পৌরাণিক যুগে সাংবাদিকতা
মহাভারত
মহাকাব্য অপেক্ষা ‘ইতিহাস’ হিসাবে মহাভারতের প্রসিদ্ধি সর্বাধিক। রবীন্দ্রনাথ-এর কথায়: ‘ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিহাস!’ তাঁর মতে আর্যসমাজে যত কিছু জনশ্ৰুতি ছড়িয়ে ছিল, ব্যাসদেব সেগুলিকে একত্রিত করেছিলেন। ‘জনশ্রুতি নহে, আর্যসমাজে প্রচলিত সমস্ত বিশ্বাস, তর্কবিতর্ক ও চারিত্রনীতিকেও তিনি এই সঙ্গে এক করিয়া একটি জাতির সমগ্রতার এক বিরাট মূর্তি এক জায়গায় খাড়া করিলেন। ইহার নাম দিলেন মহাভারত।’ শুধু তাই নয়। ‘মহাভারত অতি প্রাচীন সমাজ ও নীতি বিষয়ক তথ্যের অনন্ত ভাণ্ডার।’ অর্থাৎ মহাভারতে আমরা সুপ্রাচীন সমাজের এবং তৎকালীন সভ্যতার একটা স্পষ্ট বিবরণ বা চিত্র পাচ্ছি। এবং তা থেকে সে-যুগের চলমান জীবনের প্রকৃতি উপকরণ ইত্যাদির পরিচয়ও পাই। সমাজতথ্যের এহেন অনন্ত ভাণ্ডার মন্থন করে সে-যুগের নিজস্ব ধারার সাংবাদিকতার রূপটিকে খুঁজে পাওয়া যায়। জানা যায়: সে-যুগেও সংবাদাদি আদান-প্রদান হতো, সংবাদ সংগ্রাহক ছিলো, সম্পাদক ছিলো, সংবাদগুলি যথাযথভাবে সম্পাদিত হতো, জনমণ্ডলী নানাবিধ সংবাদের প্রতি আগ্রহশীল ছিল; জনমণ্ডলীর কাছে সেই সব সংগৃহীত সম্পাদিত সংবাদাদি পরিশোধিত হতো। এসব কাজের একটা বিশেষ রীতিও ছিল। তবে সব মিলিয়ে, বিশেষ করে আঙ্গিকের দিক থেকে আজকের সাংবাদিকতার সঙ্গে নিঃসন্দেহে অনেক পার্থক্য ছিল। তা বলে সে যুগের সেই সাংবাদিকতাকে উপেক্ষা করার কোন কারণ নেই। সে যুগের সাংবাদিকতায় আমরা সঞ্জয় বিদুর-এর মতো সফল রিপোর্টার, কৃষ্ণদ্বৈপায়নের মতো সুদক্ষ সম্পাদক, উগ্রশ্রবার মতো সংবাদ পরিবেশক এবং বেশ কয়েকজন সম্মানিত ভাষ্যকারের সন্ধানও পাই।
সমস্ত মহাভারত অনুধাবন করলে দেখা যায় যে তার সুবিস্তৃত পটভূমিতে রয়েছে অসংখ্য ঘটনা, কাহিনী, উপকাহিনী, কিংবদন্তী ইত্যাদি। এবং সে সবের সূত্র বিভিন্ন অর্থাৎ বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা নানাভাবে কথিত বা উপস্থাপিত। এই উপস্থাপনার পটভূমিও ভিন্ন। কিন্তু কোথাও সুত্রগুলি উপেক্ষিত নয়। সকল ক্ষেত্রেই তাদের উপস্থিতি স্পষ্ট। কাহিনীবিন্যাসের এই আঙ্গিক বা কৌশল, মহাকাব্য রচনার একটা রীতি হলেও, বৈয়াকরণিক রীতির রক্ষণশীলতার বাইরে সমাজ জীবনের পটভূমিতে বিশ্লেষণ করলে একে সামাজিকতা-কর্মের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। এবং সেখানে কৃষ্ণদ্বৈপায়নকে কেবল কবি হিসাবে না দেখে একজন সফল বার্তা-সম্পাদক বলে চিহ্নিত করা যায়। মহাভারতে তাঁর ভূমিকা সংকলকের বার্তা সম্পাদকের এবং কোথাও কোথাও রিপোর্টার ও ভাষ্যকারেরও। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সাহায্যে বিভিন্ন সূত্র থেকে নানাবিধ ঘটনা, তথ্য, সংবাদ, জনশ্রুতি প্রভৃতি কাহিনী সংগ্রহ সংকলন ও সম্পাদনা করে “মহাভারত” গড়ে তুলেছেন। এবং তার ফলেই বিস্তৃত কালের সমাজচিত্র হিসাবে মহাভারত সম্মানিত হয়েছে।
এ কালের সংবাদপত্র পাঠ করার সময় অমরা সংবাদগুলি যে বিভিন্ন রিপোর্টারের সংগৃহীত তা জানতে পারি তার উল্লেখ থেকে। যেমন ষ্টাফ রিপোর্টার নিজস্ব সংবাদদাতা, বিশেষ প্রতিনিধি কিংবা নিউজ-এজেন্সী পরিবেশিত সংবাদ হলে এজেন্সীর নামোল্লেখ ইত্যাদি। আবার রেডিও-র খবর শোনার সময়ও সংবাদপাঠক-এর (ঘোষক বা বার্তা সম্পাদক কিংবা রিপোর্টার) নাম উল্লেখিত হয়। মহাভারতেও তা হয়েছে। এবং একথা বললে তাই ভুল হয় না যে, মহাভারতের ঐসব ব্যক্তিরা কেউ রিপোর্টার, কেউ ভাষ্যকার প্রভৃতি।
আরও লক্ষণীয়: ‘এই গ্রন্থে বহু লোকের হাত আছে।...বহু রচয়িতা...মহাভারত সমুদ্রে তাঁদের ভালমন্দ অর্ঘ্য প্রক্ষেপ করেছেন। ব্যাসের পরবর্তীকালেও বহু রচয়িতা মূল কাহিনীর সঙ্গে মোটামুটি সংগতি রেখে বহু কাহিনী সংযোজন করেছেন।—এর থেকেও যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়, তা হলো: বহু সাংবাদিক কৃষ্ণদ্বৈপায়নের আগে পরে যা সংগ্রহ করেছেন তা মহাভারতের মধ্যে তুলে ধরেছেন। সেখানে হয়তো ব্যাসের পক্ষে সব সম্পাদনা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সে-কালের সংবাদমূল্যে সবই একই সূত্রে গ্রথিত হয়েছে। বার্তা সম্পাদক কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস থেকে শুরু করে সকল সাংবাদিকের মধ্যে তাদের রচনা-সৌকুমার্যের গুণের জন্য, এবং বিশেষ করে ব্যাসের সাহিত্য-রস সৃষ্টির অপরিসীম ক্ষমতার গুণে, সুসংহত গ্রন্থনায় সমগ্র গ্রন্থটি সাহিত্যরসপুষ্ট হয়েছে—হয়ে উঠেছে মহাকাব্য। এবং কৃষ্ণদ্বৈপায়ন নামে খ্যাত বার্তা সম্পাদক কোন ব্যক্তি বিশেষও হতে পারেন, আবার নামটি সমকার্যে রত ব্যক্তির
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment