আধুনিক ইরানী কবিতা
চিরকেলে গোলাপ আর কবিতার দেশ আজ কিছুকাল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিক ঘূর্ণিপাকের কেন্দ্রবিন্দু। একদিকে পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদের সোভিয়েট-বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রাচ্যদেশীয় বুহ্যমুখ, অন্যদিকে কেন্দ্ৰীয় সরকারের প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে আজেরবাইজান ও কুর্দিস্তানের অধিবাসীদের স্বাধিকার-চেষ্টার লড়াইয়ের পটভূমি—এ-ই ইরান। আজকের এই ইরান আমাদের ‘জাতীয়তাবাদী’ দৈনিকপত্রের অনেক শোকাশ্রু ও প্রেমাশ্রুবর্ষণের কারণ। শোকাশ্ৰু—সোভিয়েট ‘সাম্রাজ্যবাদের’ ঘরভাঙানি মতলব আবিষ্কারের ফল; প্রেমাশ্রুবর্ষণ অবশ্যই কায়েমী মালিকানার ‘গণতান্ত্রিক ঔদার্যে’ আমাদের অবিচলিত আস্থার তদ্গতভাব!
কিন্তু এই ভারতীয় শোকাশ্রু-প্রেমাশ্ৰু মায় স্বস্তি-পরিষদীয় কুম্ভীরাশ্রুও শেষপর্যন্ত নিছক অরণ্যরোদনেই পর্যবসিত হ'লো ৷ দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়ার প্রবল শক্তির মুখে তুড়ি দিয়ে ইরানী-সোভিয়েট চুক্তি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে, এমন কি ক্রমে ক্রমে দুর্জ্ঞেয় আজেরবাইজানী সমস্যাও সুমীমাংসিত হ'লো৷ যদিও এই ভাঙা-হাটে আন্তর্জাতিক কীর্তনীয়ারা থেকে থেকে এখনও সেই প্রলাপী বিলাপের ধুয়ো তুলছে আর অন্যপক্ষে দেশী-বিদেশী প্রগতিশীলরা তাঁদের আশাতীত সাফল্যে মুখর, তবু এই সরগরম আসরেই এই সাফল্যের মৌল কারণটি আমরা যেন আরো একটু গভীরভাবে চিন্তা করি। বিশেষত ঠিক এই একই সময়ে ফ্যাশিস্ট-বিরোধিতার দৃঢ় দুর্গ চীনে যখন আজও গৃহযুদ্ধের হাওয়া ঘোরালো তখন ইরানী প্রগতিশীলদের এই অসম্ভাব্য সাফল্যের কারণ অনুসন্ধানে উৎসুক হয়ে ওঠা যে-কোনো সংস্কৃতিবান মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক।
আপাতদৃষ্টিতে অবশ্য রাজনীতিক কারণটাই প্রত্যক্ষ : আজেরবাইজানের ক্রমবর্দ্ধিষ্ণু গণতান্ত্রিকতা কিংবা বিশেষ ক’রে বামপন্থী ‘তুদে’ পার্টির অভ্যুত্থান এ-প্রসঙ্গে সহজেই মনে আসবে। কিন্তু এই পার্টি বা গভর্ণমেন্ট গঠনের নেপথ্যে সমগ্র ইরানী জনজাগরণের সূচনার কথাই এ-ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আমার বক্তব্য। আর ইরানের সাধারণ মানুষের এই যে নতুন চেতনা—প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী মালিকানার বিরুদ্ধে—সুস্থ ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় এর স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি ও প্রাণকেন্দ্রের সন্ধান মিলবে সাম্প্রতিক ইরানী কবিদেরই রচনায়, ফিরদৌসী, ওমর আর হাফিজ যাঁদের মহৎ উত্তরাধিকার।
একথা কেন বলছি তার একটি জোর নজীর সম্প্রতি আমার হাতে এসেছে। সেটি, কয়েকটি আধুনিক ইরানী কবিতার ইংরেজি তর্জমা। রচনাগুলি ‘আদাবিয়াৎ-ই -তুদে’ (গণসাহিত্য) শীর্ষক সাতচল্লিশ পৃষ্ঠার একটি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত এবং সবগুলিই গত দু’তিন বছরের মধ্যে রচিত। বইটির লেখকগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত পরিষদ-সদস্য ও আইনজীবী থেকে সাধারণ মজুর পর্যন্ত অনেকেই। রচনাগুলিতে সর্বত্র খুব একটা-কিছু উঁচুদরের কবিত্বের পরিচয় হয়তো মিলবে না কিন্তু একটা অসহ্য বেদনাবোধ যে এই চিরকেলে কবিতার দেশের গোলাপের- নির্যাসকেও সম্প্রতি গাঁজিয়ে তুলছে এবং শুধু গাঁজিয়েই তুলছে না সে যে এই গুলবাগের মামুলি জমিতে নতুন সারেরও যোগান দিচ্ছে তার খুব প্রত্যক্ষ প্রমাণ এতে সুস্পষ্ট ৷
তাই যখন আলী ফতেপুর বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবার প্রশ্নে বিভ্রান্ত ইঁদুরদের সঙ্গে অত্যাচারিত জনসাধারণের অসহায় বিভ্রান্তির নিষ্ঠুর তুলনা টানেন তখনও তিনি তাঁর রক্তাক্ত চেতনাকে পাঠকের মনে গভীরভাবে সংক্রামিত করতে পারেন: ...The thorn has entered into our foot. তাই পারভিন্ গুনাবাদীর রচনায় অসহায় বাপের সামনে মজুরের ছেলে যখন ইনিয়ে-বিনিয়ে নিজের দুঃখের কথা জানাচ্ছে তখন মজদুর ইউনিয়নে যোগ দিয়ে অত্যাচারীকে খতম করার সরল আবেদন প্রতিবেশী গৃহস্থের মুখে মোটেই বেমানান হয় না ৷
অন্যত্র, কোনো কোনো ব্যঙ্গ-কবিতায় নিছক শ্লেষই ঝিকিয়ে উঠেছে ছুরির শানানো ফলার মতো—এ-সব রচনার তীব্র তিক্ততাই অবশ্য উপভোগের রসদ। ইরানী লোক-কবিতার অনুসরণে রচিত এমনই একটি কবিতা ইংরেজি থেকে এখানে পুরোপুরি তর্জমা করে দিলুম।
ধনিক-সংগীত:
ওরে খেটে-খাওয়া কুলিমজুর চাষাভুষোর দল!
(বলি শোন্!)
তোরা কাজ করবি, আমরা লুটবো তোদের শ্রমের ফল ;
তোরা যোগান দিবি, আমরা পেটে পুরবো সে-সকল ;
আমরা তোদের চরিয়ে বেড়াই—আমরাই রাখাল !
(আহা বেশ বেশ!)
তোরা চরকা কেটে ফাঁসির রশি বুনবি চিরকাল—
আর আমরা তোদের মারবো কিংবা রাখবো কিছুকাল;
আমরা দেশের মাথা—রাখিস্ প্রতিবাদের বল ?
( বলি শোন্ !.)
সোনা ফলাবি মুঠো মুঠো—বেচবো চড়া দামে ;
লড়বি তোরা, মরবি তোরা দেশের দশের নামে
তখন তোদের ঘরের বৌ-ঝিরা আমাদের লাগবে ভোগে ৷
( আহা বেশ বেশ! )
চুপটি ক'রে মরবি, খালি বাজবে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment