দুঃখব্যাধি-নিপীড়িত চিরাতুর জীবলোকের ব্যাধি-প্রমোচনের জন্য ভগবান শাক্যকুমার সিদ্ধার্থ বৈদ্যরাজের স্বরূপে উৎপন্ন হইয়াছিলেন, মানবজাতির তৃতীয়াংশের অদ্যাপি এইরূপ বিশ্বাস। চিকিৎসকেরা নিদানশাস্ত্রে রোগাৎপত্তির হেতু নির্ণয় করেন। ভব-ব্যাধি-প্রমোচক জ্ঞানদয়াসিন্ধু বৈদ্যরাজ বোধিদ্রুমমূলে সম্বোধি লাভের সময় জীব- ব্যাধির হেতুস্বরূপ দ্বাদশটি নিদানের আবিষ্কার করিয়াছিলেন। সেই নিদানতত্ত্বের নাম প্রতীত্যসমুৎপাদ।

দ্বাদশটি নিদানের নাম যথাক্রমে এই;-অবিদ্যা, সংস্কার, বিজ্ঞান, নামরূপ, ষড়ায়তন, স্পর্শ, বেদনা, তৃষ্ণা, উপাদান, ভব, জাতি ও জরামরণ।

এই নিদানতত্ত্বের বা প্রতীত্যসমুৎপাদের তাৎপর্য্য লইয়া নানা মতভেদ আছে। বৌদ্ধ আচার্য্যেরা সকলে এক মতে ইহার ব্যাখ্যা করেন না। হীনয্যনী আচার্য্যদের ব্যাখ্যা মহাযানীদের সহিত ঠিক মিলেনা; মহাযানীদের মধ্যে সর্ব্ববাদীসম্মত ব্যাখ্যা আছে, এরূপ বোধ হয় না। বৌদ্ধমতাবলম্বীদের বাহিরে অন্যান্য দার্শনিকেরাও ইহার নানারূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইউরোপের পণ্ডিতেরাও একটা চরম মীমাংসায় উপস্থিত হইতে পারেন নাই। ইউরোপের পণ্ডিতেরাও যে ব্যাখ্যা দিয়া থাকেন, আমরা তাহাই গ্রহণ করিয়া থাকি। আমাদের পক্ষে এটা প্রথা। এই প্রচলিত প্রথার সমালোচনা এ স্থলে অনাবশ্যক। তবে পাশ্চাত্য ব্যাখ্যা সর্ব্বত্র শিরোধার্য্য না করিয়ে বে-আইনি কাজ হইবে না, এই ভরসায় বর্তমান প্রসঙ্গের অবতারণা।

বৌদ্ধ নিদানতত্ত্বের অর্থ বুঝিবার পূর্ব্বে দ্বাদশটি নিদানের তাৎপর্য্য বুঝিতে হইবে। বলা বাহুল্য, নাম কয়টি পারিভাষিক অর্থে প্রযুক্ত হইয়াছে। পারিভাষিক শব্দের তাৎপর্য্য ঠিক না বুঝিলে বিচারমোহ ঘটে। এক একটির অর্থ বুঝিতে চেষ্টা করা যাক। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা বাঙ্গলা শব্দের অর্থ অপেক্ষা ইংরেজী শব্দের অর্থ ভাল বুঝি। সেই জন্য বর্তমান প্রসঙ্গে মাঝে মাঝে ইংরেজী শব্দ প্রয়োগ করিতে হইবে। পাঠক-বর্গ এই রুচিবিরুদ্ধ আচরণ মার্জনা করিবেন। 

 

 

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion