আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র ও সময়ের ধীরতা
পরীক্ষার হলে খাতায় লিখতে লিখতে আজকে সুমির মনে হচ্ছে, ঘড়ির কাঁটা কীভাবে এত দ্রুত ঘুরছে। এখন তার আরও তিনটা উত্তর দিতে হবে এদিকে যতবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে বুঝছে মিনিটের কাঁটাটা যেন দৌড়নো শুরু করেছে। পাঁচ মিনিট গেল মনে করে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর দেখছে প্রায় পঁচিশ মিনিটই চলে গেছে। তার ইচ্ছা করছে কোনভাবে ঘড়ির গতিটা যদি ধীর করে দিতে পারত। কবে শুনেছিল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার বিশেষ সূত্র থেকে পাওয়া এক অবাক করা তথ্য হল, গতিশীল অবস্থায় ঘড়ির কাঁটা নাকি স্থির ঘড়ির চেয়ে ধীরে চলে, একেই বলে সময়ের ধীরতা বা টাইম ডায়লেশন (Time Dilation)। এর অর্থ তখন বা এখনও ঠিক বুঝতে না পারলেও মনে হচ্ছে এই ঘড়িটাকে যদি গতিশীল করতে পারত আর সে এখানে বসেই লিখত তবে পরীক্ষাটা ভাল হত। দুই ঘণ্টা ধরে সে লিখলেও ঘড়িতে শুধু পাঁচ মিনিটই হয়ত যেত। তো পরীক্ষা যেমন হওয়ার তেমনই হল। পরীক্ষা শেষ হবার পর থেকে সুমির মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরছে, সেটা হল আপেক্ষিকতার বিশেষ সূত্রটা কী? আর কীভাবেই বা তা থেকে সময়ের ধীরতাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ঘড়ির কাঁটা কি আসলেই ধীরে চলে? তাই সে বসল বুঝবার জন্য।
প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি ধেয়ে আসছে, এরই মাঝে বাঁচবার জন্য আমরা যদি বৃষ্টি যেদিকে পড়ছে সেদিকে ছুটে যাই তবে দেখব বৃষ্টি এসে পিঠে আস্তে আছড়ে পড়ছে অর্থাৎ আমার সাপেক্ষে অল্প বেগে ধাক্কা দিচ্ছে, আর অন্যভাবে বৃষ্টির দিকে মুখ করে ছুটে যাই তবে তা আমার দাঁড়িয়ে থাকার চেয়েও আরো তীব্র বেগে আঘাত করবে। আলো বৃষ্টির ফোঁটার মতই আচরণ করে, তাই বিজ্ঞানীদের মনে হল নির্দিষ্ট এক দিকে যাবার ফলে আলোর বেগের পার্থক্য থেকেই নির্ণয় করা সম্ভব যে আমরা কত বেগে ঘুরছি। কেননা এই মহাবিশ্বে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে আবার সূর্য ঘুরছে গ্যালাক্সির চারদিকে। কিন্তু অবাক বিষয়, বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করল যে সূর্যের যেদিকে আমরা ঘুরি না কেন সবসময় আলোর বেগ এক। স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টির মাঝে দৌড়ে গেলেনা কেন সবসময় বারে বা জোরে ধাক্কা দিবে, দু'দিকের যেদিকেই যাই না কেন একইরকম আমরা দিবে না। পরীক্ষাবান্ধ এ ফলাফলকে ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এ তত্ত্বে মূলত দুটি স্বীকার্য। প্রথম স্বীকার্যটি হল- "আলোর বেগ সকল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর ক্ষেত্রে ধ্রুব" এবং দ্বিতীয় স্বীকার্যটি হল- "পদার্থবিদ্যার সকল সূত্র জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর ক্ষেত্রে ধ্রুব"। আইনস্টাইনের এ আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রদানের পেছনে মূল ছিল আলোর বেগের ধ্রুব থাকার ধাঁধা। আপেক্ষিকতা বলতে আমরা মূলত আসলে কী বুঝি? মনে করি, আমি চলমান একটি ট্রেনের ভেতর একটা চেয়ারে বসে আছি এবং একজন আমাকে অতিক্রম করে চলে গেল। আমার সাপেক্ষে সে লোকটি গতিশীল। এর মাঝে অনিশ্চয়তার কিছু নেই। কিন্তু বাইরে থেকে জানালা দিয়ে আরেকজন দেখল যে আমি আসলে বসে আছি একটি ট্রেনে তাই তার কাছে আমি ও ঐ লোকটি দুজনেই আমরা গতিশীল। সেভাবে চিন্তা করলে পৃথিবীও স্থির নয়। পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘুরছে। আবার চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। আবার পৃথিবী এবং চাঁদ সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সূর্য ঘুরছে গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে এবং এক গ্যালাক্সি ঘুরছে অপর গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে। তাই আসলে কোনকিছুই সম্পূর্ণভাবে স্থির নয়, অপর কোন প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে এটি গতিশীল। নিউটনিয় গতিতত্ত্ব অনুযায়ী আলোর বেগ যদি C হয়, তাহলে নির্দিষ্ট দিকে বেগে গতিশীল কোন কাঠামোতে এক ব্যক্তির কাছে আলোর বেগ C+V বা C-V হওয়া উচিৎ। কিন্ত আলোর বেগ সবখানেই ধ্রুব তা যে কোন বেগে গতিশীল কাঠামো থেকে বিচার করা হোক না কেন। বেগ পরিমাপ করতে একটি রড এবং ঘড়ি হলেই যথেষ্ট। যেহেতু আমরা জানি বেগ দূরত্ব/সময়। রড দিয়ে দূরত্ব এবং ঘড়ি দিয়ে সময় পরিমাপ করা যাবে। স্থির এবং গতিশীল কাঠামোতে আলোর বেগ একই হওয়া সম্ভব যখন গতিশীল কাঠামোতে কোন ব্যক্তির কাছে এই দুই পরিমাপক সমভাবে পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ ঘড়ির স্পন্দন গতি ধীর হয়ে যায় এবং রডে দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে যায়। গতিশীল কাঠামোতে কোন ব্যক্তি তুলনামূলক ছোট দৈর্ঘ্যের রড দিয়ে পরিমাপ করে আবার ঘড়ির গতি ধীর হয়ে যায় স্থির কাঠামোর চেয়ে তাই বেগ একই থাকে। তাই কার্যত সে পরিবর্তন অনুভবও করা যায় না। দুই কাঠামোতে পর্যবেক্ষকের কাছেই আলোর বেগ একই থাকে এবং তা হল ১,৮৬,০০০ মাইল/সেকেন্ড। সময়ের ধীরতা ও দৈর্ঘ্য সংকোচন শুধুমাত্র গতিশীল কাঠামোতেই হয় এবং স্থির কাঠামোতে অবস্থিত পর্যবেক্ষকই শুধুমাত্র সেটা অনুভব করে। গতিশীল কাঠামোতে অবস্থিত পর্যবেক্ষক সেটা অনুভব করে না। অর্থাৎ স্থির কাঠামোতে আমার ঘড়িতে যে সময় দেখায় তা হল সঠিক সময় এবং আমি মহাকাশযানে অবস্থিত কোন ব্যক্তির ঘড়িতে যে সময় দেখি তা হল আপেক্ষিক সময়। সময় ও দৈর্ঘ্যের এই পরিবর্তন শুধুমাত্র আমার চোখেই ধরা পড়বে মহাকাশযানে অবস্থিত কোন ব্যক্তির চোখে নয়।
মনে করি আমি একজন নভোচারী। গ্রহ আবিষ্কারের এক প্রকল্পে একটা মহাকাশযানে যাচ্ছি। মহাকাশযানের মাঝে আমি লেজার বিম দিয়ে আলো কাচের উপর ফেলছি যা প্রতিফলিত হয়ে ডিটেক্টরে আসছে। আমার আলোটা সরাসরি উপরে যাচ্ছে এবং কাচের ফলকে প্রতিফলিত হয়ে উলম্বভাবে এসে ডিটেক্টরে আঘাত করছে (যেমনটি দেখছি উপরের ছবিতে)। যে মহাকাশযানে যাচ্ছি তার বেগ আলোর বেগের প্রায় অর্ধেক। কিন্ত কার্যত আমার তাতে কিছু আসে যায় না, কেননা আমি সেটা বুঝবই না। পৃথিবীতে কোন এক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে রাশেদ নামে এক মহাকাশচারী আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। তার দৃষ্টিতে আমার অবস্থান কিন্তু হবে ভিন্ন। সে দেখবে যে লেসার বিম থেকে আলো বাঁকাভাবে গিয়ে কাচে আঘাত করছে এবং প্রতিফলিত হয়ে ডিটেক্টরে আঘাত করছে। তাই আমার আর রাশেদের চোখে আলোর গতিপথও হবে ভিন্ন এবং ঐ পথের দৈর্ঘ্য হবে ভিন্ন। অর্থাৎ আলোর সে পথ অতিক্রম করতে সময়ও হবে ভিন্ন। আমার কাছে সময়ও ধীরে অতিবাহিত হবে এবং দৈর্ঘ্যও কম হবে। আবার রাশেদের কাছে দৈর্ঘ্যও বেশি এবং সময়ও দ্রুত যাবে। ফলে আমার এবং রাশেদের কাছে আলোর বেগ দেখা যাবে একই থাকবে এবং আমরা একমত হব। গতিশীল মহাকাশযানে সময় ধীরে অতিবাহিত হবে পৃথিবীর সময়ের তুলনায় এই ঘটনাকেই সময়ের ধীরতা বলে। ১৯৭৫ সালে ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যারল এ্যালি দুটি সমন্বিত আণবিক ঘড়ির সাহায্যে আইনস্টাইনের তত্ত্ব প্রমাণ করেন। একটি ঘড়িকে উড়ন্ত বিমানে কয়েক ঘন্টা রাখা হয় এবং অন্য ঘড়িটিকে বিমানবন্দরে রাখা হয়। উড়ন্ত বিমানটা ফিরে আসার পর দেখা যায় যে বিমানের ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির চেয়ে কিছুটা ধীরে চলেছে এবং এটা কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়নি। এটি সময়ের ধীরতার জন্যই ঘটে। এরই এক ফলাফল হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, দুজন জমজের একজন যদি মহাকাশযানে পাড়ি দেয় এবং অন্যজন পৃথিবীতে থেকে যায়। যেহেতু গতিশীল ঘড়ি ধীরে চলে, তাই মহাকাশে ঘড়ি ধীরে চলবে পৃথিবীর ঘড়ির চেয়ে। তাই যখন মহাকাশযানে অবস্থিত ভাইটি পৃথিবীতে ফিরবে, তার বয়স কমে যাবে পৃথিবীতে থাকা ভাইটির চেয়ে। মহাকাশযানের বেগ যত বেশি হবে সময়ের ধীরতাও তত বেশি হবে। একইভাবে পারমাণবিক স্তরেও সময় ধীরতার নানা বাস্তব উদাহরণ আমরা দেখতে পাই। যেমন কসমিক রেডিয়েশন থেকে উৎপন্ন মিয়নের আয়ু সাধারণ ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন মিয়নের আয়ুর চেয়ে প্রায় সাতগুণ বেশি, এর পেছনের
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment