দিশি ও দেয়ার কথা মনে আছে তো? ভুললে চলবে না। আজও তাদের কথাই বলবো। ওরা আজ সক্কাল সকাল বেরিয়েছে। বাসায় তাদের বাবু ভাইয়া একা-একা ঘুমুচ্ছে আর ভেলুমাও কখনো কাজ করছে কখনোবা টিভি দেখছে।

বিকেলের দিকে ওরা ফিরে এল। আর এসেই হামলে পড়ল ওদের বাবু ভাইয়ার উপর। আসলে ওদের ছাড়া সারাটাদিন তারও ভালো লাগছিল না, তাই সুকুমার রায়ের 'আবোল তাবোল' নেড়ে দেখছিল সে। ওরা এসে মাথা দুলিয়ে বলতে লাগল—ভাইয়া, জানো আজকে আমরা সিনেমা দেখেছি?

—তাই নাকি? কী সিনেমা দেখেছিস?

দুজনে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল—কুংফু পান্ডা।

—আচ্ছা। বেশ ভালো।

দেয়া বলল—এতদিন শুধু ঘরে বসে ছোট ছোট ছবি দেখেছি। আজ এত্তবড় বড় ছবি দেখেছি। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলার সময় দেয়া হাত দিয়ে দেখাচ্ছিল ও কত বড় পর্দায় সিনেমা দেখেছে।

দিশি বলল—ভাইয়া, তুমি সিনেমা দেখেছো?

বাবু ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে—হ্যাঁ, দেখেছি, অনেকবার।

দিশি বলল—অনেকবার? আমরা আজই প্রথম দেখলাম?

দিশি বিমর্ষ হয়।

বাবু ভাইয়া বলল—ক'দিন পর তোদেরও অনেক দেখা হবে।

দেয়া জিজ্ঞেস করে—আচ্ছা ভাইয়া, তুমি প্রথম কী সিনেমা দেখেছিলে? কবে দেখেছিলে?

দিশি যোগ করে—তখন কি তুমি আমাদের মত ছিলে?

বাবু ভাইয়া হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। ওরা এতে অধৈর্য হয়ে বলে উঠে- বলো না ভাইয়া!! হুমম বলছি। সিনেমাটার নাম তো মনে নেই। কি জানি, হয়ত কোন নামই ছিল না।

দিশি বললো—নাম ছিল না, সেটা আবার কেমন কথা? ভেলুমাওয়ের মতো নামহীন নাকি। ওরা খিলখিল করে হেসে ওঠে, বলে- ওমা, তুমি এতো ভুলোমনা।

ওদের সঙ্গে বাবু ভাইয়াও হেসে বলে—সত্যি আমরা অনেক কিছু ভুলে যাই। আসলে আমি তখন অনেক ছোট।

দেয়া বলে—আমার চেয়েও ছোট?

—হ্যাঁ, তোদের থেকেও ছোট।

সেদিন বারান্দার চৌকিতে হারিকেনের আলোয় তোদের মত পড়ছিলাম। দেয়া জানতে চায়—চৌকি কি?

দিশি বলে—হারিকেন তো দেখেছি, একরকম বাতি; কিন্তু গ্রামের বাড়িতে তো আমরা এখানকার মত লাইট জ্বলতে দেখেছি।

—সেবার বর্ষায় গ্রামে গিয়ে আমরা যেটায় সারাদিন বসে গল্প করলাম সেটা চৌকি। সেয়া

দিশিদের এখন গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলেও তখন ছিল না। আর কোন প্রশ্ন? দু'বোন তাদের মাথায় শিংয়ের মতন বেণী দুলিয়ে বলে- নাহ।

—সেদিন পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার বন্ধু কামাল এসে বলল, এই বাবু, জানিস- মিলু সিনেমা বানিয়েছে?

—তাই নাকি? চল তো দেখি।

আমরা এক দৌঁড়ে মিলুদের উঠোনো চলে গেলাম। মিলু আমাদের মধ্যে খুব হাসি-খুশি ছেলে। খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারত। ওদের উঠোনে গিয়ে দেখি একটা পিঁড়ির উপর একটা বাস্ত রেখেছে মিলু। তার সামনে মাদুর পেতে সব ছোটরা জড়ো হয়েছে। বাক্সের সামনেটায় একটা বড় কাচ আঁটা। মাটি দিয়ে বানানো বাক্সটার উপর দিকে একটা হাতলের মত।

—বাবু ভাইয়া এসব কীসের কথা বলছ?

—আমার দেখা প্রথম সিনেমার কথাই বলছি। তারপর মিলু হঠাৎ একটা কুপি বাতি এনে বাক্সটার পেছনে রাখল। আর বলল- সবাই চুপ, এইবার ছবি শুরু হবে।

সবাই নড়েচড়ে বসল। হঠাৎ মিলু বাক্সটার হাতল ঘোরাতে শুরু করল, আর কাচের পেছনের সাদা কাগজ সরে মিলুর আঁকা ছবি একটার পর একটা চোখের সামনে দিয়ে চলতে শুরু করল। ওর আঁকা গাছ, পাহাড়, নদী, পাখি, কখনো মানুষের ছবি। সেটাই আমার দেখা প্রথম সিনেমা। দেয়া বলল—ধুর! এ কখনো সিনেমা হয়?

দিশি বলে, হ্যাঁ, তুমি মজা করছ।

—না, আমি মোটেও মজা করছি না।

আসলে মিলু যা করেছে তা একরকম সিনেমাই। এমনকি তোদের দেখা সিনেমার পদ্ধতির সঙ্গে তার তেমন পার্থক্যই নেই। যারা সিনেমা আবিষ্কার করেছে তারা হয়ত মিলু যেমন খেলনা বানিয়েছে, সেরকম যন্ত্রই প্রথম বানিয়েছিল।

দিশি বলে, এ রকম কখনো হয়? বিজ্ঞানীরা খেলনা বানাবে? হি-হি-হি

বাবু ভাইয়াও হাসে।

—দিশি, বিজ্ঞানীরাও খেলার মতন মজা না পেলে কিছুই বানাতে পারে না। আসলে সত্যিকারের

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion