উদয়শঙ্কর
বড়দিনের মরশুমে এবার উদয়শঙ্করের নৃত্যানুষ্ঠান একটি বিশেষ আকর্ষণ। প্রায় ২০ বৎসর পূর্বে, শঙ্কর যখন উদয়শিখরে তখন তাঁর নৃত্য দেখবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই শ্রদ্ধা, বিস্ময়বোধ ও আকাঙ্ক্ষা নিয়েই গেলাম তাঁর নৃত্যানুষ্ঠান আবার দেখতে। কিন্তু অধিকাংশ দর্শকেরই মতো হতাশ হয়ে ফিরে এলাম। অনূভব করলাম উদয় আজ অস্তাচলে। এ অনুভূতির পেছনে বিক্ষোভ ততটা নেই যতটা আছে বেদনা।
রবীন্দ্রনাথের পর শঙ্করই ছিলেন বহির্বিশ্বে ভারতের সাংস্কৃতিক দূত। তাঁর আবির্ভাব ভারতের নৃত্য তথা সংস্কৃতি জগতে একটা মস্তবড় ঘটনা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য ও সঙ্গীতে, শিশিরকুমার মঞ্চে যে নবযুগের সৃষ্টি করেছেন, শঙ্কর তা করেছেন নৃত্যে। ক্ষয়িষ্ণু, সামন্ততন্ত্রী সমাজে, ভারতের ঐ বর্ষশালী প্রাচীন নৃত্যকলা আশ্রয় নিয়েছিল বারবণিতালয়ে। এই যুগে রবীন্দ্রনাথই প্রথম শান্তিনিকেতনে সমাজচ্যূত প্রাচীন নৃত্যকলাকে নতুন ভাবসম্পদ দিয়ে গোঁড়ামি ও জটিলতা থেকে মুক্ত করে পুনপ্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী হন। কিন্তু শঙ্করের মতো একজন অমিতবল নৃত্য-প্রতিভার প্রয়োজন ছিল রবীন্দ্রনাথের সেই স্বপ্নকে সফল করার জন্য।
শঙ্কর ছিলেন চিত্রকর। বিলাতে বিখ্যাত চিত্রকর রথেনস্টিনের ছাত্র। সদ্য ভারতপ্রত্যাগতা বিশ্ববিশ্রুত নর্তকী আনা পাভলোভার যাদুস্পর্শে তিনি হয়ে উঠলেন নৃত্যবিদ। অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও, এখানে উল্লেখযোগ্য, প্রায় দেড়শ' বছর আগে মনীষী গেরাসিম লেবেদফ্ কলকাতায় প্রথম এদেশীয় ভাষায় নাটক মঞ্চস্থ করে রুশ-ভারত মৈত্রীর রাখীবন্ধন সৃষ্টি করেছিলেন। এ-যুগেও রুশীয় নৃত্যবিদ পাভলোভা শঙ্কর প্রতিভাকে আবিষ্কার করে সেই রাখীবন্ধনকেই সোনালীসূত্রে অটুট করে গেছেন। পাভলোভা ভারতে মন্দির-গাত্রে, অজন্তাচিত্রে এবং দেবদাসীদের নৃত্যে' যে অপূর্ব দেহভঙ্গিমা দেখে যান তাতে তিনি এত মুগ্ধ হন যে, তা বিশ্বজনের কাছে প্রকাশ করার তাগিদেই শঙ্করকে আবিষ্কার করেন এবং শঙ্করের মধ্যেও সেই অনুপ্রেরণা সঞ্চারিত করতে সমর্থ হন।
প্রথম সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের পরে ভারতে যে মুক্তি-আন্দোলনের জোয়ার আসে তার খরস্রোত আমাদের সংস্কৃতির বদ্ধজলাশয়ে আনে নতুন সৃষ্টির ধারা। তখন সবচেয়ে অনাদৃত অথচ শক্তিশালী আমাদের নৃত্যকলা নতুন ভাবসম্পদে পুনরুজ্জীবনের আকুতিতে চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। শঙ্করই হলেন সেই ভগীরথ যিনি প্রাণহীন শাস্ত্রীয় অনুশাসনে আবদ্ধ প্রাচীন সমাজের গোমুখী থেকে নবনৃত্যের মন্দাকিনী ধারা দেশে বহন করে নিয়ে এলেন। তাই শঙ্করের আবির্ভাব অনেকটা আকস্মিক মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে যুগের তাগিদ ছিল তার পিছনে। শঙ্কর কোনো বিশেষ নৃত্যগোষ্ঠী বা 'স্কুল'-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেননি। কত্থক, কথাকলি, ভারতনাট্যম, মণিপুরী কোনো বিশেষ ধারাকেই তিনি আঁকড়ে থাকেননি। পারদর্শিতার দিক থেকেও দেখতে গেলে সেই সব নৃত্যগোষ্ঠীর গুরু এবং তাদের প্রধান শিষ্যদের তুলনায় শঙ্করের শিক্ষা অনেক কম। কথাকলিতে তাঁর গুরু শঙ্কর নাম্বুদ্রি কিংবা গোপীনাথ ভারতনাট্যমে বালসরস্বতী কিংবা রুক্মিণী দেবী, কত্থকে অচ্চনমহারাজ কিংবা মেনকা, মনিপুরীতে তাঁর গুরু আমবা সিং কিংবা থাম্বলস্না প্রমুখ নৃত্যবিদদের যে নিজ নিজ নৃত্যধারায় অসাধারণ দক্ষতা শঙ্কর তা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তবু শঙ্কর কি করে তাঁদের সবার উঁচুতে ভারতে নবযুগের নৃত্যগুরু হতে পারলেন? কারণ শঙ্কর সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন নৃত্যে ভাবসম্পদই (Idea-content) হল আসল কথা। মুদ্রার ব্যঞ্জনা বা দেহভঙ্গিমা তার বাহক হিসাবেই তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। তাই তিনি নতুন যুগের ভাবধারাকে ধরতে গিয়ে ভরতমুনি বা নন্দিকেশ্বর বর্ণিত নৃত্যশাস্ত্রের জটিল মুদ্রা বা করণ কৌশলে আবদ্ধ প্রাচীন নৃত্যধারাকে অন্ধভাবে অনুসরণ না করে সহজ ভাবপ্রকাশের মুদ্রা এবং দেহভঙ্গিমার প্রবর্তন করেন। নতুনকে প্রকাশ করতে প্রাচীন নৃত্যের বলিষ্ঠ ও প্রাণবন্ত সমস্ত ধারা থেকে উদার মনে আহরণ করেছেন। কথাকলির তেজস্বিতা, কত্থকের প্রাণচাঞ্চল্য বা মণিপুরীর লাস্য, যখন যা প্রয়োজন, তাঁর প্রখর সৌন্দর্যবোধকে প্রকাশের সাহায্য করেছে।
আবার অন্যদিকে ছেলেবেলা থেকেই রাজপুতানা কিংবা উত্তর-প্রদেশের লোকনৃত্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল গভীর। তাছাড়া মেহনতী মানুষের মিলিত কর্ম-জীবনের দেহভঙ্গিমায় যে নৃত্যের ছন্দ রয়েছে, শঙ্কর তা ধরতে পেরেছিলেন।
নতুন বিষয়বস্তুকে নৃত্যে রূপায়িত করতে, তাই তিনি উচ্চাঙ্গ নৃত্যকলার সাথে সমান মর্যাদা দিলেন সহজ প্রাণোচ্ছ্বাসী লোকনৃত্যের।
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment