অগ্নিগিরি
বীররামপুর গ্রামের আলি নসিব মিয়াঁর সকল দিক দিয়েই আলি নসিব। বাড়ি, গাড়ি ও দাড়ির সমান প্রাচুর্য! ত্রিশাল থানার সমস্ত পাটের পাটোয়ারি তিনি।
বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। কাঁঠাল-কোয়ার মত টকটকে রং। আমস্তক কপালে যেন টাকা ও টাকের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র।
তাঁকে একমাত্র দুঃখ দিয়াছে— নিমকহারাম দাঁত ও চুল। প্রথমটা গেছে পড়ে, দ্বিতীয়টার কতক গেছে উঠে, আর কতক গেছে পেকে। এই বয়সে এই দুর্ভাগ্যের জন্য তাঁর আপশোশের আর অন্ত নাই। মাথার চুলগুলোর অধঃপতন রক্ষা করবার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করেননি; কিন্তু কিছুতেই যখন তা রুখতে পারলেন না, তখন এই বলে সান্ত্বনা লাভ করলেন যে, সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ডেরও টাক ছিল। তাঁর টাকের কথা উঠলে তিনি হেসে বলতেন যে, টাক বড়োলোকদের মাথাতেই পড়ে— কুলি-মজুরের মাথায় টাক পড়ে না! তা ছাড়া, হিসেব নিকেশ করবার জন্য নি-কেশ মাথারই প্রয়োজন বেশি। কিন্তু টাকের এত সুপারিশ করলেও তিনি মাথা থেকে সহজে টুপি নামাতে চাইতেন না। এ নিয়ে কেউ ঠাট্টা করলে তিনি বলতেন— টাক আর টাকা দুটোকেই লুকিয়ে রাখতে হয়, নইলে লোকে বড়ো নজর দেয়। টাক না হয়ে লুকোলেন, সাদা চুল-দাড়িকে তো লুকোবার আর উপায় নেই। আর উপায় থাকলেও তিনি আর তাতে রাজি নন। একবার কলপ লাগিয়ে তাঁর মুখ এত ভীষণ ফুলে গেছিল, এবং তার সাথে ডাক্তাররা এমন ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল যে, সেইদিন থেকে তিনি তৌবা করে কলপ লাগানো ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু, সাদা চুল-দাড়িতে তাঁর এতটুকু সৌন্দর্যহানি হয়নি। তাঁর গায়ের রং-এর সঙ্গে মিশে তাতে বরং তাঁর চেহারা আরও খোলতাই হয়েছে। এক বুক শ্বেত শ্মশ্রু— যেন শ্বেত বালুচরে শ্বেত মরালী ডানা বিছিয়ে আছে!
এঁরই বাড়িতে থেকে ত্রিশালের মাদ্রাসায় পড়ে— সবুর আখন্দ। নামেও সবুর, কাজেও সবুর! শান্তশিষ্ট গো-বেচারা মানুষটি। উনিশ-কুড়ির বেশি বয়স হবে না, গরিব শরিফ ঘরের ছেলে দেখে আলি নসিব মিয়াঁ তাকে বাড়িতে রেখে তার পড়ার সমস্ত খরচ জোগান।
ছেলেটি অতিমাত্রায় বিনয়াবনত। যাকে বলে— সাত চড়ে রা বেরোয় না। তার হাবভাব যেন সর্বদাই বলছে— ‘আই হ্যাভ দি অনার টু বি সার ইয়োর মোস্ট ওবিডিয়েন্ট সারভেন্ট’।
আলি নসিব মিয়াঁর পাড়ার ছেলেগুলি অতিমাত্রায় দুরন্ত। বেচারা সবুরকে নিয়ে দিনরাত তারা প্যাঁচা খ্যাঁচরা করে। পথে ঘাটে ঘরে বাইরে তারা সবুরকে সমানে হাসি ঠাট্টা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের জল ছিঁচে উত্যক্ত করে। ছেঁচা জল আর মিছে কথা নাকি গায়ে বড়ো লাগে— কিন্তু সবুর নীরবে এ সব নির্যাতন সয়ে যায়, এক দিনের তরেও বে-সবুর হয়নি।
পাড়ার দুরন্ত ছেলের দলের সর্দার রুস্তম। সে-ই নিত্য নূতন ফন্দি বের করে সবুরকে খ্যাপানোর। ছেলে মহলে সবুরের নাম প্যাঁচা মিয়াঁ। তার কারণ, সবুর স্বভাবতঃই ভীরু নিরীহ ছেলে; ছেলেদের দলের এই অসহ্য জ্বালাতনের ভয়ে সে পারতপক্ষে তার এঁদো কুঠরি থেকে বাইরে আসে না। বেরুলেই প্যাঁচার পিছনে যেমন করে কাক লাগে, তেমনি করে ছেলেরা লেগে যায়।
সবুর রাগে না বলে ছেলেদের দল ছেড়েও দেয় না। তাদের এই খ্যাপানোর নিত্য নূতন ফন্দি আবিষ্কার দেখে পাড়ার সকলে যে হেসে লুটিয়ে পড়ে, তাতেই তারা যথেষ্ট উৎসাহ লাভ করে।
পাড়ার ছেলেদের অধিকাংশই স্কুলের পড়ুয়া। কাজেই তারা মাদ্রাসা-পড়ুয়া ছেলেদের বোকা মনে করে। তাদের পাড়াতে কোনো মাদ্রাসার ‘তালবিলিম’ (তালেবে এলম বা ছাত্র) জায়গির থাকত না পাড়ার ছেলেগুলির ভয়ে। সবুরের অসীম ধৈর্য! সে এমনি করে তিনটি বছর কাটিয়ে দিয়েছে। আর একটা বছর কাটিয়ে দিলেই তার মাদ্রাসার পড়া শেষ হয়ে যায়।
সবুর বেরোলেই ছেলেরা আরম্ভ করে— ‘প্যাঁচারে, তুমি ডাহ! হুই প্যাঁচা মিয়াঁগো, একডিবার খ্যাচখ্যাচাও গো!’ রুস্তম রুস্তমি কন্ঠে গান ধরে—
ঠ্যাং চ্যাগাইয়া প্যাঁচা যায়—
যাইতে যাইতে খ্যাচখ্যাচায়।
কাওয়ারা সব লইল পাছ,
প্যাঁচা গিয়া উঠল
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment