বিড়াল
আগে ঠাকুরের কাছে বিড়ালের সম্বন্ধে অনেক কথা শুনিয়াছিলাম, দুঃখের বিষয় তাহার সবগুলি এখন মনে হইতেছে না। আজ যদি সেই বৃদ্ধা বাঁচিয়া থাকিতেন, তবে তাঁহার কাছে আসিয়া বিড়াল সম্বন্ধে তোমাদের কত বৃহৎ কুসংস্কার দূর করিতে পারিতে। অতি শৈশবকালে প্রথম যখন জানিতে পারিলাম যে, আমার একজন ঠাকুরমা আছেন, তখন হইতেই জানিয়াছিলাম যে, তাঁহার একটি বিড়ালীও আছে। ঠাকুরমা বলিলেই আমার মনে হয়, এক বুড়ি দরজার ধারে কুশাসন বিছাইয়া নামাবলী মাথায় দিয়া জপ করিতেছেন, আর এক বিড়ালী তাঁহার অঞ্চলে গা ঢাকিয়া হাত-পা গুটাইয়া চক্ষু মুদিয়া ধ্যানে মগ্ন রহিয়াছে।
ঠাকুরমা বিড়ালীকে আদর করিতেন, কিন্তু হুলো বিড়াল দুচক্ষে দেখিতে পারিতেন না। বিড়ালীর ছানাগুলি যখন বড় হইত তখনই হুলোগুলিকে ধরিয়া থলের ভিতরে পুরিয়া গ্রামান্তরে নির্বাসিত করা হইত।
কী করিয়া বাঘের মাসি বোনপোয়ের সঙ্গে বিবাদ করিয়া, মানুষের বাড়িতে আসিয়া বিড়াল রূপ ছদ্মবেশ ধারণ করিল, তদবধি কী প্রকারে বাঘ তাহাকে শাস্তি দিবার জন্য ক্রমাগত খুঁজিয়া বেড়াইতেছে এবং সেই ভয়ে বিড়াল কী প্রকারে নিজ অস্তিত্বের চিহ্ন পর্যন্ত লোপ করিবার জন্য গর্ত খুঁজিয়া মলত্যাগ করিয়া, তাহা আবার যত্নপূর্বক মৃত্তিকা দ্বারা আচ্ছাদন করেÑ ইত্যাদি সকল কথাই ঠাকুরমা আমাদিগকে বলিয়া গিয়াছেন। ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ এই সকল বিষয়ে মাথা ঘুরাইয়া অদ্যাপিও কোনো মীমাংসায় আসিতে পারেন নাই। তাঁহারা যদি আমার ঠাকুরমার নাতি হইতেন, তাহা হইলে শৈশবকালেই এ সকল প্রশ্নের অতি সন্তোষজনক উত্তর পাইতেন।
বিড়াল মানুষের ঘরের জন্তু, মানুষ তাহার নিকটে অনেক উপকারও পাইয়া থাকে, কিন্তু তথাপি বেচারিকেÑ কেন জানি না, কেহই দেখিতে পারে না। কুকুর এ বিষয়ে ভাগ্যবান। ঠাকুরমা বলিতেন, ‘কুকুরটি ইচ্ছা করে, বাড়ির কর্তার ছেলে হউক, তবেই তাহার খাবার সময় সে পেট ভরিয়া ভাল ভাল জিনিস খাইতে পাইবে। আর বিড়াল ইচ্ছে করেন গিন্নির চোখ কানা হউক, তবেই সে অলক্ষিতে মাছ ভাজা মুখে লইয়া চম্পট দিতে পারিবে।’
এদেশে যেমন, অন্যান্য দেশেও তেমনি কতকটা দেখা যায়। ইংলন্ড প্রভৃতি দেশের অজ্ঞ লোকেরা বিড়ালকে ভূত-পেত্নীর চর বলিয়া মনে করিত। পূর্বে সেখানকার লোকদের এ বিষয়ে অনেক কুসংস্কার ছিল। জাদুকর স্ত্রীলোকদের প্রত্যেকের এক-একটি করিয়া বিড়াল থাকিত। এরূপ গল্প আছে যে, একবার এই শ্রেণীর কতকগুলি স্ত্রীলোক একটি বিড়ালের নামকরণ করিয়া[১] রাত্রিযোগে তাহাকে লীব নগরের সামনে রাখিয়া আসিল। এরপর সেই নগরে এমন এক ঝড় হইল যে, তেমন ঝড় সেখানকার কেহ কখনও দেখে নাই। সাধারণ লোকের এই প্রকার কুসংস্কার থাকাতে অনেক সময় অনেক ভয়ানক ঘটনা হইত। কোনওস্থানে হয়তো ক্রমাগত কতগুলি দুর্ঘটনা হইল, হয়তো মহামারি উপস্থিত হইয়া অনেকগুলি গরু-বাছুর মরিয়া গেল, অমনি সকলে সিদ্ধান্ত করিয়া বসিল যে, নিশ্চয়ই কেহ জাদু করিয়াছে। গ্রামের এক কোণে এক গরিব বুড়ি বাস করে, সংসারে তাহার কেহ নাই। হয়তো তাহার মনটা একটু হিংসুকে, হয়তো গ্রামের একজন একদিন তাহাকে আপন মনে বকিতে দেখিয়াছে, আর একজন হয়তো বুড়িকে একদিন লাঠি হাতে করিয়া কাক তাড়াইতে দেখিয়াছে, গ্রামের লোকের বুড়ির ওপর ভারি সন্দেহ হইতে লাগিল। এরপর যদি বুড়ির একটা কালো বিড়াল থাকে, তবেই সর্বনাশ! বুড়ি নিশ্চয়ই ডাইনি। এমন সময় গ্রামের একজন চাষার মনে হইল যে, একদিন তাহার গোরু বুড়ির শসাগাছ খাইয়া ফেলিয়াছিল, সেই জন্য গোরুকে বুড়ি “তোর মুনিব উচ্ছন্নে যাউক” বলিয়া গালি দিয়াছিল, তারপর হইতে সেই চাষার ক্ষেতে ইন্দুর আসিয়াছে। আর রক্ষা নাইÑ বুড়ি ডাইনি, বুড়ির বিচার হইবে।
বিচারটা আবার কিরূপ জান? বুড়ির হাত-পা বাঁধিয়া তাহাকে পুকুরে ফেলিয়া দেওয়া হইবে, ইহাতে যদি সে ডুবিয়া মরে, তবে সে নির্দোষী, আর যদি তাহা না হয়, তবে সে দোষী, তাহাকে পোড়াইয়া ফেলা হইবে।
যাহা হউক, আমরা বিড়ালের কথা ভুলিয়া যাইতেছি।
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment