অনুভবী কৃষণ চন্দর
মধুসুদন:আমি কৃষণজীর সঙ্গে পরিচিত হই ১৯৪০ সালে। সেই সময় আমি ২৮ বছরের যুবক এবং একমাত্র কৃষণজীর সঙ্গে মিলবার জন্য আমি দিল্লী থেকে লাহোর আসি। কৃষণজী তখন লাহোর অল ইন্ডিয়া রেডিওতে চাকরি করেন। আমাকে দেখে উনি অবাক হন। আমি তো সামান্য যুবক। আমার নিজের লেখা কিছু গল্প দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি পড়ে আমাকে বলেন, মধুসুদন তুমি লেখাতে নিজের স্টাইল তৈরী করো। একটা ব্যাপার পরিষ্কার ছিলো, তখন আমি কৃষণজীর লেখার দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত এবং তাই আমার নিজের লেখার মধ্যে প্রায় পুরোটাই তাঁর স্টাইলের ছাপ পড়েছিলো। এর পর তিনি একই কাজ নিয়ে দিল্লী রেডিওতে চলে আসেন। কৃষণজী দিল্লী এলে সপ্তাহে প্রায় পাঁচ দিন তাঁর কাছে যেতাম আলোচনা কথাবার্তার জন্য। এই সময়টা ১৯৪১-৪২ সাল। আমি ক্রমশ নিজের লেখার শৈলী পরিবর্তন করতে শুরু করি, একটা পথ খুঁজি। এই সময়ের লেখা পড়ে কৃষণজী খুবই আনন্দিত হন এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত আমার লেখার ক্ষেত্রে নিজস্ব একটা ধারা তৈরী হচ্ছে। তিনি এই উপদেশ এই কারণেই কেবল দেননি যে একজন লেখকের লেখার স্টাইল ও প্যাসন-এ লেখকেরই একটি ধারা তৈরী হয় বরং শিল্প সাহিত্যেই নতুন ধারা তৈরী হতে পারে।
⇝কৃষণ চন্দর-এর চলচ্চিত্র ভাবনা ও নির্মাণ সম্পর্কে বলুন।
মধুসুদন:অনেক মানুষ জানেন না যে কৃষণজী নিজেই ফিল্ম প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছিলেন বম্বেতে, তাঁর নিজেরই স্ক্রিন প্লে থেকে। ছবির নাম ছিল 'রাখ'। তাঁর ভাই, মহেন্দ্রনাথ যিনি নিজেও একজন লেখক ছিলেন, তিনি এই ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ছবিটি উন্নত গুণমানের ছিলো। আজকের দিনের আর্ট ফিল্ম বলতে ঠিক যা বোঝায় তা নয়। তবে তা স্টারকাস্ট-এর উপর নির্ভরশীল ছবি নয়। নিজেদের পরিচিত জগতের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তিনি নিয়েছিলেন। কিন্তু স্টারডম ছবি বলতে যা বোঝায়, তার একটা নির্দিষ্ট ফরমূলা নাচ-গান-মারামারি ইত্যাদি—কেউ আশা করবেন না কৃষণজী এই ধরনের ছবি তৈরী করবেন। এই ছবিতে মহেন্দ্রনাথ পূর্ণ সহযোগিতা করেন। আর একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন কে এস গ্রেবাল; উনি ছিলেন ছবিটির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বাণিজ্যিক সফল ছবির পরিচালক না হলেও, কৃষণজী চিত্রনাট্য লেখায় সফল হয়েছিলেন। ‘মনচলি’ বলে যে ছবিটি হয়—সিলভার জুবিলি হয়েছিলো। একটি সফল চিত্রনাট্য—কৃষণজী সেটা লিখেছিলেন। পরে আরো অনেক ছবির স্ক্রিন প্লে লিখেছিলেন। বম্বেতে থাকতেন ‘চারবাংলায়'। বিশাল বাংলো। অনেক নামী লোকের আনাগোনা ছিলো। ‘রাখ’ ঐ সময়ের তৈরী। পরে নিজে আর ছবি তৈরীর দিকে না গিয়ে তিনি চলে এসেছিলেন ‘শালিমার স্টুডিও’-তে। এখানে এস ডব্লু ফেড আহমদ ছিলেন খুবই পারদর্শী লোক। সাহিত্য তিনি খুব ভালো বুঝতেন। আরও অনেক নামী মানুষের সমাগম হয়েছিলো—জোশ মালিয়াবাদী, রামানন্দ সাগর, শ্যাম, চেতন আনন্দ, বলরাজ সাহনী, ভারতভূষণ। পুনেতে কৃষণজী ২/৩ বছর ছিলেন। ‘অন্নদাতা’-ও লিখেছিলেন এখানে। স্টুডিও বন্ধ হয়ে যাবার পর কৃষণজী বম্বে চলে এলেন।
পুনায় কৃষণ চন্দর সঙ্গ পেয়েছিলেন আখতার লিমা, বিখ্যাত উর্দু কবির। বহু পুরস্কার পেয়েছিলেন। ভারতভূষণ ছিলেন খুবই কাছের মানুষ। তাঁদের মেলামেশা, কথাবার্তা এতো মধুর ছিলো যে ভোলার নয়।
⇝কৃষণ চন্দর-এর উপর যে ডকুমেন্টারী তৈরী হয়ে ছিলো তার স্ক্রিপ্ট পাওয়া যাবে?
মধুসূদন:আমার কাছে নেই। এটা পাওয়া যাবে রেবতী শরণ শর্মার কাছে। উনিও এই কাজে যুক্ত ছিলেন।
⇝কৃষণ চন্দর-এর জীবনের কোন বিশেষ দিক…
মধুসুদন:তাঁর জীবনের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য দিক হলো তিনি খুব সুন্দর জীবন যাপন করতে ভালোবাসতেন। তিনি খুব খরচ করতেও ভালোবাসতেন। খরচ করার ব্যাপারটা এই রকম যে ধরা যাক তিনি এক লাখ টাকা উপার্জন করেছেন; কিন্তু ব্যয় করলেন এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা। সব সময় সকলের জন্য তিনি ব্যয় করতে ভালো বাসতেন। তবে আত্মীয় স্বজনের ক্ষেত্রে অর্থব্যয়-এর বিষয়টি খুবই ডেলিকেট। সে সম্পর্কে আমি কোন মন্তব্য করবো না। তবে বন্ধুবান্ধব এর জন্য যথেষ্ট খরচ করতেন।
⇝তিনি দুটি ফিল্ম তৈরী করেছিলেন 'সরায় কে বাহার' ও 'দিল কী আওয়াজ'।
মধুসূদন:প্রথমটিতে তাঁর ভাই মহেন্দ্র নাথ ছিলেন হিরো।
⇝ফিল্ম জীবনে বহু নারী, ফিল্মের নায়িকার সংস্পর্শে এসেছিলেন। কৃষণ চন্দর বলেছেন, এঁদের সম্পর্কে কিছু না লিখলে তাঁরা ভাববেন যে তিনি এঁদের বিরুদ্ধে। এই কথা লিখেছেন 'আধে সফর কী পুরী কহানী'-তে এই বিষয়ে…
মধুসূদন:দেখুন এই বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, কিছু বলতে চাই না।
⇝তাঁর জীবনের উপর যে তথ্যচিত্র তৈরী হচ্ছিলো। তাতে কৃষণ চন্দর বিশেষ কিছু চিত্র গ্রহণের জন্য বলেছিলেন?
মধুসূদন:একটি ঘটনাতো বটেই। জুহু বীচের কাছে চাটের দোকান ছিলো। তিনি খেতে খুব ভালোবাসতেন। দই বড়া, গোলগাপ্পা। খাওয়ার সিকোয়েন্সটা উনি নিজে তুলতে বলেছিলেন।
⇝এই তথ্য চিত্রে কিভাবে এগিয়েছিলো?
মধুসূদন:প্রথমে আমরা জম্মু যাই। সেখান থেকে আমরা বহুদূর এক গ্রামে যাই— এখন আমি নাম স্মরণ করতে পারছি না। একটি পর্বত শৃঙ্গ তার অপর পারে পাকিস্তান। কাশ্মীর ছিলো কৃষণ চন্দর-এর সব থেকে ভালো লাগার জায়গা। তিনি খুব স্বাচ্ছন্দ অনুভব করতেন এখানে। একবার সুটিং করতে গাড়ী করে পুঞ্ছ-এর দিকে যাচ্ছি। কৃষণজী, মহেন্দ্রনাথ, ক্যামেরাম্যান ও আমি— গাড়ি ছুটে চলেছে। এক বৃদ্ধ রাস্তার ধারে বড় মাটির জালায় জল খাওয়াচ্ছিলো। তাকে অতিক্রম করে যেতেই কৃষণজী চেঁচিয়ে বললেন রোখো, রোখো। গাড়ী থামলে তিনি বৃদ্ধের কাছে ফিরে এলেন, আমরাও। সকলে জল খেলাম। বড় তৃপ্তিদায়ক সেই জল। কোন ঝর্ণার জল হবে। জল খেয়ে কৃষণজী বৃদ্ধকে টাকা নিতে চাইলে বৃদ্ধ সৌজন্যবশত নিতে চাইলেন না। তাঁর কর্তব্য জল খাওয়ানো। খুবই সামান্য ঘটনা। কিন্তু এর তাৎপর্য ছিলো বড়। কৃষণজী বললেন, বৃদ্ধ বসে আছে যাত্রীদের জল খাওয়ানোর জন্য। আমরা যদি তাকে অতিক্রম করে চলে যেতাম, তবে মনের দিক থেকে বৃদ্ধ খুবই কষ্ট পেতো। তাই আমরা নেমে ছিলাম এবং জলও খেয়েছিলাম। একঘণ্টা আধ ঘণ্টা পরে পরে হয়তো একটা গাড়ি যাবে! কেউ নামবে জল খেতে। তারপর বৃদ্ধ বসে থাকবে অন্য গাড়ির আশায়। কাশ্মীর-এর জনগণের জন্য কৃষণজীর হৃদয়ে এক গভীর অনুভূতি ছিলো।
⇝এই দৃশ্যটি কী গ্রহণ করেছিলেন?
মধুসূদন:না, ক্যামেরা অন্য গাড়িতে ছিলো।
⇝তথ্যচিত্র কী কৃষণজীর প্রথম দিকবার জীবনের ঘটনা নিয়ে?
মধুসূদন:না, এর বেশীর ভাগটা ছিলো কৃষণজীর চরিত্র বৈশিষ্ট্য, সাহিত্য, জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নিম্নবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি নিয়ে। কুড়ি মিনিট দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র এটা। ফিল্ম ডিভিসনের মারফৎ প্রদর্শিত হয়েছিলো।
⇝কবে এটা তৈরী হয়?
মধুসুদন:১৯৭৩ সালে। আমি মনে করতে পারছি। কারণ ঐ বছরই আমরা ‘অল ইন্ডিয়া ফিল্ম পারসন্স কনফেডারেশন’ গঠন করি। প্রথম কনফারেন্স হয় মাদ্রাজে। ফিল্মের কাজ শেষে আমি চলে যাবো বলেছিলাম। কৃষণজীরা ওখানেই ছিলেন। কিন্তু আমি কনফারেন্স-এ যোগ দিতে পারিনি। কারণ প্লেন চার ঘণ্টা লেট ছিলো।
⇝কৃষণজীর চলচ্চিত্র কি সাহিত্যের চেয়ে বেশি গুণমানের ছিলো?
মধুসুদন:আমি তা মনে করি না। কৃষণজীর সাহিত্য কর্মের সঙ্গে এই ধরনের কমার্শিয়াল ফিল্মের কোন তুলনাই হয় না। তার তৈরী ফিল্মও ফিল্মের গুনমানের দিক থেকে উত্তীর্ণ হয়নি, যদিও এটা অফবিট ফিল্ম।
⇝‘সরাই কে বাহ’' কী রিলিজ হয়েছিলো? মহেন্দ্র নাথ লিখেছেন এটা ‘হলে’ বেশ কয়েকদিন চলেছিলো।
মধুসুদন:আমার মনে পড়ছে না। তবে মহেন্দ্রনাথ-এর কথা অনেক নির্ভরযোগ্য। কারণ তিনি ঐ ফিল্মে ছিলেন। 'সবাই কে বাহর'-এর লেখক কৃষণ চন্দর, সঙ্গীত। ঋষি দত্ত। শিল্পী ছিলেন সবিতাদেবী, হেমাবতী, তালেশ, মহেন্দ্রনাথ, শিবরাজ, তাজ মেহেরা,
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment