ইসরায়েলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটা জুড়ে তার উগ্র ইহুদীবাদী শাসকদের অপরিবর্তনীয় নীতি হচ্ছে দেশটাকে সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করা, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর ওপর আক্রমণ চালানো যায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রগতিশীল, জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে আঘাত করা যায়। বিগত বিশ বছরে তিনবার এই এলাকায় ইসরায়েল সামরিক সংঘর্ষ বাধিয়েছে।

মোট জাতীয় উৎপাদনের মধ্যে সামরিক ব্যয় খাতে ইস্রায়েলের অংশ বিশ্বরেকর্ড করেছে। এটা ব্রিটেন, ফ্রান্স, এফআরজি বা ইতালির চেয়েও অনেক বেশি। এমনকি সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় (মাত্র প্রত্যক্ষ সামরিক ব্যয়কে ধরে) ১৯৭৬ সালের যুদ্ধ প্রস্তুতি মোট জাতীয় উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি উৎপাদনী উপযোগিতাকে খর্ব করেছে, যা বাজেটের প্রায় অর্ধেক (১নং সারণি দেখুন):

সারণি ১ : ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় বাজেট ও মোট জাতীয় উৎপাদনে সামরিক ব্যয়ের অংশ
জিএনপি’র অংশ (শতকরা) বাজেটের অংশ (শতকরা)
১৯৬৭ সালের পূর্বে ১০ ২৫–(১৯৬৬)
১৯৬৭-১৯৭০ ২০-২৫
১৯৭৫ ৩২ ৫০.৫
১৯৭৬ ৩৫.২ ৫৬.৭

পশ্চিমী, মূলত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থনপুষ্ট হয়ে সমরবাদীরা বাইরে থেকে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে, ফলস্বরূপ, বৈদেশিক বিনিময় ব্যবস্থা গুরুতররূপে ব্যাহত হচ্ছে এবং দেশের আর্থ কাঠামো পুনঃপুনঃ ভেঙে পড়ছে। ১৯৭৬ সালের লেনদেনে ৪,০০০ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি হয়েছে। একই বৎসরে বৈদেশিক ঋণ দাড়ায় ১,০০০ মিলিয়ন ডলার যা রাষ্ট্রীয় বাজেটকে ছাপিয়ে যায় এবং এটা মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় সমান সমান। এর অর্থ হল প্রতি নাগরিক পিছু প্রায় ৩০০০ ডলার ধার। সরকারি রেকর্ড থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, বর্তমান আর্থ বৎসরের শেষে ইসরায়েলের ঋণ ১১,০০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১২,০০০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।

১৯৬৭ সালের আগ্রাসন বা ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের আগে ইসরায়েল তার বৈদেশিক ঋণ ইহুদীগোষ্ঠীগুলোর “দানের” মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপ বা আমেরিকাকে শোধ করেছে। তারপর থেকে পরিস্থিতি মৌলিকভাবে বদলে গেছে। বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্যের অধিকাংশই ঋণ এবং জাতীয় ঋণ তা মেটানোর চেয়ে বেশি মাত্রায় বাড়ছে।

সুদসহ ঋণ পরিশোধের জন্য বাজেট থেকে আরও বেশি বেশি করে তা আদায় করে নেয়। ১৯৭৭ সালে এটা বাজেটের ২৫% ছিল, ১৯৭৮ সালে তা ৩০% থেকে ৪০%-এ দাঁড়াবে (২নং সারণি দেখুন):

সারণি ২ : ঋণ পরিশোধের জন্য বাজেট ব্যয়

মোট বাজেট

(মিলিয়ন পাউন্ড)

মোট শোধ

(মিলিয়ন পাউন্ড)

বাজেটের শতকরা
১৯৬৯ ৫.৫৯ ০.৮৮ ১৫.৮
১৯৭৬ ৮৭.৬ ১৮.০ ২০.৪
১৯৭৭ ১২২.৫ ৩০.৩ ২৪.৭

সামরিকীকরণ যা অভূপূর্ব আকার ধারণ করেছে, তা জাতীয়জীবনের ভিত্তি, জনসাধারণ, কৃষি ও নির্মাণকার্যের জন্য শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদনের মতো শাখায়ও উৎপাদনীশক্তি হ্রাস পেয়েছে। শিল্প যুদ্ধসরঞ্জামের উপাঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মূলত সামরিক জিনিসপত্র তৈরি করছে। অর্ধেকেরও বেশি শিল্প-শ্রমিক অর্থাৎ প্রায় ২৫০০০০ শ্রমিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন শিল্পে নিযুক্ত। ৮০০-রও বেশি কারখানা (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলো মার্কিন অর্থে নির্মিত) সামরিক বাহিনীকে সরবরাহের জন্য সাজ-সরঞ্জাম উৎপাদন করে।

সার্বিক সামরিকীকরণের ফলে অর্থনীতিতে গুরুতর সংকট দেখা দিয়েছে এবং দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র সংকটের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে অর্থনীতি ক্রমশ পরগাছা লক্ষণ বিশিষ্ট হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোট জাতীয়-উৎপাদনের বৃদ্ধি স্তব্ধ হয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালে ২% ও ১৯৭৬ সালে মাত্র এটা ১% বেড়েছে ৷ এমনকি এই বৃদ্ধিটাও সামরিক শিল্পের বৃদ্ধির ফলে ঘটেছে। বেকারি বাড়ছে (১৯৭৬ সালে ৫০০০০ বেকার ছিল) এবং অতীতের মতো ছেলে-মেয়েদের ডেকে হাজির করিয়েও তা রদ করা যাচ্ছে না। উগ্র ইহুদীবাদী প্রচারের প্রভাবে ইস্রায়েলে আসার বদলে সেই দেশ ছেড়ে লোক চলে যাচ্ছে।

প্রত্যেকটি সরকার দেশের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছে—জনগণের কাঁধে বেশিরভাগ বোঝাটা চাপিয়ে দিয়েছে ৷ নতুন প্ৰত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ কর আরোপ করেছে—নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য যে বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন—তা তারা কমিয়ে দিয়েছে, ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজস্ব বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, ইসরায়েল কর আদায়ে বিশ্বে প্রথম স্থানাধিকারী এবং

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion