সময় নিয়ে খেলা
লেখক: অতীন্দ্রিয় পাঠক
সারাদিনে নবেন্দুর অনেক সময়। তুলনায় কাজ ও কাজের বিচিত্র কম। প্রতি কাজে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী সময় সে বরাদ্দ করে। এই অতিরিক্ত বরাদ্দ করেও অধিকাংশ দিন উদ্বৃত্ত থাকে আরো অনেক সময়। এই উদ্বৃত্তের ভেতরে নিজেকে রেখে সময়ের আন্দোলন সে অনুভব করে।
নবেন্দর মাঝে মাঝে মনে হয়, এই যে অপচয়, সময়ের মূল্য এতে কমে যাচ্ছে কিনা। অনেকে বলাবলি করে, নবেন্দর সময়ের কোনো দাম নেই।
কিন্তু সময়ের দাম অর্থে কী! সময় থাকে বোধের ভেতরে, কখনো মনে হয় সময় পেরিয়ে যাচ্ছি আবার কখনো সময় এগিয়ে যায়, কোনো দাম দিতে হয় না এর জন্যে। কোনো কোনো কাজ এর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া যায় এইমাত্র। বরং কোনো কাজে না জড়িয়ে নিজেকে স্বচ্ছন্দ এই সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে রাখলে, এর আন্দোলনে সময়ের ছড়িয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে, এর কোনো বিনিময়মূল্য হয় না।
সময়ের দাম বিষয়ে এই কারণে ও বিশেষ গুরুত্ব দেয় না, সময়ের কোনো অভাব নেই ওর, তবু এর থেকে কিছু অংশ এ বিষয়ে আলোচনার জন্যে হয়ত বরাদ্দ করতে পারে, কিন্তু যারা বলাবলি করে তাদের সময়ের খুব অভাব তাই এ নিয়ে আর এগোনো হয় না, কোনো মীমাংসা হয় না।
আসলে নবেন্দু সময়ের সংগে কাজ জুড়ে দিয়ে খেলা করতে ভালো-বাসে। এই কাজে সময় তার মোড়ক খুলে ছড়িয়ে যায় এবং কোনো কাজের গতিবিধি বা উদ্দেশ্য এসবের অর্থ নেই নবেন্দুর কাছে। সমস্ত দিনে সরল ও যৌগিক মিলিয়ে কিছু কাজ ও করে। সরল কাজের এই রকম উদাহরণ একটা নেয়া যাক, যেমন ঘুমনো। ডাক্তার বন্ধু পরামর্শ দিয়েছিল, আট ঘণ্টা দিনে ঘুমোবেন। অর্থাৎ আট ঘণ্টা সময়ের বিনিময়-মূল্য হবে একদিনের ঘুম, কিন্তু এর কি অর্থ! ঘুমনো কাজটা আপাত-সহজ মনে হলেও প্রকৃত অর্থে সহজ নয়। এর ভেতরে অন্য সব কাজের প্রতি বিরক্তি ধরা থাকে, স্বপ্ন দ্যাখার মত রহস্যময় ব্যাপার ঘটে, চিত হয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করে মনের স্থিতাবস্থাগুলি পাল্টে দেবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এদের সংগে সময়ের কী সম্পর্ক! বিরক্তি বা স্থিতাবস্থা বদলানো এটা সময়ের ওপর নির্ভরশীল নয়, মনের নানা রহস্যময় আচরণে বিভিন্ন মাত্রায় এরা থাকে এবং মাত্রা বদল করবে এটা আগে থেকে বোঝা যায় না। স্বপ্নের আচরণ আরো অদ্ভুত। পনের মিনিট সময়কে হয়ত তিনদিনে বদলে দিতে পারে, সময় তখন অন্য মাত্রায়। বিনিময়মূল্য তবে কিভাবে ধার্য হতে পারে! পাশাপাশি আর একটা উদাহরণ নেয়া যাক, একটি যৌগিক কাজ, যেমন বাথরুমে যাওয়া। পরপর কতগুলি কাজ এবং মোট সময় বরাদ্দ হয়ত এক ঘণ্টা। ধরা যাক, প্রথম কাজ আরম্ভ হল দাঁত মাজা। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাঁতে ঘষতে ঘষতে পেস্টের গন্ধে অতসীর কথা মনে পড়ল। ও বলেছিল, কলগেট দিয়ে না মেজে বিনাকা ফুরাইড দিয়ে মাজতে, কারণ দাঁতের এনামেল ঠিক থাকে। বলেই হেসে ওর দাঁতের এনামেল দেখিয়েছিল। এরপর ক্রমে দাঁত চোখ কপাল চুল গলা এসব একে একে এসে সময় আর তার সম্পর্ক রাখতে পারবে না। এখানে সময় কীভাবে তার বিনিময়ের মান ঠিক রাখবে! চিন্তা ভাবনা গতি, তার সংগে যে সময়সম্পর্ক', বাথরুমের সময় বরাদ্দের সংগে কীভাবে তার সংগতি থাকা সম্ভব। হয়ত দাঁত ধুয়েই ঘরে ফিরে আসতে হবে এবং এ্যালবাম খুলে অতসীর ছবি, অতসীর চিঠি এবং এইসব কাজের সংগে কোন সময়ের বিনিময়মূল্য সে ঠিক করতে পারে! বাথরুমের বাকি কাজগুলি কখন হবে, কোন সময়ে, তা নিয়ে নবেন্দুর তখন কোনো মাথাব্যথার কারণ নেই। নবেন্দু ভেবে পায় না সময়ের এই নিরপেক্ষ নিরিখকে কেন অযথা অন্যান্য কাজকর্মের সংগে জুড়ে দেবার চেষ্টা হয়।
অতসী মাঝে মাঝে চলে আসে নবেন্দুর কাছে।
হাতব্যাগ টেবিলে রেখে তার ভেতর থেকে ছোট রুমাল বের করে কপালের ঘাম মোছে। কুজো থেকে গ্লাসে জল ভরে জিজ্ঞেস করে, খাবে?
প্লাসে জল খেয়ে গ্লাসটা টেবিলে রাখে, চেয়ারে বসে।
সময় পেলেই তোমার কাছে চলে আসি। এখানে এলে বিশ্রাম হয় একটু।
এত কাজ তোমার কেন বলতো? তিনদিনে মাত্র এটুকু সময় বাঁচে!
কী করব বল। আমাকে অনেক কাজ করতে হয়। তোমার মত তো--নবেন্দুর কাজ এখন অতসীকে দ্যাখা। এর জন্যে সময়ের কোনো নির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই। কিন্তু অতসী উসখুস করে, ওর আরো কাজ পড়ে আছে।
নবেন্দ কিছুই বলে না। শুধু দ্যাখে আর হাসে। কোনো শব্দ হয় না। সময়ের স্বচ্ছ স্রোতের মধ্যে মিশে থাকে।
অতসীর কপালের একপাশটা সামান্য উঁচু। চুলের সিথিটা মাঝামাঝি নয়: টিপটাও মাঝখানে পরতে পারেনি। শাড়িতে সবুজের ছোপ আছে তাই সবুজ ব্লাউজ আর সবুজ টিপ। বাঁদিকের ভ্রুতে চুল বেশী ঘন। নবেন্দ, নিশ্চিত যে অতসীর চোখ দুটো সমান অক্ষে নয়, কিন্তু রাগলে, আন্তরিক হলে বা লজ্জা পেলে চোখ ঠিক ঠিক ভাষায় কথা বলে। দেখতে দেখতে ওর মুখের বিচিত্র ফুটে উঠছে ক্রমশঃ। কপালের বাঁ পাশে আর ডানগালের নিচের দিকে ছোট কাটার দাগ। বাঁ গালে তিলটা স্পষ্ট কিন্তু নিচের ঠোঁটের তিল অস্পষ্ট। মুখ বেশ ফর্সা কিন্তু চিবুক আর নীচের ঠোঁট, এর মাঝামাঝি জায়গাটা সামান্য কালচে। ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙ। অতসীর দাঁতগুলি সুন্দর, হাসলে মুখের আদল পাল্টে যায়। সময়ের যেন মাত্রা বদল হয়। তখন গলায় তিনটে ছোট ছোট ভাঁজ পড়ে। একট, কালচে ঐ জায়গাটা। গলা থেকে হাতের দিকে ছড়িয়ে যাওয়া অংশটা খুব ফর্সা দ্যাখাচ্ছে, একটু লালচে।
কী দ্যাখ বলতো, আমার অস্বস্তি হয়। চা খাবে?
অতসী চা করতে চলে যায়। কিন্তু চা খাওয়া এখন নবেন্দুর কাজের কোনো অংশ নয়, কোনো প্রস্তুতি নেবার নেই। অতএব অতসীর মুখটা নিয়ে আরো গড়তে বসে।
নবেন্দর সামনে এখন চায়ের কাপ। তার সামনে এখন অতসীর মুখ। এতক্ষণে গড়ে নেওয়া অতসীর মুখটা এখন সে সামনে অতসীর মুখে বসাতে থাকছে।
নতুন কলেজের চাকরিটা নিলে না কেন?
বাসে করে যেতে হত, অতিরিক্ত আর একটা কাজ। এর চেয়ে হেটে
এখানেই ভাল।
ভবিষ্যতের কথা তুমি ভাবো না?
ভবিষ্যত এমনিই আসে, ভাবাভাবির কী আছে। সময়ের সংগে আমার কাজের কোনো সম্পর্ক' যখন নেই, কাজ আর সময়ের বাঁধাবাঁধির দরকার কী।
কী যে বল বুঝতে পারি না। একটু সহজ করে বল।
নবেন্দু হাসে। হাসিতে সময় পার হতে থাকে।
বাড়ি থেকে একদম বেরোও না কেন বল তো?
কেন জানি না, খুব ভয় হয়, যদি সময় হারিয়ে যায়।
তুমি না সত্যি-
অতসী নবেন্দুর পাশে এসে বসে।
কোথাও বেড়াতেও তো যেতে পার।
ভিড় আমার ভাল লাগে না। সমুদ্রে পাহাড়ে গিয়েছি, এই ঘরের মতই ঘরে বসে যেমন সময়টা স্বচ্ছ হয়ে আসে, সমুদ্রের ঢেউয়ে বা পাহাড়ের উচু নিচুতেও একই রকম স্বচ্ছ হয়। তবে আর পরিশ্রমে কী দরকার, ঘরেই ভাল আছি।
তুমি সত্যিই আশ্চর্য'। আমার সময় হয়ে গেল, চলি।
তুমি অদ্ভুত কথা বল দেখছি। সময় আবার হবে কি?
যাক গে, তোমার সাথে কথা বলা অসম্ভব। চলি, আবার আসব।
নবেন্দু হাসে, অতসীর চলে যাওয়া দ্যাখে।
নবেন্দুর ছোটবেলার বন্ধু মনীশ। বারো বছর পর কানাডা থেকে ফিরেছে। নানা ধরনের ব্যবসা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকে। ওর হাতে একেবারে সময় নেই। জীবন খুব একটা বড় হয় না, তার ওপর অনিশ্চিত। ওর মধ্যে কাজে লাগানোর মত সময় সামান্য কিছু অংশ মাত্র। অথচ অনেক কাজ করতে হবে। এত কাজ এবং তাদের জন্য সময়
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment