জিনের বাদশা
ফরিদপুর জেলায় ‘আরিয়ল খাঁ’ নদীর ধারে ছোট্ট গ্রাম। নাম মোহনপুর। অধিকাংশ অধিবাসীই চাষি মুসলমান। গ্রামের একটেরে ঘরকতক কায়স্থ। যেন ছোঁয়াচের ভয়েই ওরা একটেরে গিয়ে ঘর তুলেছে।
তুর্কি ফেজের উপরের কালো ঝাণ্ডিটা যেমন হিন্দুত্বের টিকির সাথে আপস করতে চায়, অথচ হিন্দুর শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে পারে না, তেমনই গ্রামের মুসলমানেরা কায়স্থপাড়ার সঙ্গে ভাব করতে গেলেও কায়স্থ-পাড়া কিন্তু ওটাকে ভূতের বন্ধুত্বের মতোই ভয় করে।
গ্রামের মুসলমানদের মধ্যে চুন্নু ব্যাপারী মাতব্বর লোক। কিন্তু মাতব্বর হলেও সে নিজে হাতেই চাষ করে। সাহায্য করে তার সাতটি ছেলে এবং তিনটি বউ। কেন যে সে আর একটি বউ এনে সুন্নত আদায় করেনি, তা সে-ই জানে। লোকে কিন্তু বলে, তার তৃতীয় পক্ষটি একেবারে ‘খর-দজ্জাল’ মেয়ে। এরই শতমুখী অস্ত্রের ভয়ে চতুর্থ পক্ষ নাকি ও-বাড়ি মুখো হতে পারেনি। এর জন্য চুন্নু ব্যাপারীর আপশোশের আর অন্ত ছিল না। সে প্রায়ই লোকের কাছে দুঃখ করে বলত, ‘আরে, এরেই কয়— খোদায় দেয় তো জোলায় দেয় না! আল্লা মিয়াঁ তো হুকুমই দিছেন চারড্যা বিবি আনবার, তা কপালে নাই, ওইব কোহান থ্যা!’ বলেই একটু ঢোক গিলে আবার বলে, ‘ওই বিজাত্যার বেডিরে আন্যাই না এমনডা ওইল!’ বলেই আবার কিন্তু সাবধান করে দেয়, ‘দেহিয়ো বাপু, বারিত গিয়া কইয়্যা দিয়ো না। হে বেডি হুনল্যা এক্কেরে দুপুর্যা মাতম লাগাইয়া দিব!’
এই তৃতীয় পক্ষেরই তৃতীয় সন্তান ‘আল্লারাখা’ আমাদের গল্পের নায়ক। গল্পের নায়কের মতোই দুঃশীল, দুঃসাহসী, দুঁদে ছেলে সে। গ্রামে কিন্তু এর নাম ‘কেশরঞ্জন বাবু’। এ নাম এর প্রথম দেয় ওই গ্রামের একটি মেয়ে। নাম তার ‘চান ভানু’ অর্থাৎ চাঁদ বানু। সে কথা পরে বলছি।
চুন্নু ব্যাপারীর তৃতীয় পক্ষের দুই-দুইবার মেয়ে হবার পর তৃতীয় দফায় যখন পুত্র এল, তখন সাবধানী মা তার নাম রাখলে আল্লারাখা। আল্লাকে রাখতে দেওয়া হল যে ছেলে, অন্তত তার অকালমৃত্যু সম্বন্ধে— আর কেউ না হোক মা তার নিশ্চিন্ত হয়ে রইল। আল্লা হয়তো সেদিন প্রাণ ভরে হেসেছিলেন। অমন বহু ‘আল্লারাখা’কে আল্লা ‘গোরস্থান-রাখা’ করেছেন, কিন্তু এর বেলায় যেন রসিকতা করেই একে সত্যিসত্যিই জ্যান্ত রাখলেন! মনে মনে বললেন, ‘দাঁড়া, ওকে বাঁচিয়ে রাখব, কিন্তু তোদের জ্বালিয়ে মেরে ছাড়ব!’ সে পরে মরবে কিনা জানি না, কিন্তু এই বিশটে বছর যে সে বেঁচে আছে, তার প্রমাণ গাঁয়ের লোক হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। তার বেঁচে থাকাটা প্রমাণ করার বহর দেখে গাঁয়ের লোক বলাবলি করে, ও গুয়োটা আল্লারাখা না হয়ে যদি মামদোভূত হত, তা হলেও বরং ছিল ভালো। ভূতেও বুঝি এত জ্বালাতন করতে পারে না!
ওকে মুসলমানরা বলত, ‘ইবলিশের পোলা’, কায়েতরা বলত, ‘অমাবস্যার জম্মিৎ!’ বাপ বলত, ‘হালার পো’, মা আদর করে বলত— ‘আফলাতুন!’
এইবার যে মেয়েটির কল্যাণে ওর নাম কেশরঞ্জন বাবু হয়, সেই চানভানুর একটু পরিচয় দিই।
মেয়েটি ওই গাঁয়েরই নারদ আলি শেখের। নারদ আলি নামটা হিন্দু-মুসলমান মিলনের জন্য রাখা নয়। নারদ আলি অসহযোগ আন্দোলনের অনেক আগের মানুষ। অসহযোগ আন্দোলন যদ্দিনের, তা ওর হাঁটুর বয়েস! বাম পায়ের হাঁটুর বয়েস! বাম পায়ের হাঁটু আর বললাম না, ওটা অতিরঞ্জন হবে!
নারদ আলি, শেখ রামচন্দ্র, সীতা বিবি প্রভৃতি নাম এখনও গাঁয়ে দশ-বিশটে পাওয়া যায়। অবশ্য হনুমানুল্লা, বিষ্ণু হোসেন প্রভৃতি নামও আছে কিনা জানিনে।
নারদ আলি গাঁয়ের মাতব্বর না হলেও অবস্থা ওর মন্দ নয়। যা জমি-জায়গা আছে তার, তারই উৎপন্ন ফসলে দিব্যি বছর কেটে যায়। ও কারুর ধারও ধারে না, কাউকে ধার দেয়ও না।
দিব্যি শান্তশিষ্ট মানুষটি! কিন্তু ওর বউটি ঝগড়া-কাজিয়া না করলেও কাজিয়ার ভান করে যে মজা করে, তা অন্তত নারদ আলির কাছে একটু অশান্তিকর
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment