অমল সেন : ব্যক্তি ও রাজনীতি
মহকুমা-শহর নড়াইল, রাজনৈতিক কারণে স্বনামে পরিচিত, স্থানীয় ভাষায় নড়াল। শহরটিকে ঘিরে বয়ে চলেছে বাঁকফেরা ছোটখাট একটি ঘরোয়া চরিত্রের নদী, নাম তার চিত্রা। সে নদীতে জেলেরা মাছ ধরে, সে নদীপথে কেরায়া নৌকো, লঞ্চ এবং ছোটখাট স্টিমারও চলে। শহর থেকে সামান্য দূরে স্থানীয় জমিদারদের কল্যাণে গড়ে উঠেছে ব্যবসা কেন্দ্র রূপগঞ্জ (পোষাকিনাম রতনগঞ্জ) বাজার। অন্যদিকে জমিদারদেরই প্রতিষ্ঠিত নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং কলেজিয়েট স্কুল।
সে সময় যাতায়াতের বিবেচনায় দুর্গম হলেও রাজনীতি ও সংস্কৃতিমনস্ক শহর নড়াইল। এর বিশেষ খ্যাতি প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঐতিহাসিক তে-ভাগা আন্দোলনের ঐতিহ্য সৃষ্টির কারণে। ওই আন্দোলনের খ্যাতিমান নায়কদের মধ্যে আমার জানা মতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অমল সেন, মোদাচ্ছের মুন্সী, নূরজালাল, রসিক লাল ঘোষ, হেমন্তকুমার সরকার। এ নামগুলো নড়াইল শহরের রাজনীতিমনস্ক ছাত্রযুবাদের মুখে উচ্চারিত হতে শুনেছি। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে কৃষ্ণবিনোদ রায়, সালামুদ্দাহার বা বটুক দত্ত প্রমুখের নাম।
এ লেখা মূলত পূর্বোক্ত সংগ্রামী নেতা অমল সেনকে নিয়ে, যাঁর জন্ম ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যু ২০০৩ সালে। তার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা বলি। আমি তখন নড়াইল সাবডিভিশনাল হাই স্কুলের ছাত্র। বড়দার চাকুরির সুবাদে ডাকবাংলোর বিশাল কম্পাউন্ডের পশ্চিম কোণে (কালিদাস ট্যাংক সংলগ্ন) আমাদের বাসা। রাজনীতি মনস্ক শহরে এসে ওই বয়সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্রে উদ্দীপ্ত। তবে গান্ধীমন্ত্রে দীক্ষিত নই। সে সময় আমার রাজনৈতিক উদ্দীপনার উৎস বিদ্রোহী কবি, 'অগ্নিবীনা' ও 'ভাঙার গান'-এর কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং কংগ্রেসী বাম ধারার ত্যাগী নেতা সুভাষচন্দ্র বসু।
নড়াইল শহরটা ছোটই বলা চলে। তবে গাছপালা-সমাচ্ছন্ন, ভালো লাগে দেখতে। সে ছোট শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জেলাবোর্ডের ডাকবাংলো। তার ঠিক পশ্চিম পাশে কাঁটাঘেরা সংরক্ষিত সুদর্শন পুকুর 'কালিদাস ট্যাংক'। ইট বাঁধানো প্রশস্ত ঘাট। ওই পুকুরের উঁচু পাড়ের চারপাশেই পুরু ঘাসের গালিচা। তার ওপর হেলান দেয়ার উপযোগী কয়েকটি শাল কাঠের বেঞ্চি পাতা। পুকুর পাড়টি সুশ্রী ছিমছাম, ছোট ছেলেমেয়েদের খেলার উপযোগী। আর বয়স্কদের বৈকালি আড্ডা বা বিশ্রামস্থান।
শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পূর্বোক্ত ডাকবাংলোর সামনে খোয়াবিছানা যে রাস্তাটা খেয়াঘাটের দিকে চলে গেছে তারই মাঝামাঝি হাতের ডান দিকে লম্বা মতো একটি একতলা দালান, অনেকটা জরাজীর্ণ চেহারা। এর ছাদ বরাবর বেশ উঁচুতে 'কৃষক সমিতি', 'মৎস্যজীবী সমিতি' ও 'কমিউনিস্ট পার্টির' নাম লেখা তিনটে সাইনবোর্ড—বোধহয় রোদবৃষ্টিতে অক্ষরগুলোর ধূসর বিষণ্ণ চেহারা।
এ পথ দিয়ে চলতে চলতে প্রায়ই সাইনবোর্ডগুলো চোখে পড়েছে। আমি তখন মার্কসবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। তবু রাজনীতির অনুরাগী ছাত্র বলেই বোধহয় একদিন কৌতূহলবশত ওই জীর্ণ বাড়িটাতে ঢুকে পড়ি। কারা ওই রাজনীতির ধারক-বাহক তা জানার ইচ্ছা নিয়ে। পরিচয় ঘটে সেখানে আলাপরত দু'জন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে। তাদের একজন মাঝারি গড়নের, মাথায় একরাশ কালো চুল, ঈষৎ গম্ভীর প্রকৃতির। দ্বিতীয় জন অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকায়, কিছুটা বয়স্ক চেহারা, মাথায় কাঁচাপাকা চুল। প্রথমজন অমল সেন, দ্বিতীয় বটুকেশ্বর দত্ত, সংক্ষেপে বটুদত্ত।
অমল সেনের ডাক নাম বাসু, তাই বাসুদা নামেই তখনকার রাজনৈতিক মহলে তার অধিক পরিচিতি। তার সঙ্গে সেদিন শহরের ছাত্র-রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা হয়। রাজনীতিতে আমার আগ্রহ দেখে তাকে খুশী খুশীই মনে হল। মুসলমান ছাত্রকে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে তৎপর দেখে হয়তো আমার সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রথম সাক্ষাতেই। প্রমাণ মেলে ক'দিন পরেই। হয়তো বাসুদা'র নির্দেশেই বিমল নামের একজন সিনিয়র ছাত্র আমাকে ডেকে নিয়ে কালিদাস ট্যাংক পাড়ে বসে মার্কসবাদী মতাদর্শ নিয়ে কয়েক দফা কথাবার্তা বলে। কিন্তু তাদের 'জনযুদ্ধের' রাজনীতি, ইংরেজ সহযোগিতা আমি মানতে পারি নি। তাই তাদের ডাকে সাড়া দেই নি। হ্যাঁ বা না কিছু না বলেই বিদায় নিয়েছি।
এরপর ২৬-এ জানুয়ারি কংগ্রেসী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাসুদা'র সঙ্গে আবার দেখা টাউন হল প্রাঙ্গনে। শহরের শীর্ষ কংগ্রেসী নেতারা
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment