দুর্ভাগ্য
লেখক: আন্তন চেখভ
কারিগর গ্রিগরী পেত্রোভ, একজন অত্যুৎকৃষ্ট শিল্পকারী এবং একজন পাকা মদ্যপ ও নিষ্কর্মা বলে সারা গালচিনো জেলায় যার সুপ্রতিষ্ঠিত খ্যাতি, তার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে চলেছে জেমস্তভো হাসপাতালে। তাকে যেতে হবে ৩০ ভেস্ত (দৈর্ঘ্যের রুশীয়মাপ */, মাইল) আর পথ খুবই ভয়াবহ; এমন কি ডাক হরকরার পক্ষেও পেবে ওঠা ভার, সেখানে কারিকর গ্রিগরীর মতো একজন অলস মানুষের কথা না বলাই ভালো। একটা কনকনে তীব্র বাতাস তার মুখে এসে লাগছিল। তুষারকণাগুলো বিরাট বিবাট মেঘের আকারে ঘুরপাক খাচ্ছিল, আকাশ থেকে তৃষার পড়ছে না মাটি থেকে উঠছে তা' বোঝা কঠিন হচ্ছিল। তুষারের জন্য মাঠ-ঘাট, টেলিগ্রাফের পোষ্টগুলো কিংবা বনবাদাড়ও দেখা যাচ্ছিল না, আর বিশেষ করে যখন দমকা বাতাসের প্রচণ্ড একটা ঝাপটা এসে গ্রিগরীব ওপর পড়ছিল তখন স্রে-গাড়ির পাশের ডাণ্ডাগুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। নিস্তেজ, জরাগ্রস্ত ঘোটকী শম্বুকগতিতে এগিয়ে চলছিল। গভীর তুষারের মধ্যে থেকে একটি একটি করে পা তুলে আনা এবং মাথা নিচু করে এগিয়ে চলার জন্য তাকে তার সমস্ত শক্তি নিয়োগ করতে হচ্ছিল...। কারিগরের খুব তাড়া ছিল। সে তার আসনের ওপর অস্থিরভাবে থেকে থেকেই লাফালাফি করছিল, আর ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারছিল।
"কাঁদিস না, মাত্রিয়োনা,” বিড়বিড় করে সে বলছিল। "একটু সহ্য করার চেষ্টা কব। ভগবানের ইচ্ছায় আমরা হাসপাতালে পৌঁছে যাবো, আর ওরা তোকে চটপট দেখাশোনা করবে....। পাভেল ইভানিচ তোকে ওষুধ দেবে কিংবা ওদের বলবে তোর রক্ত বার করে দিতে, কিংবা ভাল মানুষের মতো তোকে স্পিরিট দিয়ে গা ঘষে দেবার ব্যবস্থা করে দেবে, ওটাতে যে ব্যথা কমিয়ে দেয়, সেটাতো তুই জানিস। পাভেল ইভানিচ তার যথাসাধ্য করবে...। সে চীৎকার করবে পা ঠুকবে, আর তারপর তার সাধ্যমতো করবে...। ভারী চমৎকার ভদ্রলোক, খুব দয়ালু, ভগবান তার মঙ্গল করুন...। সেখানে পৌঁছবামাত্রই সে দৌড়ে তার বাড়ির থেকে বেরিয়ে আসবে আর গাল দিতে শুরু করবে 'কি? কিসের জন্যে', সে চিৎকার করবে। আগে আসোনি কেন? আমি কি একটা কুকুর যে সারাদিন ধরে তোমাদের মতো শয়তানদের দেখাশোনা করবো? সকালে আসোনি কেন? বেরিয়ে যাও! কাল এসো!' আমি বলবো: 'ডাক্তার সাহেব! পাভেল ইভানিচ! হুজুর! 'হেট্-হেট্, শয়তান কোথাকার। কারিগর ঘোড়াটাকে চাবুক মেরে, স্ত্রীর দিকে না তাকিয়ে বকে চললো।
"হুজুর! ভগবান আমার সাক্ষী...। আমি পবিত্র ক্রুশের নামে শপথ করছি যে আমি ভোর সকালে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছি। ভগবান যখন রাগ করে এমন একটা তুষারের ঝড় পাঠিয়েছেন তখন সময মতো কি করে এখানে এসে পৌঁছাবো? আপনি নিজেই দেখতে পাবছেন...। একটা ভালো ঘোড়াই পারতো না আর আমার ঘোড়া তাকিযে দেখুন একবার! এটা ঘোড়া নয়, এটা একটা যাতা। পাভেল ইভানিচ, ভুরু কুঁচকে চিৎকার কবে বলবে 'আমি তোমায় চিনি। তোমরা সব সময় একটা হুতো খুঁজে বার করো। বিশেষ করে তুমি, গ্রিগরী! আমি তোমায় ভালো করে চিনি। মনে হচ্ছে পথে তুমি বার পাঁচেক মদেব দোকানগুলোয় থেমেছো।' আর আমি-বলবো: 'হুজুর! আমি কি একটা হৃদয়হীন পশু, একটা অধার্মিক? আমার গিন্নী মবমর, মবতে বসেছে, আব আমি কিনা মদের দোকানে ছুটবো! আপনি কি করে এসব কথা বলতে পারেন? মদের দোকান সব গোল্লায় যাক।' তখন পাভেল ইভানিচ ওদেব বলবে তোকে হাসপাতালের মধ্যে বয়ে নিয়ে যেতে। আর আমি তার সামনে নুয়ে পড়ে অভিবাদন করবো: 'পাভেল ইভানিচ! হুজুর! আমরা বিনীতভাবে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি! আমরা নির্বোধ এবং পাপী, আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের কড়া করে বিচাব করবেন না, আমরা তো মুজিক (রুশ কৃষক) মাত্র। আমাদের লাথি মেবে বার করে দেওয়াই উচিত, আর আপনি কিনা আমাদের সঙ্গে দেখা করবার জন্য তুষারের মধ্যে বেরিয়ে আসছেন।' আর পাভেল ইভানিচ এমন ভাব করবে যেন আমাকে মারতে যাচ্ছে, আর বলবে: "আমার পায়ের ওপর হুমড়ি খেযে পড়ার বদলে, তুমি বরং ভোদকা গেলা বন্ধ করো, বোকা কোথাকার, আর তোমার গিন্নীর প্রতি একটু করুণা করো। তোমাকে চাবকানো উচিত।' 'চাবকানো, পাভেল ইভানিচ, ভগবান জানেন আমাদেব চাবকানোই উচিত! কিন্তু আপনি আমাদের উপকারী, আমাদের বাপ, আপনার পায়ে না পড়ে, আপনাকে অভিবাদন না কবে থাকি কি করে? হুজুর! ভগবানের সামনে সত্য কথাই বলছি- এই কথার একচুল নড়চড় হলে আমার জিব যেন খসে পড়ে! আমার মাত্রিয়োনা এখানে যেমনি একটু ভালো হবে, যে মুহুর্তে সে আগের মতো হবে, আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে যা ফরমাশ করবেন আমি তাই বানিয়ে দেবো। একটা সিগারেট কেস, যদি বলেন ছোপ ছোপ বার্চগাছের ডাল দিয়ে, ক্রোকের বল, স্কিটল একেবারে বিদেশী জিনিসের মতো সরেস করে বানিয়ে দেবো...। আমি আপনার জন্য সব করবো। আর আমি আপনার কাছ থেকে এক কোপেকও নেবো না।" ঐ রকম সিগারেট কেসেব জন্য মস্কোতে আপনার কাছ থেকে চার রুবল থেকে আমি এক কোপেকও নেবো না।" আর ডাক্তার হাসবে আর বলবেঃ "হয়েছে? হয়েছে? হতেই হবে তুমি এত মদ খাও এটাই যা দুঃখের বিষয়।' ভদ্র লোকেদের সঙ্গে কি করে কথা বলতে হয তা আমি জানি গো, গিন্নী। এমন কোনো ভদ্রলোক নেই যাকে পটাতে না পারি। এখন ভগবান যদি একটু দেখেন যে আমরা যেন পথ না হারাই। তুষারের ঝড় কি রকম। তুষারই দেখতে পাচ্ছি না।"
কারিগর বিড়বিড় করে অনর্গল বকে চললো, যান্ত্রিক ভাবে বকুনি চালিয়ে গেলো, নিজের অস্বস্তি চাপা দেবার জন্য। যদিও তার কথার পুঁজি ছিল এবং ইচ্ছামতো সেগুলো ব্যবহার করার ক্ষমতাও ছিল কিন্তু তার মাথার মধ্যেকার চিন্তা এবং প্রশ্নগুলোর সংখ্যা ছিল আরো বেশি। 'আচম্বিতে বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো দুঃখ এসে কারিগরকে চেপে ধরেছে, সে একেবারে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে, সেটা আর কাটিয়ে উঠতে পারছে না, চিন্তা করার জন্য আবার তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারছে না। এ যাবৎ সে একটা নিশ্চিন্ত জীবন-যাপন করেছে, এক রকমের পানাসক্ত অসাড়তার মধ্যে দিয়ে, দুঃখ অথবা সুখ যে কি তা অনুভব না করেই, হঠাৎ এখন সে মনের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণাভোগ করছে। ভাবনা-চিন্তাহীন নিষ্কর্মা এবং মদ্যপ হঠাৎ নিজেকে এখন একজন কর্মব্যস্ত, চিন্তাবিষ্ট ব্যক্তির অবস্থায় দেখতে পাচ্ছে, একজন ব্যক্তি যে একটা তাড়াহুড়ার মধ্যে রযেছে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে।
কারিগরের যতদূর মনে পড়ে দুঃখের শুরু তার আগের দিন সন্ধ্যাবেলা থেকে। বরাবরের মতোই মাতাল হয়ে আগের দিন সন্ধ্যাবেলায় যখন সে বাড়ি ফিরলো আর পুরনো অভ্যাস মতো, গাল দিতে আর ঘুঁষি ছুঁড়তে লাগলো, তার স্ত্রী এমন ভাবে তাব যন্ত্রণা দাতার দিকে তাকালো যেমন করে আগে কখনো সে তাকাযনি। তার বার্দ্ধক্যগ্রস্ত চোখদুটোর ভাব হতো একটা কুকুর, যাকে যথেষ্ট প্রহার করা হযেছে এবং অল্প পরিমাণে খেতে দেওযা হয়েছে, তার মতো লাঞ্ছিত এবং ভীরু কিন্তু এখন তাদের ভাব হলো কঠিন এবং স্থির, আইকনের ঋষিদের কিংবা মরণোন্মুখ লোকেদের চোখেব মতো। ঐ অদ্ভুত, অস্বস্তিকর চোখদুটো দিয়েই দুঃখের সূচনা হয়েছে। হতবুদ্ধি কারিগর এক প্রতিবেশীকে একটা ঘোড়া ধার দেবার জন্য অনুরোধ করেছিল। আর এখন তার স্ত্রীকে সে হাসপাতালে নিযে চলেছে এই আশায় যে পাভেল ইভানিচ তার ওষুধের গুঁড়ো আর মলম দিযে বৃদ্ধার চোখদুটোয় পরিচিত দৃষ্টি ফিরিয়ে আনবে।
'দেখিস, মাত্রিয়োনা,' সে বিড়বিড় করে বললো, 'প্যাভেল ইভানিচ যদি তোকে জিজ্ঞাসা করে আমি তোকে পিটাই কি না তা হলে বলবি 'না, না, হুজুর। আর আমি তোকে আর কখনো পেটাবো না। পবিত্র ক্রুশের দোহাই আমি আর তোকে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment