খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে স্মৃতি উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন। পেছনের ফেলে আসা দিনগুলোর মাঝে হারিয়ে যেতে চাইছিলেন তিনি। ১৯৫৩ সালের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে ডিসেম্বর আর জানুয়ারীর শীতার্ত রাতগুলোতে। যখন জেলের একটি কামরায় বসে দারুন এক অস্থিরতার শিকার হয়ে সমস্ত মন দিয়ে ছোট্ট একটি খাতায় লিখছিলেন ‘কবর’ নাটিকাটি। বিষয় বস্তুর নির্বাচনে, আঙ্গিকের নতুনত্বে দৃশ্যকল্প নির্মাণে, সব দিক থেকেই যা অভিনবত্বের স্বাক্ষর বহন করছে। তাই আজও ‘কবর’ নাটিকাটি এত প্রিয়।

মুনীর চৌধুরী তখন জেলে। ভাষা আন্দোলনে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি অনেকের সাথে রনেশ দাশগুপ্তও তাদের মধ্যে ছিলেন।

“রনেশদাই গোপনে চিঠি লিখেছিলেন আমাকে। সামনে একুশে ফেব্রুয়ারী। একটা নাটক লিখে দিতে হবে। জেলখানাতে অভিনীত হবে। রনেশদার হুকুম। আমাকে লিখতেই হলো নাটক। সেটি ‘কবর’।”

মুনীর চৌধুরী জানালেন জেলখানাতেই শেখ মুজিবরের সাথে তার অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে।

“জেল খানাতে নাটক মঞ্চস্থ করার অসুবিধা ছিল না?”

“ছিল, অবশ্যই ছিল। আর ঐ অসুবিধা টুকু ছিল বলেইতো ‘কবর’ নাটকটির আঙ্গিকে নতুনত্ব আনতে হয়েছে। সত্যি করে বলতে কি ‘কবর’ নাটকটি একটি বিশেষ অবস্থার শিল্পগত রূপায়ন। যেমন ধরো নাটিকাটিতে হারিকেনের ব্যবহার রয়েছে যার আলো কবরখানার নির্জনতাকে ফুটিয়ে তুলেছে। রনেশদা জানিয়েছিলেন রাত দশটার পরে জেলখানার সমস্ত আলো নিভে যাওয়ার পর তাদের কক্ষে নাটকটি মঞ্চস্থ করবেন তারা। যে সব বন্দী ছাত্ররা রাতে হারিকেন জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতো, তাদের ৮/১০টি হারিকেন দিয়ে মঞ্চ সাজাতে হবে। সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই কবর নাটকটিতে আলো আধাঁরির রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়েছে।”

“জেলে ‘কবর’ নাটকটি দেখতে আপনার কেমন লেগেছিল?”

“আমি নাটকটি দেখতে পারিনি। কারণ আমি ছিলাম অন্য কক্ষে। শুনেছিলাম খুব ভাল হয়েছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে ওটাকে আমার এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ রচনা। আবার সেই সাথে বিতর্কিত লেখাও বলতে পারি।”

“জেলখানাতে যখন আপনার কিছু দূরের কক্ষে নাটকটি মঞ্চস্থ হচ্ছিল। তখন আপনার মনে কোন ধরণের অনুভূতি হচ্ছিল?”

“আমি নির্লিপ্ত ছিলাম। কেননা জেল এমন একটা যায়গা যেখানে সমস্ত রকমের মানসিক উৎকণ্ঠাকে আয়ত্বে আনতে হয়। আর আমার নিজের লেখা সম্বন্ধে আমার উৎকণ্ঠা মূলক মনোভাব কখন ছিল না।”

“কবর” নাটকটি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?”

“নিঃসন্দেহে এটি আমার দৃষ্টি উন্মোচনকারী শ্রেষ্ঠ লেখা।”

"প্রথম কোথায় এটা ছাপা হয়?”

“প্রায় সে সময়ই সেটা কপি হয়ে জেলের বাইরে চলে যায়। প্রথম দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়। তারপর হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশের সংকলনে’ স্থান পায়। তবে এ নাটকটি সম্পর্কে পরবর্তীকালে একটি বিশেষ ধারণা হয়েছে আমার। তা হ’লো আমার অবচেতন মন থেকেই বোধকরি একটি বিদেশী নাটকের প্রভাব এতে পড়েছিল। অবশ্য এটা আমার অনেক পরে মনে হয়েছে।”...

“আপনি বলছিলেন ‘কবর’ নাটকে কোন এক বিদেশী নাটকের প্রভাব রয়েছে।”

“ও হা, ‘দা বেরী ইন দ্য ডেথ’! সে সময়েই নাটকটি পড়ি আমি। তাতে মৃত বাক্তির প্রতিবাদ ছিল, সে যে কবরস্থ হতে চায় না, তার চীৎকার ছিল। এ টুকুই যা ভাবগত সাদৃশ্য থাকতে পারে। কিন্তু কবর যখন লিখি, তখন এসব কথা আমার বিন্দুমাত্র মনে আসেনি। বেশ ক’বছর পর আমি অনেকটা অদ্ভূত ভাবেই এই প্রভাবটি আবিস্কার করি। বোধ করি তখন অবচেতন মনের প্রভাবটিই কাজ করে থাকবে।”

“আপনার ‘কবর’ নাটকটি কি কোন সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল?

“যথেষ্ট। অনেকেই বলেছিল এমন একটা ছমছমে, রহস্যময় পরিবেশের মাঝে মাঝে এমন কৌতুকময়তার আবহ কেন সৃষ্টি করলাম। এ সম্পর্কে আমার বক্তব্য হচ্ছে ভয়াবহতার মাঝে আমি সবসময় কোন কোন উৎকট তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছি। কোন বিষাদের ঘটনা হলে, তার উৎকট দিকটাই আমি বড় করে দেখেছি বা বলতে পারে৷ দেখতে চেয়েছি। এটা আমার আজীবনের বোধ। যেমন কবর নাটকে নেতার অঙ্গাঙ্গী যথেষ্ট কৌতুকময়,

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion