নগ্ন পা
পাড়ার যুবক ছেলেরা একবার রাহেলার দিকে চোখ তুলে চাইল, তারপর আনোয়ারা, রওশনারা, জুলেখার পানে চোখ নামাল। সবার শেষে আবার আঁখিভরা কৌতূহল নিয়ে চোখ তুলল রাহেলার দিকে আর দৃষ্টিশক্তির সব ক্ষীণ রশ্মিগুলো স্থির হয়ে রইল সেই এক বিন্দুতেই।
চৌধুরীদের নতুন বউ রাহেলা। দুদিনও হয়নি এ পাড়ায় এসেছে, কিন্তু এরই মধ্যে বান্ধবীর ওর অভাব নেই। ওর অনুকরণে শাড়ি পরতে, পূর্ণ রঙের লিপস্টিক ঘষতে যুবতীমহলে লেগে গেছে প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্ব। রাহেলা ঘুরছে এদের ভিড়ের মাঝে জ্বলন্ত একটা নক্ষত্রের মতো। রক্তবর্ণ ক্রেপ-ডি-সিন শাড়িটা যখন-তখন ঘূর্ণি দিয়ে ফুলের ফোয়ারা তুলে আগুনের ফুলকির মতো কথা বলে চলেছে সবার সাথে। যখন-তখন ভেঙে পড়ছে রসিকতার উচ্ছৃঙ্খল হাসিতে। ওর চারধার আঁধার করে কোনো নতুন বউ-আবহাওয়া যেন সৃষ্টি হয়ে উঠতে পারেনি। নতুন শাশুড়ির কঠোরতাও যেন ভেঙে ফেলেছে অনেক আগেই।
নতুন বউয়ের বেহায়াপনার প্রতি কটাক্ষ করে দাদি-খালাম্মাদের কেউ কেউ মাথা নাড়তে লাগলেন। মৃদু সুরে নিচু আঘাতে দু-চারটা মতামতও প্রকাশ করলেন। স্নেহমাখা সুরে শাশুড়ি শুধু বললেন, ‘বউয়ের আমার কচি বয়স, তাই। দুদিন যাক, দেখো জ্ঞান হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
পাশের ঘরে রাহেলার শ্বশুর মসুদ হুসেন সাহেব গুড়গুড়িতে টান দিলেন আরেকটু জোরে। নিজের যুবক বয়সটাকে চোখ বন্ধ করে জীবন্ত করে তুলতে চেষ্টা করলেন একবার। না পেরে, ক্লান্ত হয়ে চোখ দুটো আর খুলতে চাইলেন না। আধঘুমো হয়ে গুড়গুড়িতে আবার মৃদু টান দিলেন, তারপর স্বল্প কাত হয়ে ইজিচেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়লেন।
ইউসুফ স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। পাতলা রোগা ছিপছিপে দেহের গড়ন। যতটুকু দেখে তার চেয়ে বেশি বোঝে। যতটুকু বোঝে তার চেয়ে বেশি বলে। আর যতটুকু বলে তার চেয়ে অনেক বেশি ভাবে। এককথায় ও ওর সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী, চপলগতি বড় বোন রওশনারার সংক্ষিপ্ত পুরুষ সংস্করণ।
সেদিন বিকেলবেলা ক্রিকেট মাঠে খেলা দেখতে দেখতে ওর মনের মাঝে হঠাৎ চমকে উঠল রাহেলার দেহ-ছন্দ। খেলার মাঠে আসবার পথে আপাকে রাহেলাদের বাড়িতে ছেড়ে আসবার সময় অল্প কয়েক মিনিটের উদাস দেখা স্মৃতিচিহ্নটা হঠাৎ লাল ক্রিকেট বলটার সাথে তীব্র গতিতে জ্বলে উঠল ওর মাথায়। বড় আপার রূপটাই এত দিন ওর শিল্পীমনের বেদিতে নিখুঁত রূপকল্পনার দেবী হয়ে পুজো পাচ্ছিল নিঃশব্দে। হঠাৎ ওর মনের মাঝের পারদভরা পাথরবাটিটা যেন ভেঙে চূর্ণ হয়ে ছিটকে পড়ল সবুজ মাঠে।
দুদিন পর। রওশনারাকে স্বীকার করতেই হলো যে ইউসুফের কথায় মোহ আছে। ও জানে সংলাপের মাঝে কোথায় এসে গলাটা করে তুলতে হবে সদ্য-ঘুমভাঙা, কোথায় স্বর নিচু করে খাঁক দিতে হবে ঘন ঘন। মেয়ে হয়েও রওশনারা হার মানল ছোট ভাইয়ের কাছে। বুঝল যে নিজের শ্রদ্ধার আসনটা ইউসুফের মনে নিষ্প্রভ হয়ে এসেছে অনেকখানি। আর এ-ও বুঝল যে রাহেলার সাথে ইউসুফ যখন কথা বলছে সাহিত্য কি সিনেমা নিয়ে, সেখানে রওশনারার কোনো বিশেষ প্রয়োজন নেই, প্রাণ নেই। ইউসুফের 'ভাবি' ডাকে রাহেলা যে ম্যাডোনা হয়ে ওঠে!
রাহেলা আর রওশনারা বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে শুয়ে লুডো খেলছিল। রওশনারাই যেন খেলছিল বেশি। রাহেলার আগ্রহ ততটা আছে বলে মনে হয় না। মাঝে মাঝে তাই ক্ষীণ অনিচ্ছার চিহ্ন নিয়ে বাঁ পা'টা বিছানার ওপর উঠছিল আর পড়ছিল। ফেনপুঞ্জের মতো মাঝে মাঝে শাড়ির গোছা জমে উঠছিল সংগঠিত পায়ের গোছার নিচে। ঘরের কোনায় ইউসুফ রাহেলার অ্যালবামটা দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ তুলে রাহেলার দিকে চাইল। ওর ইচ্ছে হয়েছিল ভাবিকে কিছু বলবে একটা বিশেষ ছবি সম্বন্ধে। আচমকা ও কথা বলতে গিয়ে থমকে গেল। ঘরের অন্য কোণে সিলাইরত রাহেলার শাশুড়িকে ও ভুলে গেল। একদৃষ্টিতে ও চেয়ে রইল শূন্যতে। মনের মাঝে মুহূর্তের জন্য ডি মেলোর নগ্ন পায়ের গোছাটা পেডেস্টালচ্যুত হয়ে গড়িয়ে পড়ল
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment