খগেন্দ্রনাথ মিত্র

কর্তাবাবুর অনেক সম্পত্তি, বয়সও অনেক, পাড়ার লোকে খাতিরও করে খুব। বাড়িতে চাকর-বাকর, ঝি-রাঁধুনিও কম নয়। তারা থাকে মস্ত তেতলা বাড়িখানার নিচুতলার অন্ধকার দিকটাতে। আর, তিনি তাঁর পরিবারবর্গসহ থাকেন, মানে ছেলে-মেয়ে, পুত্র-পুত্রবধূ, নাতি-নাতনী প্রভৃতিদের নিয়ে দোতলা-তেতলা জুড়ে।

সব কালেরই পয়সাওলাদের নাতি-নাতনীরা হয় এক একটা ক্ষুদে নবাবজাদা ও নবাবজাদী। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ শখ করে গরিবী চালও চালে। যেমন কর্তবাবুর নাতি তরু, নাতনী অরু। ওরা দু'জনে খুড়তুতো ভাই-বোন। ওদের অনেক বন্ধু-বান্ধবী। তারা কেউ পয়সাওলা, কেউ আধা-পয়সাওলা, কেউ আধা-গরীব, কেউ পুরো গরীব। তরু-অরুদের বাড়িতে তিনখানা মোটর, চারখানা স্কুটার ও তিনখানা বাইসাইকেল। তবু ওরা তাতে চড়ে না, চড়ে ট্রামে-বাসে, ট্যাকসিতে, রিশয়। দরকার হলে হাঁটতেও পিছপা হয় না। ওরা সবে কলেজে ঢুকেছে। সুতরাং পোশাক-আশাক, চুল-জুলপি যে স্কুলের খোকা-খুকুদের মতো হতে পারে না, তা কি বিশেষ করে বলার দরকার? তাই কখন কখন দু'ভাই-বোন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলে পিছন থেকে অরুকে মনে হয় তরু, তরুকে অরু। সকলেরই একটা না একটায় বেশি টান থাকে। ওদের শখ সিনেমা দেখায়, বিশেষ করে হিন্দী সিনেমায়, সিনেমার হিন্দী টপ্পা গানে। এতে দোষের কী থাকতে পারে? দোষের হলে ভারত জুড়ে এমন কাণ্ডই হতো না। গান মানেই হিন্দী টপ্পা!

আর, বুড়ো কর্তবাবুর হয়েছে খাবার দিকে টান। বুড়ো হলে আর পয়সা থাকলে এমনটা হয়ে থাকে। রোজ রকম রকম ব্যঞ্জন, দুধ-ঘি'র খাবার তাঁর চাই-ই। তাঁর জন্যে একটা আলাদা রাঁধুনি আছে। তার তিন কুলে কেউ নেই। গিন্নীমা তিন বছর আগে গঙ্গার ঘাট থেকে তাকে 'পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার' মতো একদিন কুড়িয়ে এনেছেন। মানুষটির মুখে কথা নেই, রাঁধেও ভাল, জানে ও শিখেছেও অনেক। কিন্তু সব দিন টক-নুন-ঝাল সমান হয় না! কর্তা সেদিন খেপে যান, বলেন- ‘দূর করে দাও। আমার পয়সা সস্তা?’

সত্যি তো! পয়সা খরচ করে শখের খাবার যদি খাওয়া না গেল তবে রাগ হবারই তো কথা। বেচারী রাঁধুনি রান্নাঘরে কোণে দাঁড়িয়ে নীরবে কাঁদে।

গিন্নীমা কর্তাকে ঠাণ্ডা করেন। তার চাকরি যায় না।

এখন, কর্তাবাবু বাড়ির মধ্যে দুটি প্রাণীকে বেশি ভালবাসেন। একটি তাঁর শখের কাবুলি বেড়াল-শের খাঁ, আরেকটি তাঁর নাতনী অরু। বেড়ালটা দু'বেলা তাঁর খাবার টেবিলের এক কোণে দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকে; আর দুটি বেলা তিনি ভাল খাবারের খানিকটা তাকে দেন ও খানিকটা অরুর জন্যে রাখেন। বেড়ালটা রুচি থাকলেও রাত্রে অরুর প্রায়ই খাবারে অনিচ্ছা হয়। শুনে কর্তবাবু চিন্তায় পড়েন; বলেন-'ডাক্তার দেখাও। নির্ঘাত ওর অসুখ করেছে।

কর্তবাবু তো সিনেমা দেখেন না! দেখলে, চোখে পড়তো সিনেমার মতো তার পাশে রেস্তরাঁও 'ফুল'। যেখানে যত রেস্তরাঁ- হোটেল আছে সে সব চলে, আধা-গরীব আর গরীবের পয়সায়। সে পয়সার জোগাড় হয়-না থাক। আর, বড় বড় হোটেল চলে পয়সাওলাদের টাকায়। অরু পয়সাওলার নাতনী হলেও আগেই বলেছি, তার গরিবী চাল, যে গরিবী হঠাতে বহু তক্লিফ সইতে ও কথা শুনতে হচ্ছে। তাছাড়া, রেস্তরাঁর চপ-কাটলেট, কষা মাংসের কাছে বাড়ির তৈরি যে কোন খানা মনে হয় ভূষিমাল বা গরুর খাদ্য।

কর্তবাবু যে রাতে পেত্নী দেখলেন, তার আগে রাঁধুনিটা পর পর তিন রাত রান্নায়, পরিবেশনে গড়বড় করে দারুণ ধমক খেলই, বেচারীর চাকরিটিও অরু। সকলেরই একটা না একটায় বেশি টান থাকে। ওদের শখ সিনেমা দেখায়, বিশেষ করে হিন্দী সিনেমায়, সিনেমার হিন্দী টপ্পা গানে। এতে দোষের কী থাকতে পারে? দোষের হলে ভারত জুড়ে এমন কাণ্ডই হতো না। গান মানেই হিন্দী টপ্পা!

আর, বুড়ো কর্তবাবুর হয়েছে খাবার দিকে টান। বুড়ো হলে আর পয়সা থাকলে এমনটা হয়ে থাকে। রোজ রকম রকম ব্যঞ্জন, দুধ-ঘি'র খাবার তাঁর চাই-ই। তাঁর জন্যে একটা আলাদা রাঁধুনি আছে। তার তিন কুলে কেউ নেই। গিন্নীমা তিন বছর আগে গঙ্গার ঘাট থেকে তাকে 'পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার' মতো একদিন কুড়িয়ে এনেছেন। মানুষটির মুখে কথা নেই, রাঁধেও ভাল, জানে ও শিখেছেও অনেক। কিন্তু সব দিন টক-নুন-ঝাল সমান হয় না! কর্তা সেদিন খেপে যান, বলেন- ‘দূর করে দাও। আমার পয়সা সস্তা?’

সত্যি তো! পয়সা খরচ করে শখের খাবার যদি খাওয়া না গেল তবে রাগ হবারই তো কথা। বেচারী রাঁধুনি রান্নাঘরে কোণে দাঁড়িয়ে নীরবে কাঁদে।

গিন্নীমা কর্তাকে ঠাণ্ডা করেন। তার চাকরি যায় না।

এখন, কর্তাবাবু বাড়ির মধ্যে দুটি প্রাণীকে বেশি ভালবাসেন। একটি তাঁর শখের কাবুলি বেড়াল-শের খাঁ, আরেকটি তাঁর নাতনী অরু। বেড়ালটা দু'বেলা তাঁর খাবার টেবিলের এক কোণে দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকে; আর দুটি বেলা তিনি ভাল খাবারের খানিকটা তাকে দেন ও খানিকটা অরুর জন্যে রাখেন। বেড়ালটা রুচি থাকলেও রাত্রে অরুর প্রায়ই খাবারে অনিচ্ছা হয়। শুনে কর্তবাবু চিন্তায় পড়েন; বলেন-'ডাক্তার দেখাও। নির্ঘাত ওর অসুখ করেছে।

কর্তবাবু তো সিনেমা দেখেন না! দেখলে, চোখে পড়তো সিনেমার মতো তার পাশে রেস্তরাঁও 'ফুল'। যেখানে যত রেস্তরাঁ- হোটেল আছে সে সব চলে, আধা-গরীব আর গরীবের পয়সায়। সে পয়সার জোগাড় হয়-না থাক। আর, বড় বড় হোটেল চলে পয়সাওলাদের টাকায়। অরু পয়সাওলার নাতনী হলেও আগেই বলেছি, তার গরিবী চাল, যে গরিবী হঠাতে বহু তক্লিফ সইতে ও কথা শুনতে হচ্ছে। তাছাড়া, রেস্তরাঁর চপ-কাটলেট, কষা মাংসের কাছে বাড়ির তৈরি যে কোন খানা মনে হয় ভূষিমাল বা গরুর খাদ্য।

কর্তবাবু যে রাতে পেত্নী দেখলেন, তার আগে রাঁধুনিটা পর পর তিন রাত রান্নায়, পরিবেশনে গড়বড় করে দারুণ ধমক খেলই, বেচারীর চাকরিটিও দেখলো কর্তাবাবু বিছানায় বসে দু'হাত ছড়িয়ে হাঁ করে কাঁপছেন, চোখ দুটো কপালে উঠেছে; আর তাঁর সামনে কাঁচের গেলাস হাতে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে অরু।

হৈচৈতে কর্তাবাবুর সম্বিৎ ফিরে এলো। তিনি অবাক হয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন!

অরুর বাবা জিগ্যেস করলেন, ‘বাবা, আপনার কী হয়েছে?’

কর্তাবাবু বললেন, ‘ দেখলুম বামনীটা এসে মাইনে চাইছে।’

অরু বললে, ‘দাদু, বামনী কোথায়? আমি সিনেমা দেখে ফিরে আপনার কুঁজোর ঠাণ্ডা জল খাবো বলে যেই জল গড়াতে গেছি অমনি আপনি উঠে বসে গোঙাতে লাগলেন-এ ঘরে তো আর কাউকে দেখিনি। আপনি কী আমাকে পেত্নী ঠাউরেছেন?’

কর্তাবাবু উত্তর দিলেন না।

তারপর মনে মনে হাসতে হাসতে যে যার মতো নিজ নিজ জায়গায় ফিরে গেল। আলো নিভলো, জ্বলতে লাগলো কেবল কর্তাবাবুর ঘরের আলোটি। তিনি ভূত-পেত্নীতে বিশ্বাসী, তাঁর কথায় বিশ্বাস হলো না।

রাঁধুনির বোনের বাড়ির ঠিকানা না জানায় সরকারকে তার শ্রাদ্ধের দিনে কালীঘাটে গিয়ে তিন মাসের মাইনের পূজো দেবার হুকুম দিলেন।

সরকার মনে মনে খুশি হয়ে বললেন-" যে আজ্ঞে,” এবং নির্দিষ্ট দিনে কালীঘাটে গিয়ে নিজের নামে পাঁচ সিকের পুজো দিয়ে এসে কর্তাবাবুকে প্রসাদ দিলে। কর্তাবাবু নিজের ও নাতনীর মাথায় প্রসাদ ঠেকিয়ে তার ও নিজের মুখে কিছু দিলেন। তারপর থেকে কর্তাবাবুর ঘরে আর কখনও পেত্নী ঢুকেছে, এমন কথা শোনা যায় না।

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion