝতে পেরেছিলাম আমরা বালির বাঁধ তুলে সমুদ্রোচ্ছ্বাসকে ঠেকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কি করব আমরা? এইটুকুই তো আমাদের সম্বল।
ব্যারিকেড তৈরি করবার জন্য যে যা পারছে তাই নিয়ে আসছে। আর, যে যা আনছে তাই স্তূপীকৃত করে তোলা হচ্ছে। বাছবিচার করবার মতো সময় নেই। কিন্তু তবুও মনের মতো
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment